
দুর্গাপুর, ১৯ ডিসেম্বর (হি. স.) : গ্রীন স্টিল গবেষণা থেকে শুরু করে বিক্রম চিপ, ফাইভ-জি ল্যাব ও আনম্যানড এয়ার ভেহিকল (ইউএভি)প্রযুক্তি—বহুমুখী গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে দুর্গাপুরের জাতীয় কারিগরি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এনআইটি দুর্গাপুর)। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ও ‘বিকশিত ভারত’ গঠনের লক্ষ্যে দিশা দেখাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান। সারা দেশের ৩২টি এনআইটির মধ্যে বর্তমানে সপ্তম স্থানে রয়েছে এনআইটি দুর্গাপুর। পাশাপাশি, ২০২৫ সালের এনআইআরএফ র্যাঙ্কিংয়ে তারা ৪৯তম স্থান অর্জন করেছে।
শনিবার সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই তথ্য জানান এনআইটি দুর্গাপুরের ডিরেক্টর অধ্যাপক অরবিন্দ চৌবে।
তিনি জানান, ২০৭০ সালের মধ্যে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী কার্বন নিরপেক্ষ দেশ গড়ার যে লক্ষ্য ভারত সরকার নিয়েছে, সেই লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে এনআইটি দুর্গাপুর। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি ক্যাম্পাসে রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করেছে। এর ফলে তাপবিদ্যুৎ নির্ভরতা যেমন কমবে, তেমনই আগামী ২৫ বছরে বছরে গড়ে প্রায় ১.১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
এছাড়াও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করে ইস্পাত উৎপাদনের গবেষণায় সাফল্য পেয়েছে এনআইটি দুর্গাপুর। ইতিমধ্যেই গ্রীন স্টিল উৎপাদনের লক্ষ্যে সেল-এর দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। একই সঙ্গে পাটচাষকে উৎসাহিত করতে পাটের তন্তু ও রাসায়নিক সংমিশ্রণ ব্যবহার করে রাস্তা নির্মাণের গবেষণাতেও কাজ চলছে।
দেশীয় প্রযুক্তিতে আনম্যানড এয়ার ভেহিকল (ড্রোন) তৈরির গবেষণায়ও অংশ নিচ্ছে এনআইটি দুর্গাপুর।
তবে গত কয়েক বছরে এনআইআরএফ র্যাঙ্কিংয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়ার কারণও ব্যাখ্যা করেন ডিরেক্টর অরবিন্দ চৌবে। তিনি জানান, বর্তমানে প্রায় ৪,৮০০ জন পড়ুয়ার বিপরীতে অনুমোদিত ২৮৫টি ফ্যাকাল্টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ২৩০ জন। আদর্শভাবে ১৫ জন পড়ুয়ার জন্য ১ জন শিক্ষক থাকার কথা হলেও এখানে সেই অনুপাত দাঁড়িয়েছে ২২:১, যার প্রভাব র্যাঙ্কিংয়ে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, “আগে গবেষণার পেটেন্ট কম ছিল। এখনও পেটেন্ট বাড়ানোর উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। ১০০টি পেটেন্ট হলে তার খরচ প্রতিষ্ঠান বহন করবে। গত আট মাস প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী চেয়ারম্যান ছিলেন না। এক মাস আগে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ হয়েছে। ফ্যাকাল্টি রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং আগামী জানুয়ারি মাসে নিয়োগ সম্পন্ন হবে।”
অধ্যাপক চৌবে দাবি করেন, “গত বছর সারা দেশের ৩২টি এনআইটির মধ্যে আমরা নবম স্থানে ছিলাম। এ বছর সপ্তম স্থানে উঠে এসেছি। এনআইআরএফ-এ ৪৪ থেকে ৪৯-এর মধ্যে কোনও কারিগরি প্রতিষ্ঠান নেই, মাত্র এক পয়েন্টের ব্যবধানে আমরা পিছিয়ে আছি। শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও এনআইটি শিলচর আমাদের পিছনে রয়েছে।”
চলতি শিক্ষাবর্ষে এনআইটি দুর্গাপুরে ১,৪৬১ জন শিক্ষার্থী স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরে ৩০টি পেটেন্ট জমা পড়েছে। পাশাপাশি প্লেসমেন্ট হার ৭২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮২.৭ শতাংশে পৌঁছেছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আগামী বছরে এনআইআরএফ র্যাঙ্কিংয়ে আমরা ৩৫ থেকে ৪০-এর মধ্যে জায়গা করে নিতে পারব।”
উল্লেখ্য, শনিবার এনআইটি দুর্গাপুরে সমাবর্তন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / জয়দেব লাহা