
শিলচর (অসম), ১৭ ডিসেম্বর (হি.স.) : কাছাড় জেলা সদর শিলচর শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিকাশি ও বর্ষাকালীন জল নিষ্কাশনযোগ্য রাঙ্গিরখালের স্বাভাবিক জলপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে এমন অননুমোদিত ও বেআইনি নির্মাণ অবিলম্বে অপসারণের জন্য সময়সীমা বেঁধে কড়া নির্দেশ জারি করেছে জেলা প্রশাসন। জননিরাপত্তা, নগর পরিকাঠামো সুরক্ষা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
শিলচরে অবস্থিত কাছাড় জলসম্পদ বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকারের দাখিলকৃত একটি বিস্তৃত ক্ষেত্রসমীক্ষা ও বিস্তারিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সরকারি বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে শিলচরে অবস্থিত বরাক উপত্যকার তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয়ের এক প্রেসবাৰ্তায় এ খবর দিয়ে জানানো হয়েছে, মহিষাবিল পয়েন্ট থেকে সানলিট হাসপাতাল পর্যন্ত রাঙ্গিরখালের বিভিন্ন অংশে নির্মিত একাধিক অননুমোদিত কংক্রিট ও বাঁশের সেতু, অস্থায়ী পারাপার ব্যবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট কাঠামোর অস্তিত্ব চিহ্নিত করা হয়েছে, যা খালের স্বাভাবিক জলপ্রবাহে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করছে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এ সব অননুমোদিত নির্মাণ খালের মধ্যে কৃত্রিম প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে জলপ্রবাহকে সংকুচিত করেছে, যার ফলে নিয়মিত পলি অপসারণ ও নিকাশি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে পার্শ্ববর্তী আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকাগুলিতে, যেখানে বর্ষাকালে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা ও আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানবজীবন, সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি এবং গুরুত্বপূর্ণ নগর পরিকাঠামোর ওপর সম্ভাব্য বিপদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে জেলা প্রশাসন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে অগ্রসর হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৫-এর প্রাসঙ্গিক ধারাসমূহ প্রয়োগ করে জেলাশাসক তথা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের চেয়ারপার্সন মৃদুল যাদব (আইএএস) সংশ্লিষ্ট সকল নাগরিক, দোকানদার, প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অংশীদারদের রাঙ্গিরখালের ওপর বা সংলগ্ন এলাকায় নির্মিত সকল অননুমোদিত অস্থায়ী বা স্থায়ী স্থাপনা আদেশ জারির তারিখ থেকে দশ দিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ প্রদান করেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নির্দেশ অমান্য করা হলে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে নিজ উদ্যোগে উচ্ছেদ ও পরিষ্কার কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং সংশ্লিষ্ট সমস্ত ব্যয় ও ঝুঁকির দায়ভার সংশ্লিষ্ট দোষীদের বহন করতে হবে।
অননুমোদিত দখল ও অবৈধ নির্মাণ অপসারণের পর জলসম্পদ বিভাগ শিলচর পৌর নিগম সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে রাঙ্গিরখালের সংশ্লিষ্ট অংশে ব্যাপক পলি অপসারণ ও পুনরুদ্ধারমূলক কাজ শুরু করবে। এর মাধ্যমে খালের স্বাভাবিক জলপ্রবাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারী বৃষ্টিপাতের সময় নিরবচ্ছিন্ন নিকাশি নিশ্চিতকরণ এবং শহরের নিম্নভূমি এলাকাগুলিতে বন্যা ও জলাবদ্ধতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
আদেশে আরও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন ছাড়া রাঙ্গিরখাল বা অন্য কোনও প্রাকৃতিক নিকাশি ব্যবস্থার ওপর ভবিষ্যতে কোনও নতুন অস্থায়ী বা স্থায়ী নির্মাণ অনুমোদিত হবে না। প্রাকৃতিক জলপথ সংরক্ষণ, ভবিষ্যৎ অনধিকার দখল প্রতিরোধ এবং জলবায়ুজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় শিলচর শহরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই কঠোর বিধান আরোপ করা হয়েছে।
জননিরাপত্তা, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের বৃহত্তর স্বার্থে জারি করা এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে এবং এর ফলে শিলচরের নিকাশি ব্যবস্থাপনা ও বর্ষা মোকাবিলার প্রস্তুতি আরও জোরদার হবে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস