পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা আদালতের মুহুরি অমিত আচার্য হত্যা মামলায় গ্রেফতার আরও দুই
আগরতলা, ২৪ এপ্রিল (হি.স.) : পশিম ত্রিপুরা জেলা আদালতের মুহুরি অমিত আচার্য হত্যা মামলায় আরও দুজনকে গ
পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা আদালতের মুহুরি অমিত আচার্য হত্যা মামলায় গ্রেফতার আরও দুই


আগরতলা, ২৪ এপ্রিল (হি.স.) : পশিম ত্রিপুরা জেলা আদালতের মুহুরি অমিত আচার্য হত্যা মামলায় আরও দুজনকে গ্ৰেপ্তার করল পশ্চিম আগরতলা থানার পুলিশ। আইনজীবী দিগ্বিজয় মোদক ও শিবদূত বড়ুয়া (ক্লার্ক)–কে বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়। এদিন সকালে উজান অভয়নগর ও ইন্দ্রনগর মুসলিম পাড়া থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এপর্যন্ত এই মামলায় মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে গত ৩ এপ্রিল আইনজীবী রাজেশ সরকার ও মুহুরি রাজীব দেবকে গ্ৰেপ্তার করে পশ্চিম থানার পুলিশ।

গত বছর ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আগরতলা পশ্চিম জেলা ও দায়রা জজের আদালত চত্বরে অমিত আচার্য নামে এক মুহুরিকে বেশ কয়েকজন আইনজীবী এবং ক্লার্ক মিলে মারধর করেছিলেন। ওই ঘটনায় গুরুতর আহত অমিত আচার্যের গত ২৩ সেপ্টেম্বর (২০২৩) মৃত্যু হয় কলকাতায়। ঘটনায় মৃত অমিত আচার্যের পরিবারের অভিযোগমূলে পুলিশ একটি খুনের মামলা রুজু করে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। পশ্চিম থানায় রুজুকৃত মামলা নম্বর ১৭২/২০২৩। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় আইনজীবী রাজেশ সরকার, গোপাল সিং, অনির্বাণ তলাপাত্র এবং আইনজীবিদের ক্লার্ক শিবদূত বড়ুয়া, সুদীপ দেব ও রাজীব দেবের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়।

এই মামলায় পুলিশ গত ১২ নভেম্বর (২০২৩) গোপাল সিং নামের এক আইনজীবীকে বড়দোয়ালি থেকে গ্রেপ্তার করে। এর পর অনির্বাণ তলাপাত্র নামে আরেক আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ এই ঘটনায় বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ জারি রেখেছিল। পুলিশের একটি দল চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তল্লাশি অভিযানে কলকাতা পর্যন্ত পাড়ি দিয়েছে বলেও খবর। এবার পুলিশের হাতে আরও দুই অভিযুক্ত ধরা পড়ছে বুধবার। তারা ঘটনার পর থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছিল।

পশ্চিম থানার ওসি পরিতোষ দাস জানান, মামলার তদন্তকারী অফিসার রঞ্জিত দাস বুধবার সকালে তাদের গ্রেপ্তার করে, আজই তাদের তিন দিনের পুলিশ রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। পশ্চিম থানার ওসি আরও জানান, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, যারা এই খুনের ঘটনায় যুক্ত তাদের প্রত্যেককেই শাস্তি পেতে হবে। পুলিশ কাউকেই ছেড়ে কথা বলবে না। আইনজীবী গোপাল সিং দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিল। অবশেষে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত গোপাল সিংকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম আগরতলা থানার পুলিশ। এরপর আইনজীবী অনির্বাণ তলাপাত্র, পরে রাজেশ সরকার ও মুহুরি রাজীব দেব। একে একে সকলেই ধরা পড়বে।

এদিকে বুধবার ধৃতদের আদালতে তুললে তাদেরকে তিন দিনের পুলিশ রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

মৃত অমিত আচার্যের মা সংবাদ মাধ্যমের সামনে বলেন, সন্তান হারানোর ব্যথা যে হাঁরিয়েছে সে–ই বুঝে। যারা তার কোল খালি করেছে তাদের জেল ফাঁসি চান তিনি। তাদের মায়েরও বুক খালি হবে বলে দাবি করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ৫ সেপ্টেম্বর (২০২৩) মুহুরি অমিত আচার্য জেলা আদালতের ৪ নম্বর ফ্লোরের বাইরে স্টিল চেয়ারে বসে ছিলেন। ঠিক তখন আইনজীবী রাজেশ সরকার অমিতের সাথে জিআরপিএস–এর একটি মামলা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। তখন আইনজীবী গোপাল সিং, রাজেশ সরকার, অনির্বাণ তলাপাত্র , মুহুরি শিবদূত বড়ুয়ারা মহুরি অমিত আচার্যকে কিল ঘুসি-লাথি মারতে শুরু করে। জেলা আদালতের চতুর্থ তলার বিল্ডিঙের সিসি টিভি ফুটেজে সম্পূর্ণ ঘটনা রেকর্ডিং হয়ছে বলে দাবি অমিত আচার্যের স্ত্রী সঞ্চিতা সাহা আচার্যের।

তাছাড়া তাঁর আরও অভিযোগ, জেলা আদালতের চতুর্থ ফ্লোরে অমিতকে মারধরের পর লিফটের দরজা বন্ধ করে আইনজীবী রাজেশ সরকার, গোপাল সিং, বিভাস দেববর্মা, পুনরায় মারধর করে অমিতকে। সঞ্চিতা দেবীর অভিযোগ, অমিতকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুসি লাথির পর ত্রিপুরা বার অ্যাসোসিয়েশনে নেওয়া হয় সেখানেও তাকে মারধর করা হয়। বার অ্যাসোসিয়েশন থেকে পুলিশ কোর্টের পুলিশরা খবর পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। পুলিশ কোর্ট থেকে গুরতর অবস্থায় আইজিএম হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় আহত মহুরি অমিত আচার্যকে।

আইজিএম হাসপাতালে তার অবস্থা বেগতিক দেখে জিবি হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসকরা। অমিতের কিডনি ফুসফুসে গুরুতর আঘাত পাওয়ায় তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বহিঃরাজ্যে রেফার করেন জিবিপি হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা। সঞ্চিতা দেবী ৬/৯/২৩ ইং তারিখে এফআইআরে আরও উল্লেখ করেন, আইনজীবী কিশলয় রায়, অনির্বাণ তলাপাত্র, রাজেশ সরকার, দেবদাস বক্সি, গোপাল সিং, ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পিত ভাবে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে।

অবশেষে কলকাতার মুকুন্দপুরের আরএন টেগোর হাসপাতালে তীব্র যন্ত্রণায় নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়ে দুনিয়া থেকে চির বিদায় নেন মুহুরি অমিত আচার্য। এই মামলায় এ পর্যন্ত চার অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

হিন্দুস্থান সমাচার / গোবিন্দ




 

 rajesh pande