পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ ডিসেম্বর(হি.স.): পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী ব্লকের বাঁকিবাঁধ পঞ্চায়েতের কমলা গ্রামে বাসিন্দাদের মাথার উপর নেমে এসেছে উচ্ছেদের খড়্গ। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে সম্প্রতি ৩০০ পরিবারের কাছে নোটিস পাঠানো হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে ১৫ দিনের মধ্যে তাদের ভিটেমাটি খালি করে দিতে হবে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ১৯৪০ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই এলাকায় ইংরেজ সরকার একটি এয়ারপোর্ট তৈরি করে। গ্রামবাসীদের সাময়িকভাবে সরে যেতে বলা হলেও যুদ্ধ শেষে তারা আবার নিজেদের জায়গায় ফিরে আসেন। স্বাধীনতার পর এই এলাকায় টাকা ছাপানোর টাঁকশাল, কোবরা বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কিছু কারখানা গড়ে ওঠে। পাঁচ পুরুষ ধরে এখানে বসবাস করা মানুষেরা এই গ্রামকেই জীবিকা ও জীবনধারণের কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
গ্রামের মানুষের দাবি:
গ্রামের বাসিন্দা দীপঙ্কর দত্ত বলেন, “আমরা পাঁচ পুরুষ ধরে এখানে বাস করছি। হঠাৎ উচ্ছেদের নোটিস এসে আমাদের জীবন বিপন্ন করেছে। ভিটেমাটি হারালে আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে?” গ্রামের গৃহবধূ রূপা দোলই জানান, “চিঠি হাতে পেয়ে ইংরেজি পড়ে বুঝতে পেরে আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়ে গেছে। আমাদের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, সবকিছু রয়েছে। আমরা কোন অবৈধভাবে বসবাস করছি না। এইভাবে আমাদের তাড়ানো মানে আমাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া।”
অনেকেই জানান, তারা প্রতিনিয়ত পঞ্চায়েতে ট্যাক্স দিয়েছেন এবং তাদের কাছে সমস্ত নথিপত্র রয়েছে। রাস্তার পাশে দোকান করে জীবনধারণ করা মানুষেরাও উদ্বিগ্ন। তারা বলেন, “জমি অধিগ্রহণ হলে আমাদের জীবিকা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।”
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া:
মেদিনীপুর সদরের মহকুমা শাসক মধুমিতা মুখার্জি জানান, বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এসেছে। তবে সরকারিভাবে এখনো কোনো নোটিস পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, “গ্রামবাসীদের কাগজপত্র খতিয়ে দেখতে হবে। যদি জমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের হয় এবং তাদের ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে পুনর্বাসনের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করবে।”
গ্রামবাসীদের আবেদন:
গ্রামের মানুষেরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টি বিবেচনার আবেদন জানিয়েছেন। তারা চান সরকার তাদের সামনে কোনো প্রতিনিধি পাঠিয়ে কথা বলুক এবং সমাধানের পথ বের করুক।
কমলা গ্রামের বাসিন্দারা এখন চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ভিটেমাটি হারানোর শঙ্কায় এলাকার মানুষজন খাওয়া-দাওয়া ভুলে ভয়ে দিন গুনছেন। রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই তরজা শুরু হয়েছে।
হিন্দুস্থান সমাচার / এ. গঙ্গোপাধ্যায়