
ঝাড়গ্রাম, ৩১ ডিসেম্বর (হি.স.): কনকনে শীতের রাতে অসুস্থ হয়ে এক শবর যুবকের মৃত্যু হয়েছে ঝাড়গ্রামের বিনপুর-২ ব্লকের বেলপাহাড়ী এলাকার ডররা গ্রামে। মৃতের নাম গুরুপদ শবর (৩৫)। তিনি পেশায় দিনমজুর ছিলেন। পরিবারের অভিযোগ, পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে প্রচণ্ড ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ষার সময় গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর উপর অস্থায়ী পারাপারের পথ ভেঙে যাওয়ায় সময়মতো তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। পরে হাসপাতালে পৌঁছলেও চিকিৎসা শুরু করার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।
মৃত যুবকের স্ত্রী বাবলি শবর কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তাঁদের দুই সন্তান—১৬ বছরের সূর্য ও ১৩ বছরের শ্রাবন্ত। এছাড়াও পরিবারে রয়েছেন বৃদ্ধ বাবা লালু শবর ও মা পারি শবর। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যুতে পরিবারটি চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। যুবকের স্ত্রী বাবলি শবর বলেন, “আমার স্বামীই ছিলেন সংসারের একমাত্র রোজগেরে। এখন কীভাবে সংসার চলবে জানি না। শীতে গায়ে দেওয়ার মতো জিনিসও আমাদের নেই।”
ডররা গ্রামের সান্দাপাড়া এলাকার বাসিন্দাদের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নদী পারাপার। বর্ষার জলে নদীর পাড় এবং অস্থায়ী পারাপারের পথ ভেঙে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই যাতায়াতের সমস্যা চলছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের কাছে বারবার জানানো হলেও স্থায়ী সমাধান হয়নি।
স্থানীয়দের দাবি, শীতের সময় সরকারি সহায়তা বা কম্বল বিতরণের কথা থাকলেও প্রান্তিক ও দুর্গম গ্রামগুলিতে সেই সাহায্য খুব কমই পৌঁছায়। যুবকের অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামবাসীরা নিঃস্ব পরিবারটির পাশে প্রশাসনের দাঁড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বেলপাহাড়ী ব্লকের বিডিও সুমন ঘোষ জানান, “ব্লক অফিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। এআইআর শুনানিতে যাঁরা আসেন, তাঁদেরও শীতবস্ত্র দেওয়া হচ্ছে। ওই পরিবারটি কেন আসেনি, তা জানা নেই। খালের উপর সেতুর বিষয়টি জেলা পরিষদের আওতায় রয়েছে, তারা দেখছে। মৃতের পরিবার যাতে আর্থিক সহায়তা পায়, তার ব্যবস্থা করা হবে।”
উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগেও একই গ্রামের এক বৃদ্ধ শবর ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, খালের উপর রাস্তা না থাকায় তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ফের একই গ্রামে শবর যুবকের মৃত্যুতে শীতবস্ত্রের অভাব ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সংকট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / গোপেশ মাহাতো