মেধাতালিকায় বিরল কলকাতার নামী স্কুল, কারণ বিশ্লেষণে প্রাক্তন সিভিল সার্ভেন্ট
অশোক সেনগুপ্ত কলকাতা, ৭ মে (হি.স.): একসময় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় কলকাতার নামী স্কুলগুলোর সফল পরীক্ষার্থীদের নাম থাকত। কিন্তু এখন থাকছে না। পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করলেন প্রাক্তন সিভিল সার্ভেন্ট গৌতম ভট্টাচার্য। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বুধবার
মেধাতালিকায় বিরল কলকাতার নামী স্কুল, কারণ বিশ্লেষণে প্রাক্তন সিভিল সার্ভেন্ট


অশোক সেনগুপ্ত

কলকাতা, ৭ মে (হি.স.): একসময় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় কলকাতার নামী স্কুলগুলোর সফল পরীক্ষার্থীদের নাম থাকত। কিন্তু এখন থাকছে না। পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করলেন প্রাক্তন সিভিল সার্ভেন্ট গৌতম ভট্টাচার্য।

উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বুধবার প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম দশে রয়েছে ৭২ জন। তাদের মধ্যে কলকাতার স্কুল থেকে চার জন রয়েছে। পাঠভবন স্কুলের তথাগত রায় অষ্টম স্থান অধিকার করেছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯০। পর্ণশ্রীর বেহালা হাই স্কুলের অঙ্কিত চক্রবর্তীও অষ্টম স্থানে রয়েছে, পেয়েছে ৪৯০। টাকি হাউস মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজের সৌনক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের সৃজিতা দত্ত নবম স্থানে রয়েছে। তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৯।

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষার মেধাতালিকা। প্রথম ১০টি স্থানে মোট ৭২ জন কৃতী রয়েছেন, তাতেও কলকাতা কোনঠাসা। কেবল, নবম স্থানাধীকারী ১৬ জনের মধ্যে আছেন কেবল কলকাতার বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের সৃজিতা দত্ত।

গত বেশ ক’বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে টপারদের তালিকায় কলকাতার কৌলিন্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। কারও ধারণা, ১) কলকাতার বেশ কিছু নামী স্কুল রাজ্য বোর্ড থেকে বেড়িয়ে দিল্লি বোর্ডের অধীনে বেড়িয়ে যাওয়ায় এরকম হচ্ছে। ২) কেউ মনে করেন, আগের তুলনায় জেলায় জেলায় পড়াশোনার পরিকাঠামো ভালো হয়েছে বলে।

প্রাক্তন চিফ পোস্ট মাস্টার গৌতম ভট্টাচার্য এই প্রতিবেদককে জানান, “মাধ‍্যমিক / উচ্চ মাধ‍্যমিক পরীক্ষার মেধা তালিকায় কলকাতা শহরেরে ছাত্রছাত্রীদের তুলনামূলক ভাবে পিছিয়ে পড়ার কারণ আমার মতে তিনটে।

(১) আশির দশক থেকেই কলকাতা শহরের বেসরকারি স্কুলগুলোর মধ‍্যে একটা প্রবণতা দেখা যায় মাধ‍্যমিক বোর্ড থেকে সরে গিয়ে CISCE বা CBSE বোর্ডে এ‍্যাফিলিয়েশন নেওয়া।

যেহেতু তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ইংরেজির পঠনপাঠন তুলে দিয়েছিলেন শহরের বেসরকারি স্কুলগুলোর এ‍্যাফিলিয়শনের পরিবর্তন করা ছাড়া আর কোনও গতি ছিল না, কেননা শহুরে শিক্ষিত-মধ‍্যবিত্ত বাবা-মায়েরা চাইতেন ছোট বয়স থেকেই ছেলেমেয়েরা ইংরেজি শিখুক।

কলকাতার সাউথ পয়েন্ট, মডার্ন হাই, সেন্ট জাভিয়ার্স প্রভৃতি স্কুল থেকে এক-দুদশক আগেও বহু ছাত্র-ছাত্রী মাধ‍্যমিক উচ্চ মাধ‍্যমিকের মেধা তালিকায় থাকতো। আজ এই সব স্কুলেরই ভালো ছেলেমেয়েরা CISCE বা CBSE বোর্ডের মেধা তালিকায় থাকে। ম‍াধ‍্যমিকে বা উচ্চ মাধ্যমিকের মেধাতালিকা দেখলে আপাতদৃষ্টিতে তাই মনে হয় কলকাতা যেন পিছিয়ে পড়ছে!

(২) সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেধাবি ছেলেমেয়েরা যারা আগে কুলীন রাষ্ট্রীয় বিদ‍্যালয়গুলোতে পড়তো, বামফ্রন্ট সরকারের নিয়মের জেরে তারাও অন‍্য বোর্ডের ইংরেজি মাধ‍্যম স্কুলে পড়াশোনা শুরু করে। তাই আশি-নব্বইয়ের দশক থেকেই আমরা দেখলাম শহরের অলিতে গলিতে অন‍্য বোর্ডের ইংরেজি মাধ‍্যম স্কুল গজিয়ে উঠতে। নব্বইয়ের দশকের পরে হিন্দু স্কুল, বালিগঞ্জ গভর্ণমেন্ট, হেয়ার বা বেথুন স্কুল থেকে মেধাতালিকায় আসা ছাত্রছাত্রীদের সংখ‍্যা বিরলতর হতে থাকে।

(৩) তবে এটাও সত‍্যি যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাও অনেক ইনক্লুসিভ হয়েছে। মফস্বলের সঙ্গে শহরের পার্থক‍্য কমেছে, উচ্চবর্ণের আধিপত্য কমেছে। তাই শুধু মাধ‍্যমিক বা উচ্চ মাধ‍্যমিকই নয় CISCE বা CBSE বোর্ডের মেধাতালিকাতেও দেখা যাবে জেলার শহরগুলোর উপস্থিতি আস্তে আস্তে বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে নিম্ন-বর্ণের ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি। আমি মনে করি এটা সমাজ পরিবর্তনের একটা উল্লেখযোগ্য দিকের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করে।

কেউ কেউ মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গ পর্ষদ থেকে বার হওয়া টপাররা আগের মত সর্বভারতীয় ক্ষেত্রের প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠছে না। যদি এটা সঠিক হয়, কেন? “আমার মনে হয় না পশ্চিমবঙ্গ পর্ষদ থেকে বার হওয়া ছাত্রছাত্রীদের সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় খারাপ করার কোন কারণ আছে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন পত্র অধিকাংশই CBSE বোর্ডের পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে হয়। আজকাল তাই CISCE বা বিভিন্ন রাজ‍্যের বোর্ডগুলিও বিজ্ঞান শাখার বিষয়গুলো CBSE বোর্ডকে কোর্সকে অনুসরণ করেই পড়ান। পশ্চিমবঙ্গও এই পরিবর্তনে কিছুকাল আগে সামিল হয়েছে।”

---------------

হিন্দুস্থান সমাচার / অশোক সেনগুপ্ত




 

 rajesh pande