দক্ষিণ ত্রিপুরায় ৩২ কোটি টাকার ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন
সাব্রুম (ত্রিপুরা), ২০ জুন (হি.স.) : ত্রিপুরার দক্ষিণ সীমানা বরাবর অবস্থিত ছোট শহর সাব্রুম শুক্রবার হয়ে উঠল রাজ্যের উন্নয়নচক্রের কেন্দ্রবিন্দু। এদিন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে একাধিক উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন করেন, যা শ
উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী


সাব্রুম (ত্রিপুরা), ২০ জুন (হি.স.) : ত্রিপুরার দক্ষিণ সীমানা বরাবর অবস্থিত ছোট শহর সাব্রুম শুক্রবার হয়ে উঠল রাজ্যের উন্নয়নচক্রের কেন্দ্রবিন্দু। এদিন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে একাধিক উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন করেন, যা শুধুমাত্র অবকাঠামোর নির্মাণ নয়, বরং জনজীবনের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করার প্রয়াস।

এদিন বেলা ১২টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী সাব্রুম উচ্চতর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উদ্বোধন করেন ১০০ শয্যার আধুনিক উপজাতি ছাত্রীনিবাসের। দূরবর্তী পাহাড়ি ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা ছাত্রীদের জন্য এই হোস্টেল হবে আশ্রয় ও নতুন ভবিষ্যতের এক উজ্জ্বল ঠিকানা।

এই শুভ মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন সমবায় মন্ত্রী শুকলাল চরণ নোয়াতিয়া, জেলা পরিষদের সভাধিপতি দীপক দত্ত এবং দক্ষিণ জেলার জেলাশাসক মহম্মদ সাজেদ পি।

দুপুর ১টায় মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত হন ঋষি অরবিন্দ অডিটোরিয়ামে। প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের সূচনা করেন তিনি। সেখান থেকে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন দক্ষিণ জেলার ১৯টি প্রকল্প, যার সম্মিলিত ব্যয় ৩২ কোটি-রও বেশি। ৬টি বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ যথাক্রমে বি.কে.আই স্কুল, বিলোনিয়া। নতুন ক্লাসরুম, সাইন্স লাইব্রেরি ও শৌচাগার ৩.১৫ কোটি টাকা ব্যয় করে। দক্ষিণ সোনাইছড়ি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ব্যয় ১.৭০ কোটি। কলসী উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ব্যয় ১.৩২ কোটি। বাইখোড়া ইংরেজি মাধ্যম উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ব্যয় ২.৭৭ কোটি। মনু বনকুল উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সাব্রুম শ্রীনগর উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও গোটা জেলায় ৭টি তহশিল অফিসের উদ্বোধন হয় এদিন।

নতুন তহশিল অফিস কক্ষ হয়েছে মাইছড়া, দক্ষিণ ভারতচন্দ্রনগর, রাধানগর, জোলাইবাড়ি, বাইখোড়া, ভুরাতলী ও মতাই-এ। এতে করে স্থানীয় বাসিন্দারা সহজেই রাজস্ব ও প্রশাসনিক সেবার নাগাল পাবেন।

৩টি উপজাতি ছাত্রাবাস নির্মাণ। এগুলি হল কলসী, সাব্রুম, চাতকছড়িতে। এই হোস্টেলগুলি সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে সহজ করবে এবং ড্রপআউট কমাবে বলে অভিমত।

৩টি আধুনিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উদ্বোধন হয় এদিন। সেগুলি হল মুহুরীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র – ব্যয় ৩.২৯ কোটি। মনু বনকুল স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং মাইছড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্র। স্বাস্থ্য অবকাঠামোতে এই সংযোজনগুলি দক্ষিণ জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবায় নবজোয়ার আনবে।

এদিন আগত অতিথিদের বক্তব্যে দক্ষিণ জেলাকে কেন্দ্র করে উন্নয়নের দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতিচ্ছবি প্রস্ফুটিত হয়। অনুষ্ঠানের সূচনা লগ্নে জেলা শাসক মহম্মদ সাজেদ পি বলেন, “এই প্রকল্পগুলি শুধু নির্মাণ নয়, এটি সাধারণ মানুষের জীবনের প্রয়োজন মেটাতে প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।”

মন্ত্রী শুকলাল নোয়াতিয়া বলেন, “আজ দক্ষিণ জেলার জন্য একটি গর্বের দিন। উন্নয়নকে আমরা শহর বা রাজপথে আটকে রাখিনি, তা পৌঁছে যাচ্ছে প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামে।”

সবশেষে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা বললেন, “ত্রিপুরার উন্নয়নের গতি এখন গ্রাম থেকে শহর অভিমুখে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জনজাতি কল্যাণে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। আজকের দিনটি শুধুমাত্র উদ্বোধনের নয়— এটি এক নতুন যাত্রার শুরু।”

এই আয়োজনে সুশৃঙ্খলভাবে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা, অভিভাবকরা, সরকারি আধিকারিক এবং সাধারণ মানুষ। শেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি দক্ষিণ জেলার সভাধিপতি দীপক দত্ত ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, ত্রিপুরার ভবিষ্যৎ গড়তে হলে এই ধরণের উদ্যোগ ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, এই অনুষ্ঠান শুধু সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ছিল না, বরং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিকে বাস্তব রূপ দেওয়ার এক জ্যান্ত উদাহরণ।

সাব্রুম থেকে শুরু হওয়া এই অগ্রযাত্রা শীঘ্রই ছড়িয়ে পড়বে ত্রিপুরার প্রতিটি প্রান্তে— যেখানে প্রত্যেক নাগরিক নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ পাবে।

হিন্দুস্থান সমাচার / গোবিন্দ দেবনাথ




 

 rajesh pande