
গুয়াহাটি, ১৮ ডিসেম্বর (হি.স.) : শ্ৰীভূমি জেলার অন্তর্গত তফশিলি জাতি সংরক্ষিত রাতাবাড়ির (এখন রামকৃষ্ণনগর) বিধায়ক বিজয় মালাকরের নাগরিকত্বকে চ্যালঞ্জ করে গৌহাটি হাইকোর্ট রিট পিটিশন দাখিল হয়েছে। তিনি ‘ভারতীয় নাগরিক নন’ দাবি করে তাঁর বিধায়ক পদ খারিজেরও আবেদন জানানো হয়েছে হাইকোৰ্টে।
জনৈক ব্রজগোপাল সিনহা এবং বিজয়কুমার কানুর দায়েরকৃত পিটিশনে বলা হয়েছে, বিজয় মালাকার এবং তাঁর বাবা ও মা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কাট-অফ তারিখের পর অসমে এসেছেন। ফলে সংবিধান এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫১ অনুযায়ী তিনি কোনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির পদে থাকার যোগ্য নন বলে দাবি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ১ নম্বর তফশিলি জাতি সংরক্ষিত রাতাবাড়ি আসনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিজয় মালাকার।
দুই আবেদনকারীর বক্তব্য, চলতি বছর, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে ‘বিশ্বস্ত সূত্রে’ প্রাপ্ত তথ্য পাওয়ার পরই বিজয় মালাকারের নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তাঁদের দাবি, করিমগঞ্জ (অধুনা শ্রীভূমি) শহর ও আশপাশ এলাকার ১৯৬৬ এবং ১৯৭১ সাল সহ একাধিক বছরের ভোটার তালিকা তাঁরা খতিয়ে দেখেছেন।
রিট পিটিশনে তাঁরা বলেছেন, ‘মালাকারের নাম প্রথমবারের মতো ২০০৫ সালের সম্পূরক ভোটার তালিকায় করিমগঞ্জ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন পার্ট নম্বর ৯৬-এর ক্রমিক নম্বর ৩১৮-এ কোনও ভিত্তি ছাড়াই অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’ তাঁদের আরও দাবি, ২০০৫ সালের আগে, এমন-কি গুরুত্বপূর্ণ ১৯৬৬ এবং ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকায়ও তাঁর বাবার নাম পাওয়া যায়নি। যদিও ২০২৫ সালের ভোটার তালিকায় বাবার নাম দেখা যাচ্ছে। আবেদনকারীদের অভিযোগ, বিজয় মালাকারের মায়ের নাম কোনও ভোটার তালিকায়ই নেই।
আবেদনে জেলা প্রশাসনের পর্যবেক্ষণ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এতে লেখা হয়েছে, শ্রীভূমির জেলা নির্বাচন আধিকারিক চলতি ২০২৫ সালের ২৯ নভেম্বর যে যাচাই প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তা ‘ইনকনক্লুসিভ’ (সিদ্ধান্তহীন)। পিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘১৯৬৬ এবং ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে কোনও যোগসূত্র পাওয়া যায়নি’, যা অসমের বিদেশি শনাক্তকরণ ব্যবস্থার অধীনে নাগরিকত্ব প্রমাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
আবেদনকারীরা আদালতকে জানিয়েছেন, ‘মালাকারের নাগরিকত্ব বিষয়ে যথাযথ তদন্তের দাবিতে তাঁরা আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কোনও সঠিক তদন্ত করা হয়নি...।’
সংবিধানের ২২৬ অনুচ্ছেদের অধীনে দায়েরকৃত এই রিট পিটিশনে কুও ওয়ারান্টো রিট সহ অন্যান্য উপযুক্ত নির্দেশনার আবেদন জানানো হয়েছে। এতে দাবি করা হয়েছে, বিধায়ক হিসেবে বিজয় মালাকারের পদে বহাল থাকা সংবিধানের ১৯১(১)(ঘ) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন, যেখানে বিধায়কদের অযোগ্যতার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
এই মামলায় সংশ্লিষ্ট বিধায়কের পাশাপাশি প্রতিপক্ষ হিসেবে রাখা হয়েছে অসম রাজ্য সরকার, অসম বিধানসভার স্পিকার, জেলা প্রশাসন, সীমান্ত পুলিশ কর্তৃপক্ষ, অসমের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক এবং ভারতের নির্বাচন কমিশনকে।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস