নয়াদিল্লি, ২৫ জুন (হি.স.) : আগামী ২৩ জুলাই ভারতীয় মজদুর সংঘ-র ৭০ বছর প্রতিষ্ঠা পূর্তি উপলক্ষে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আরএসএস সরসঙ্ঘচালক ডঃ মোহন ভাগবত এবং দেশজুড়ে হাজার হাজার কর্মীও এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। বুধবার দিল্লির হরিয়ানা ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতীয় মজদুর সংঘের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্র হিমাতে এই খবর জানান। এই সাংবাদিক সম্মেলনে আঞ্চলিক সংগঠন মন্ত্রী অনুপম এবং দিল্লির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দীপেন্দ্র চাহারও উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে রবীন্দ্র হিমাতে বলেন, ৭০ বছরের এই যাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ভোপালে আয়োজন করা হয়েছে এবং ডঃ ভাগবতের উপস্থিতিতে দিল্লিতে সমাপ্তি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এতে দিল্লির প্রায় ১১০টি সংগঠনের ১০,০০০ কর্মী উপস্থিত থাকবেন। এর পাশাপাশি কেন্দ্র এবং রাজ্যের মন্ত্রীদেরও এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সংঘের দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক মাধব সদাশিব গোলওয়ালকর (গুরুজি)– র নির্দেশে ১৯৫৫ সালের ২৩ জুলাই দত্তোপন্ত ঠেঙ্গড়ি ভোপালে ৩৫ জন শ্রমিক নিয়ে ভারতীয় মজদুর সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময়ে এই সংগঠনের কোনও অর্থ ছিল না, ছিল না সদস্যপদও। কিন্তু সাংগঠনিক প্রতিশ্রুতি, জাতীয়তাবাদী চিন্তাভাবনা এবং পরিশ্রমী শ্রমিকদের চেষ্টার জোরে এই সংগঠন একটি উদাহরণ স্থাপন করে। তিনি বলেন, ১৯৬৭ সালে দিল্লিতে এর প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং ১৯৮০ সালের মধ্যে এই সংগঠন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়নে পরিণত হয়েছিল। ১৯৯০ সালে দেশের এক নম্বর সংগঠনে পরিণত হয় এবং তারপর থেকে সংগঠনটি ধারাবাহিকভাবে শীর্ষস্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, ভারতীয় মজদুর সংঘের মূল স্তম্ভ হল দেশ। আমরা সবার আগে দেশকে, তারপর শিল্প এবং তারপর শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি যে যখন দেশ নিরাপদে থাকলে, তখনই শিল্প সুরক্ষিত থাকবে এবং যখন শিল্প সুরক্ষিত থাকবে, তখনই শ্রমিকরাও সুরক্ষিত থাকবেন।
করোনা মহামারীর সময় সংগঠনের কর্মীদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে হিমাতে বলেন, সরকার যখন আত্মীয়স্বজনদের মৃতদেহ দাহ করতে অস্বীকার করেছিলেন, তখন আমাদের কর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছিলেন এবং চিকিৎসকদের পাশাপাশি রোগীদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতীয় মজদুর সংঘ এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের কর্মীরা একসাথে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আজ ভারতীয় মজদুর সংঘ দেশের ২৮টি রাজ্যে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, যাদের মোট সদস্য সংখ্যা ২ কোটিরও বেশি।
আঞ্চলিক সংগঠন মন্ত্রী অনুপম বলেন, ভারতীয় মজদুর সংঘ আজ দেশের ট্রেড ইউনিয়ন ব্যবস্থায় একটি স্বতন্ত্র এবং শক্তিশালী পরিচিতি লাভ করেছে। সম্প্রতি, ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনের অধীনে লেবার-২০-এর সভাপতিত্ব করেন ভারতীয় মজদুর সংঘের জাতীয় সভাপতি হিরণ্ময় পাণ্ড্য। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ফোরামেও সংঘের প্রতিনিধিরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা হল সরকার এবং কর্মচারীদের মধ্যে সম্পর্ক মসৃণ এবং গঠনমূলক রাখা।
অনুপম আরও বলেন, এই সংগঠন ৭০ বছর ধরে অখণ্ড ঐক্য এবং শৃঙ্খলা নিয়ে এগিয়ে চলেছে, যা বিশ্বের অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের জন্যও অনুপ্রেরণা। তিনি বলেন, অন্যান্য ইউনিয়নগুলিও দত্তোপন্ত ঠেঙ্গড়ির আদর্শ এবং সাংগঠনিক দক্ষতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, এই ৭০তম বছরটি কেবল ভারতীয় মজদুর সংঘের জন্য একটি উদযাপন নয়, বরং দেশ গঠনে এর ভূমিকাকে সম্মান জানানোর একটি সুযোগ।
দিল্লির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চাহার বলেন, দিল্লিতে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে এবং সংগঠনের এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানটিকে স্মরণীয় করে রাখতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ৭০ বছরের এই যাত্রায় ভারতীয় মজদুর সংঘ প্রমাণ করেছে যে দেশের স্বার্থ যদি সর্বাগ্রে থাকে, তাহলে সংগঠন কেবল টিকে থাকে না, বরং আরও উন্নতির দিকেও এগিয়ে যায়।
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / পাপিয়া