চিরাং (অসম), ২১ জুন (হি.স.) : বড়োল্যান্ড টেরিটরিয়াল রিজিওন (বিটিআর)-এর অন্তর্গত বাকসা-র মুসলপুর এবং চিরাং জেলার কাজলগাঁওয়ে দুটি নবনির্মিত জেলা সংশোধনাগার (কারাগার) উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা। চিরাঙের কারাগারটি উত্তরপূর্ব ভারতের প্রথম সম্পূর্ণ অত্যাধুনিক সংশোধনাগার হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
আজ শনিবার চিরাঙের কাজলগাঁওয়ে নবনির্মিত অত্যাধুনিক কারাগার উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা সংশোধনাগারের আধুনিকীকরণ এবং বন্দিদের যত্ন ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে রাজ্য সরকারের প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিটিআর-এ ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা শক্তিশালী করতে আজ চিরাং এবং বাকসায় দুটি নবনির্মিত জেলা কারাগার উৎসর্গ করা হয়েছে। এই দুই কারাগারে সম্মিলিতভাবে ১,০০০ বন্দির থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এগুলো কেবল কারাগার নয়, বরং পরিবর্তনের কেন্দ্র। এর পরিকাঠামো শাস্তিমূলক পদ্ধতির পরিবর্তে সংস্কারমূলক পদ্ধতিতে বিকশিত হয়েছে, বলেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ নতুন জেলা কারাগার উদ্বোধনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রদানে আমাদের প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করবে। বলেন, পুনর্বাসন এবং মানবিক কারাবাসের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে নির্মিত এই অত্যাধুনিক কারাগার কমপ্লেক্স অসমের কারাগার অবকাঠামোতে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। কারাগারে উন্নত সুযোগ-সুবিধা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। চিরাঙের কারাগারে ৬৩৬ জন বিচারাধীন এবং সাজাপ্রাপ্ত বন্দির থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
এই অঞ্চলের প্রচলিত কারাগারের বিপরীতে চিরাং জেলা কারাগারে নিবেদিতপ্রাণ কোয়ারেন্টাইন এলাকা রয়েছে, যেখানে স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ নিশ্চিত করা হয়। এই কমপ্লেক্সে পুরুষ ও মহিলা বন্দিদের জন্য পৃথক আধুনিক চিকিৎসা ইউনিট, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য শ্রেণিকক্ষ এবং একটি সুসজ্জিত গ্রন্থাগার রয়েছে। এ সবই পুনরুদ্ধার, আত্ম-উন্নতি এবং সমাজে পুনঃএকীভূতকরণকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, বলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
প্ৰদত্ত ভাষণে মুখ্যমন্ত্ৰী আরও বলেন, চিরাং পূৰ্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও প্ৰয়োজনীয় অবকাঠামো এখনও গড়ে ওঠেনি। তবে রাজ্য সরকার এবং বিটিসি প্ৰশাসনের যৌথ পদক্ষেপের ফলস্বরূপ জেলায় অতি প্ৰয়োজনীয় পরিকাঠামো সুবিধাবলি সহ সবল করা হচ্ছে। তিনি বলেন, খুব শীঘ্রই চিরাং জেলা স্টেডিয়ামের নিৰ্মাণকাৰ্য শুরু হবে। আরও বলেন, চিরাঙে ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নিৰ্মীয়মাণ উপেন্দ্ৰনাথ ব্ৰহ্ম বাগানটি সম্পূৰ্ণ হয়ে গেলে এই জেলার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।
ভুটানের গেলেফু মাইন্ডফুলনেস শহর চিরাঙে কয়েকটি সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে, বলেন মুখ্যমন্ত্ৰী। এই উন্নয়নের প্ৰতি লক্ষ্য রেখে রাজ্য সরকার চিরাং জেলাকে সামাজিক এবং অৰ্থনৈতিকভাবে সবলীকরণের জন্য বেশ কয়েকটি উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন, চিরাং থেকে গেলেফু পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে যাতায়াতের সুবিধা প্ৰদানকারী নতুন সড়ক প্ৰকল্প এবং চিরাঙের বুক চিরে ধাবিত গেলেফু থেকে কোকরাঝাড় পর্যন্ত রেল-লাইন জেলার অৰ্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতভাবে ত্বরান্বিত করবে। মুখ্যমন্ত্ৰী ড. শৰ্মা বলন, অসম মালার অধীনে চিরাঙে কম করেও ২৫ কিলোমিটার রাস্তা নিৰ্মাণ করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কয়েক বছর থেকে শান্তির পাশাপাশি বিটিআর-এ উন্নয়ন এক নতুন গতি লাভ করেছে৷ তিনি বলেন, বিটিআর এমন এক অঞ্চল, যেখানে বিভিন্ন জাতি, ধৰ্ম এবং জনগোষ্ঠীয় মানুষ শান্তিতে বসবাস করছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, আগামী ১০ সেপ্টেম্বর থেকে অরুণোদয় ৩.০-এ ৪০ লক্ষ পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্ৰী মহিলা উদ্যমিতা অভিযানের অধীনে মহিলা সুবিধাভোগীরা ১০ হাজার টাকা করে পাবেন। ১ অক্টোবর থেকে সব রেশনকাৰ্ডধারী ভরতুকি মূল্যে চিনি, ডাল এবং লবণের অধিকারী হবেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অক্টোবর থেকে এইচএসএলসির প্রার্থীরা লাভ করবে পুষ্টিকর খাদ্যের জন্য ৩০০ টাকা করে।
আজকের জেলা কারাগার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্য বহুজনের সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের কারাগার, গৃহরক্ষী এবং অসামরিক প্ৰতিরক্ষা দফতরের মন্ত্ৰী রূপেশ গোয়ালা, মন্ত্রী উর্খাও গৌরা ব্রহ্ম, বিটিসি-প্রধান প্ৰমোদ বড়ো, সাংসদ জয়ন্ত বসুমতারি, রবংবরা নাৰ্জারি, বিধায়ক অজয়কুমার সত্যজিৎ, নিৰ্মলকুমার ব্ৰহ্ম, অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (গৃহ) অজয় তিওয়ারি, সিআইডি-র স্পেশাল ডিজিপি মুন্নাপ্ৰসাদ গুপ্তা, কারা পরিদৰ্শক পুবলী গোহিয়ান।
এখান থেকে বাকসা জেলার মুসলপুরে জেলা কারাগার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা বলেন, রাজ্য সরকার বিটিআর-এর অন্তর্গত পাঁচটি জেলার সম-উন্নয়নের জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে৷ তিনি বলেন, বাকসায় জেসাশাসকের কাৰ্যালয় নিৰ্মাণ ৪০ শতাংশ অগ্ৰগতি লাভ করেছে, জেলা স্টেডিয়ামের নিৰ্মাণকাজও পূৰ্ণগতিতে চলছে।
ড. শর্মা বলেন, যোগাযোগের সুবিধার জন্য বাকসা থেকে তামুলপুর পৰ্যন্ত রাস্তায় পাগলাদিয়া নদীর ওপর আরও দুটি সেতু নিৰ্মাণের কাজ চলছে। নিকাশী মহাবিদ্যালয়ে বিজ্ঞান পাঠক্রম চালুর পাশাপাশি স্নাতকরা সরকারের কাছ থেকে আৰ্থিক সাহায্য পাবেন, ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বাকসার অনুষ্ঠানে অন্য বহুজনের সঙ্গে ছিলেন হস্ততাঁত ও বস্ত্ৰশিল্প দফতরের মন্ত্রী উর্খাও গৌরা ব্ৰহ্ম, কারাগার, গৃহরক্ষী এবং অসামরিক প্ৰতিরক্ষা দফতরের মন্ত্ৰী রূপেশ গোয়ালা, বিটিসি-প্রধান প্ৰমোদ বড়ো, বিটিসি-র অধ্যক্ষ কাতিরাম বড়ো, কমিশনার তথা গৃহসচিব দিগন্ত বরা।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস