।। বিশেষ প্রতিনিধি ।।
ঢাকা, ৪ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : ‘ভারতীয় উসকানিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতা তৈরি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে’ বলে মনে করেছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। তারা ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের পাহাড়ে চোখ দিলে তোমার মুরগির গলা (চিকেনস্ নেক) চেপে ধরবো।’
আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেইন্টি’ বা ‘সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শিক্ষার্থীসমাজ’-এর ব্যানারে এক প্রতিবাদী সমাবেশে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
‘স্টুডেন্টস ফর সভারেইন্টি’ প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ৰাক্তনী মুহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুম্মল্যান্ড বানাতে ভারতীয় মদতে উপজাতিদের ‘আদিবাসী’ বলে জোর প্রচারণা চলছে। উপজাতিদের উসকানি দেওয়া হচ্ছে 'আদিবাসী' স্বীকৃতি আদায়ের জন্য। অথচ পাহাড়ের উপজাতিরা কেউ আদিবাসী নয়, তারা অভিবাসী। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রয়োজনে ভারত, মায়ানমার ও তিব্বত থেকে বাংলাদেশে অভিবাসন করেছে।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ দখলদার (সেটেলার) যারা দস্যুবৃত্তি করতে করতে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে জোর করে বাঙালিদেরকে ভূমিচ্যুত করে দখলদারিত্ব চালিয়েছে। আবার কেউ বা আশপাশের অঞ্চল থেকে নিপীড়নের শিকার হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করেছে।
উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের এই উভয় শ্রেণি-ই বাংলাদেশের আদিম কিংবা প্রকৃত অধিবাসী নয়। তাদেরকে 'আদিবাসী' বলে প্রচার করা মানে একটি ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক সত্যকে অস্বীকার করা, যে প্রচারণার পেছনে ভারত, মিশনারি ও বিভিন্ন দেশি-বিদেশি এনজিওর মদত রয়েছে।
কারণ আদিবাসী স্বীকৃতি আদায় করতে পারলে আইএলও কনভেনশন কিংবা জাতিসংঘের ২০০৭ সালের কনভেনশন অনুযায়ী 'রাইট টু সেলফ ডিটারমিনেশন' বা স্বায়ত্তশাসন, আলাদা জাতীয়তা, আলাদা ভূমির মালিকানা ও সর্বশেষ স্বাধীনতার দাবিকে লেজিটিমেসি বা আইনগত বৈধতা দেওয়ার পথ খুলে যাবে। অথচ বাংলাদেশের উপজাতিরা কেউ-ই আদিবাসী নয়।
কাজেই উপজাতিদের ‘আদিবাসী’ দাবি করা কিংবা সম্বোধন করা মানে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করা, যা অবশ্যই রাষ্ট্রদ্রোহিতা। বাংলাদেশের কেউ যদি এমন প্রচারণায় অংশ নেয়, তবে সে অবশ্যই রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধে অপরাধী হবে, তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।
‘স্টুডেন্টস ফর সভারেইন্টি’ প্ল্যাটফর্মের যুগ্ম-আহ্বায়ক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ মুরসালিন বলেন, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনও রাজার শাসন চলতে পারে না। পাহাড়ে জমি ক্রয় করতে গেলে চাকমা, বোমাং ও মং রাজাকে খাজনা দিতে হয়। এক বাংলাদেশে দুই নিয়ম কেন? মুহম্মদ মুরসালিন পাহাড়ে কথিত রাজাদের খাজনা দেওয়া বন্ধের দাবি তুলেছেন।
‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ প্ল্যাটফর্মের জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-প্রতিনিধি মশিউর রহমান বলেন, পাহাড়ে খ্রিষ্টান মিশনারীরা একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। তারা উপজাতি গোষ্ঠীগুলোকে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করে পাহাড়ে খ্রিষ্টান ধর্মের আধিক্য দেখাতে চায়। এর সাথে বেশ কিছু এনজিও রয়েছে যারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদেরকে 'আদিবাসী' প্রচারণার সবক দিয়ে থাকে ও সম্বোধন করে থাকে। উপজাতিদেরকে আদিবাসী স্বীকৃতির জন্য উসকানিও দেয়। তাদের উদ্দেশ্য, পাহাড়কে খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দক্ষিণ সুদান বা পূর্ব তিমুরের মতো আলাদা রাষ্ট্র তৈরি করা। রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের দায়ে পাহাড়ে সর্ব প্রকার মিশনারী ও এনজিও কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেন মশিউর রহমান।
মশিউর আরও বলেন, সিএইচটি কমিশন নামের একটি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যক্রমে লিপ্ত। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের অধিকার রক্ষার নামে তারা বাংলাদেশের পাহাড়কে দক্ষিণ সুদান বা পূর্ব তিমুর বানাতে চায়। এই সংগঠনের অন্যতম সদস্য ড. জাফর ইকবাল এবং তার স্ত্রী ইয়াসমিন হক। মশিউর রহমান রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যক্রমের জন্য জাফর ইকবাল সহ সিএইচটি কমিশনের সকল সদস্যের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহম্মদ শাহিন বলেন, পাহাড়ে উপজাতি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করেছে। রাজনগর গণহত্যা, পাকুয়াখালি ট্রাজেডি, মাটিরাঙ্গা গণহত্যা, ভূষণছড়া গণহত্যার ইতিহাস এখনও জনগণ ভুলে যায়নি। এখনও পাহাড় সেই সকল শহিদদের গণকবরের ওজন বহন করে। আমরা ওই সব নৃশংস গণহত্যার বিচার চাই, খুনিদের ফাঁসি চাই। এখনও ভারতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। এগুলো বন্ধ না হলে ভারতকে অবশ্যই তার ফল ভোগ করতে হবে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-প্রতিনিধি জসিম উদ্দিন বলেন, আমার বাংলাদেশকে জুম্মল্যান্ড-কুকি চিন হতে দেবো না। ভারত আমাদের পাহাড়ে চোখ দিলে, তার মুরগির গলা (চিকেনস্ নেক) চেপে ধরবো। পাহাড়কে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র হলে চিকেনস্ নেক দিয়ে তারাও দু টুকরো হয়ে যাবে।
জসিম উদ্দিন পাহাড়ে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সেনাবাহিনীকে শক্ত ভূমিকা নেওয়ার দাবি তুলেছেন। তিনি পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প আরও বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান।
প্রতিবাদী সমাবেশজুড়ে নানান রকম প্ল্যাকার্ড হাতে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়েছেন। কিছু প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘কেউ নয় আদিবাসী, সবাই আমরা বাংলাদেশী’, ‘সমতল ও পাহাড় - এক আইনে চলতে হবে’, ‘পাহাড়ের বাঙ্গালীদের সাথে সকল বৈষম্য বন্ধ করো’, ‘ঢাবিতে উপজাতি কোটা বন্ধ করো’, ‘নাথান বোমরা ঢুকছে’ ইত্যাদি।
প্রতিবাদী সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গিরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্ৰহণ করেছেন।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস