

অশোক সেনগুপ্ত
কলকাতা, ৯ নভেম্বর (হি.স.): ভারতে
মুসলমান-খ্রিস্টানদের ব্রাত্য করে হিন্দু রাষ্ট্র হবে না। মানুষ এ কথা বিশ্বাস করে। ভারত জুড়ে প্রত্যাশা বেড়েছে সংঘের প্রতি। এসআইআর-এর প্রচেষ্টায় ধর্মীয় রং লাগানোর চেষ্টার অভিযোগ ঘিরে বিতর্কের মাঝেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের পূর্বাঞ্চলীয় ক্ষেত্রীয় প্রচারপ্রমুখ ডঃ জিষ্ণু বসু এক সমাবেশে এ কথা বলেন।
সংঘের শতবর্ষপূর্তি প্রসঙ্গে শনিবার তিনি বলেন, “জীবনকে ধূপকাঠির মতো শেষ করেছেন শত শত যুবক। সে কারণে সংঘ আজ এই জায়গায় এসেছে”। তাঁর উপলব্ধি, “একসময় সংঘের প্রতি চরম উপেক্ষা ছিল। প্রচুর অত্যাচার হয়েছে। আজ এই যুগসন্ধিক্ষণে অনেক দায়িত্ব এসেছে সংঘের ওপর।”
সংঘের স্বয়ংসেবকরা জাতীয় আন্দোলনে কী ভূমিকা নিয়েছেন বা গান্ধীর পথকে সর্বনাশী ভুল মনে করতেন কিনা তা নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জিষ্ণুবাবুর বক্তব্য,
অহিংস অসহযোগ আন্দোলন, জঙ্গল সত্যাগ্রহ, লাহোর অধিবেশনের পরে পূর্ণ স্বরাজ এবং তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন থেকে ভারত ছাড়ো আন্দোলন — সব ক্ষেত্রেই সংঘের অংশ গ্রহণ ছিল। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে গুরুজী গোলওয়ালকার সহ সংঘের প্রমুখ নেতৃত্বের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভূমিকার কথা উঠে এসেছে।
তিনি জানিয়েছেন, “বিকৃত অর্ধসত্য দিয়ে সংঘের আদ্যশ্রাদ্ধ সম্পাদিত হয়েছে। ১৯৪২ সালে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে সংঘ বিরোধিতা তো করেইনি, বরং দেশের যেখানে যেখানে সংঘের যতটুকু শক্তি ছিল, তা দিয়ে ১৯৪২ সালের গান্ধীজির ডাকা ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে স্বয়ংসেবকরা ঝাঁপিয়েছিলেন।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, হিন্দু মহাসভার মতো রাজনৈতিক দলগুলি ১৯৪২-এ কংগ্রেসের ডাকা 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল, সংঘ বিরোধিতা করেনি।
সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ড. কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার সক্রিয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। তাঁর বিপ্লবী জীবনের বেশ কিছুটা অংশ মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে কেটেছে। কলকাতায় ডাক্তারি পড়ার সময় পুলিনবিহারী দাসের অনুশীলন সমিতি যেমন আকর্ষণ করেছিল তেমন লোকমান্য তিলক ও মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বও তাঁকে টেনেছিল। ১৯১৭ সালে তাঁর ডাক্তারির ইন্টার্নশিপ সম্পূর্ণ হয়েছিল। গান্ধীজির আহ্বানে সাড়া দিয়েই ড. হেডগেওয়ার ১৯২১ সালে কারাবরণ করেন।
১৯২২ সালে মহাত্মা গান্ধীর গ্রেফতারের প্রতিবাদে নাগপুরে বিশাল জনসভা হয়েছিল। সেখানে ড. হেডগেওয়ার তাঁকে পূজ্যপুরুষ বলে সম্বোধন করেন। সেদিনের খদ্দরের পোশাক আর গান্ধীটুপি পরা যুবকটিই ১৯২৫ সালে আরএসএস প্রতিষ্ঠা করলেন।
১৯৩০ সালে গান্ধীজি লবণ সত্যাগ্রহ শুরু করেন। মধ্য ভারতে সমুদ্র নেই, তাই সেখানে জঙ্গল সত্যাগ্রহ চলেছিল। ড. হেডগেওয়ার কারাবরণ করেছিলেন। গান্ধীজির ডাকে সেদিন ড. হেডগেওয়ার ১৯৩০ সালের ২১ জুলাই থেকে ১৯৩১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কারান্তরালে ছিলেন। ১৯৩৪ সালে মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধাতে সংঘের প্রশিক্ষণ শিবিরে গান্ধী গিয়েছিলেন। এটি কেবল আরএসএস এর দাবি নয়, তিনি নিজেই পরবর্তীকালে তাঁর বক্তৃতাতে উল্লেখ করেছেন। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা, দেশভাগের পরেও গান্ধীজির সঙ্গে সহজ সরল সম্পর্ক ছিল আরএসএস–এর।
আরএসএস-এর মতো সংগঠনকে ১৯৪৮ সালে নিষিদ্ধ করা, ৮০ হাজার স্বয়ংসেবককে কারাগারে নিক্ষেপ করা বা প্রতিশোধের নামে মহারাষ্ট্রে একের পর এক নিরাপরাধ হিন্দু ব্রাহ্মণদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন জিষ্ণুবাবু। এই প্রসঙ্গে তিনি শনিবারে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বলেন, “একসময় আমার বাড়ির কাছে তালদিতে গুলি চলেছিল। ভয় দেখিয়ে, অত্যাচার করে আন্দোলন দমনের চেষ্টা হয়েছে। আজ আমরা অনেক ভালো আছি।”
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / অশোক সেনগুপ্ত