
অশোক সেনগুপ্ত
কলকাতা, ৭ নভেম্বর (হি.স.): এখন থেকে প্রায় ৫০ বছর আগের কথা। ‘বন্দে মাতরম’-এর শতবর্ষ পালনের জন্য প্রাক্তন বিচারপতি ফনীভূষণ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একটা কমিটি হয়েছিল। আমার পিসতুতো দাদা গৌতম সেনগুপ্ত তাতে ছিলেন। তিনি কোনও বুদ্ধিজীবী নন, ব্যাঙ্ককর্মী সংগঠনের নেতা। আমাকেও নিয়ে নেন তাতে। কাদের, ক’জনের কমিটি— কিছুই খেয়াল নেই!
সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে বিবেকানন্দ পার্কের পাশের বাড়িতে থাকতেন ফনীবাবু। মনে আছে তাঁর বাড়িতে আমাদের বৈঠক হয়েছিল। পরে অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু তখন কোনও ছবি তুলিনি। কমিটিতে কে, কে ছিলেন, কী অনুষ্ঠান হলো— কিচ্ছু লিখে রাখিনি। প্রায় পাঁচ দশক বাদে, ২০২৫-এর ২৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘বন্দে মাতরম’-এর দেড়শ বছর বর্ষপূর্তির কথা বলেন। তখনই মনে পড়ল আগের বর্ষপূর্তির কথা।
মনে পড়ল, আয়োজনের ঘোষণার বড় গোটানো ব্যানার হাতে ৮বি বাস টার্মিনাসের বিপরীতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোহার গেট দিয়ে ঢুকেছি ৯ নম্বর বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন ফটক দিয়ে বার হব বলে। তখন তো বটেই, তার পরেও বহু বছর ওটাই ছিল আমজনতার শর্টকাটের রাস্তা। রক্ষী ধরে নিয়ে গেল অরবিন্দ ভবনে এক আধিকারিকের কাছে। তিনি জানতে চাইলেন কোথায় থাকি, কী নিয়ে কোথায় যাচ্ছি। খুলে দেখালাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে যাতায়াত না করার নির্দেশ দিয়ে তিনি ছেড়ে দিলেন আমাকে।
সেই দাদাকে বললাম কোনও ছবি আছে বন্দে মাতরম’-এর শতবর্ষ উদযাপনের? ও বলল, “না রে! তখন তোলা হয়েছিল। তারপর সব যে কোথায় চলে গিয়েছে!” তখন এত ছবি তোলার ধূম ছিলনা। বিষয়টার গভীরতা বোঝার মত অনুভবও ছিল না। জীবনের পাঁচালির হাজারো ঘটনার মতো আমার স্মরণতট থেকে চিরকালের মতো মুছে গেল একটা পবিত্র ঘটনার শরিক হয়ে থাকার স্মৃতি।
গত ৫ নভেম্বর নবান্নতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক করেন। তাতে ঠিক হয় ‘বন্দে মাতরম’-এর দেড়শ বছর পূর্তি পালন করবে রাজ্য সরকার। তৈরি হয় প্রস্তুতি কমিটি। নেটে এ ব্যাপারে কিছু বিভ্রান্তির তারিখ দেখে আমি এক আধিকারিকের কাছে ‘বন্দে মাতরম’ রচনার সঠিক বছরটা জানতে চাই। তিনি জানান, “As the eminent historian Sabyasachi Bhattacharya has noted in his book ' Vande Mataram: The Biography of A Song' (Penguin 2003), our National Song was composed over a few years, starting from 1872. While the song took a shape by 1875, it was later incorporated into the great novel ' Anandamath' (first published in 1881), when subsequent stanzas were added to the original song.”
আজ, ৭ নভেম্বর ২০২৫। শুরু হল দেশব্যাপী স্মরণ অনুষ্ঠান। সকালে যখন এটা লিখছি তখন হোয়াটসঅ্যাপে ভেসে এল ভ্রাতৃসম হেমাভ (তিলক) সেনগুপ্তর বার্তা। ও সংস্কার ভারতীর আঞ্চলিক কর্তা। বার্তায় লেখা—সার্ধশতবর্ষের শুভালোকে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেশবন্দনা 'বন্দেমাতরম্'
১৮৭৫ - ২০২৫
শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনে - সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ। প্রদেশের প্রতিটি জেলায় পদযাত্রা, সার্ধ শতকন্ঠে বন্দেমাতরম সঙ্গীত পরিবেশন, দেশ গান, প্রদীপ প্রজ্জ্বালন। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত বন্দেমাতরম গান লক্ষ লক্ষ দেশবাসীকে ভারত মাতার সেবায় আত্মনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আজ থেকে দেড়শত বছর আগে রচিত এই গান, দেশমাতৃকার বন্দনায় বিশ্বসেরা মন্ত্র।
২০২৫ সালের ৭ই নভেম্বর এই অমূল্য সৃষ্টির দেড়শত বছর পূর্তি উপলক্ষে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজীর আহবানে, সারা দেশে জুড়ে বর্ষব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের রাজ্যেও ৭ই নভেম্বর ২০২৫ থেকে সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের উদ্যোগে বর্ষব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।”
অনুগ্রহ করে কেউ ভাববেন না, কোনও দলের বা সংগঠনের স্তুতির জন্য লিখছি। হেমাভ আমার ভীষন পছন্দের মানুষ। আর, মোক্ষম এই লেখার সময় ওর বার্তা মুঠোফোনে এলো বলে যুক্ত করলাম ভূমিকায়। রাজনীতির ঊর্ধে উঠে ‘বন্দেমাতরম’-এর সার্ধশতবর্ষকে আমার মতো করে ধরে রাখার সময়সাপেক্ষ এক ভাবনায় মগ্ন হয়েছি।
জীবনের প্রথম ভাগে ঐতিহাসিক ঘটনার শতবর্ষকে ধরে রাখতে পারিনি। জীবনের প্রান্তসীমায় পৌঁছে অন্তত সেটির সার্ধশতবর্ষকে ধরে রাখব!
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / অশোক সেনগুপ্ত