
নয়াদিল্লি, ১০ নভেম্বর (হি.স.): প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ১০ নভেম্বর, ২০২৫-এ নতুন দিল্লির নওরোজি নগরে নব উদ্বোধিত ডিপিএসইউ ভবন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ডিফেন্স পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিং (ডিপিএসইউ) গুলির সার্বিক পর্যালোচনা বৈঠকে পৌরোহিত্য করলেন। বৈঠকে মিউনিশনস ইন্ডিয়া লিমিটেড (এমআইএল), আরমার্ড ভেহিকেলস নিগম লিমিটেড (এভিএমএল), ইন্ডিয়া অপটেল লিমিটেড (আইএএল) এবং হিন্দুস্তান শিপইয়ার্ড লিমিটেড (এইচএসএল) এই চারটি ডিপিএসইউ-কে মিনি রত্ন মর্যাদা পাওয়ার জন্য সংবর্ধিত করা হলো।
অনুষ্ঠানে ভাষণে রাজনাথ সিং ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন পরিমণ্ডলকে শক্তিশালী করা এবং আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিরবিচ্ছিন্ন অবদানের জন্য ডিপিএসইউগুলির প্রশংসা করেন। নিরবিচ্ছিন্ন নিষ্ঠা এবং উৎকর্ষের জন্য ডিপিএসইউগুলিকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের ১৬টি ডিপিএসইউ-এর সবকটি দেশের আত্মনির্ভরতার মজবুত স্তম্ভ। অপারেশন সিঁদুরের মতো অভিযানে তাদের উল্লেখযোগ্য কাজ আমাদের দেশজ প্রযুক্তি, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সক্ষমতার প্রমাণ।”
মিনি রত্ন মর্যাদা পাওয়ার জন্য এইচএসএল, এভিএনএল, আইওএল এবং এমআইএল-কে অভিনন্দন জানিয়ে রাজনাথ সিং একে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান দক্ষতা, স্বশাসন এবং অবদানের প্রতিফলন হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ২০২১-এ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডকে ৭টি নতুন ডিপিএসইউ-তে রূপান্তর আরও বেশি করে কাজের স্বাধীনতা, উদ্ভাবন এবং প্রতিযোগিতামুখীনতা করে তুলেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আরও বলেন, এই চারটিকে মিনি রত্ন মর্যাদা দেওয়ায় তারা সক্ষমতা বর্ধন করতে পারবে, আধুনিকীকরণ করতে পারবে এবং নতুন নতুন সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের রাস্তা খুঁজে পাবে।
এই ক্ষেত্রের উল্লেখযোগ্য কাজের উল্লেখ করে রাজনাথ সিং বলেন, ২০২৪-২৫-এ ভারত ১.৫১ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের প্রতিরক্ষা উৎপাদন করেছে। এতে, ডিপিএসইউগুলির অবদান ৭১.৬ শতাংশ। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি পৌঁছেছে ৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকায়। যার থেকে বোঝা যায় ভারতের দেশজ ব্যবস্থার উপর বিশ্বের আস্থা আছে। তিনি বলেন, “এর থেকে স্পষ্ট করে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ ছাপমারা প্রতিরক্ষা পণ্য বিশ্বস্তরে শ্রদ্ধা অর্জন করছে।”
এই গতি বজায় রাখার উপর জোর দিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সবকটি ডিপিএসইউ-কে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির দ্রুত দেশজকরণের উপর জোর দিতে বলেন। সময় মতো পণ্য দেওয়া এবং রফতানি বাড়াতে কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণে জোর দেন। তিনি ডিপিএসইউগুলিকে নির্দেশ দেন পরবর্তী পর্যালোচনা বৈঠকে দেশজকরণ এবং গবেষণার পথদিশা স্পষ্ট করে জানাতে। তিনি বলেন, “সরকারের তরফে আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি, যেখানে হস্তক্ষেপ বা সাহায্যের প্রয়োজন হবে তা দ্রুত দেওয়া হবে।”
অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবে ডিপিএসইউগুলির মধ্যে তিনটি বড় সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হলো, যা সহযোগিতা এবং আত্মনির্ভরতার আদর্শের প্রকাশ। এইচএএল এবং ভারত ডায়নামিক লিমিটেড (বিডিএল) মৌ স্বাক্ষর করলো যন্ত্র ইন্ডিয়া লিমিটেড (ওয়াইআইএল)-এর সঙ্গে এর আধুনিকীকরণে সাহায্য করতে এবং প্রতিরক্ষা এবং বিমান ক্ষেত্রে ব্যবহৃত মিশ্র অ্যালুমিনিয়ামের জন্য আমদানি নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ১০ হাজার টনের ফোর্জিং প্লেস সুবিধা স্থাপন করা হলো। এইচএএল ওয়াইআইএল-কে সুদ বিহীন ৪৩৫ কোটি টাকা অগ্রিম দেবে। পাশাপাশি বিডিএল ১০ বছরে ৩ হাজার মেট্রিকটন পর্যন্ত সুস্থিত কাজ দেবে। তৃতীয় মৌ-টি স্বাক্ষরিত হয় মিধানিতে একটি মেটাল ব্যাঙ্ক তৈরি করার জন্য। যাতে জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন প্রতিরক্ষা প্রকল্পে বিরল শ্রেণীর কাঁচামালের সরবরাহের কোনো বাধা না পড়ে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী একগুচ্ছ গবেষণা উদ্যোগের সূচনা করেন। যার মধ্যে আছে এইচএএল, আরঅ্যান্ডডি ম্যানুয়াল। যার লক্ষ্য ডিজিটাইজেশন, মেধা সম্পদ সৃষ্টি এবং ভারতীয় শিক্ষা জগতের মাধ্যমে গবেষণা পরিমণ্ডলকে শক্তিশালী করা। ডিপিএসইউগুলির গবেষণার পথনির্দেশ চলতি উদ্যোগ এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার সঙ্গে জড়িত। লাইসেন্স প্রাপ্ত উৎপাদন থেকে দেশজ নকশা এবং তৈরিতে স্থানান্তর যা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে একটি মূল্যবান পদক্ষেপ।
সুস্থায়ী প্রতিরক্ষা উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে রাজনাথ সিং স্বয়ম-এর সূচনা করলেন। স্বর্ণ ড্যাশবোর্ড এবং ডিপিএসইউ এনার্জি এফিসিয়েন্সি ইনডেক্সের মতো ডিজিটাল উপকরণের সাহায্যে এই উদ্যোগ আত্মনির্ভরতার সঙ্গে সুস্থায়িত্বের মিশ্রণে সরকারের দায়বদ্ধতার প্রতীক।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আইওএল এবং বিইএল-কে ১০০ শতাংশ গ্রিন এনার্জি ব্যবহারে সাফল্যের জন্য সংবর্ধিত করেন। আইওএল সেপ্টেম্বর, ২০২৫ থেকে সম্পূর্ণভাবে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহার করছে। এতে ২০২৫-২৬-এ প্রথম ত্রৈমাসিকে ৮ হাজার ৬৬৯ টন নিঃসরণ কমিয়েছে এবং ২৬.৩৬ লক্ষ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। নবরত্ন ডিপিএসইউ হিসেবে বিইএল প্রথম ২০২৫-এর জানুয়ারি মাসে আরই১০০ মাইলফলক অর্জন করেছে।
রাজনাথ সিং ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন পরিমণ্ডলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ডিপিএসইউ-গুলির নেতৃত্ব, উদ্ভাবন এবং দায়বদ্ধতার প্রশংসা করেন। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে অবিচ্ছিন্ন অবদানের জন্য সকল ডিপিএসইউ-কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আসুন আমরা সংকল্প নিই, ভারতকে প্রতিরক্ষা উৎপাদনে স্বনির্ভর করে তোলার পাশাপাশি গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাবও করে তুলতে হবে।”
নতুন উদ্বোধিত ডিপিএসইউ ভবনটি অত্যাধুনিক কিছু ব্যবস্থা সমৃদ্ধ। এটিকে তৈরি করেছে প্রতিরক্ষা উৎপাদন দফতর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় শেঠের নেতৃত্বে। এটিকে ১৬টি ডিপিএসইউ ব্যবহার করতে পারবে।
এই বিষয়ে জানিয়েছে ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি)|
হিন্দুস্থান সমাচার / সৌম্যজিৎ