সাব্রুম (ত্রিপুরা), ২৭ জুন (হি.স.) : দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম মহকুমার দমদমা নেতাজীপল্লী এলাকার বাসিন্দা বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মচারী আশীষ দে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন। প্রায় ১২ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আগরতলায় জিবি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। শুক্রবার দুপুরে ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং বিকালে দমদমা নেতাজীপল্লীতে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরিবার, প্রতিবেশী ও সহকর্মীদের আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ।
জানা গেছে, গত ১৫ জুন রাত ১০টা নাগাদ দমদমা স্কুলের নিচে ৮ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর দুটি বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে আশীষ দে গুরুতর আহত হন। প্রথমে তাঁকে সাব্রুম মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পরে সেখান থেকে তাঁকে স্থানান্তর করা হয় আগরতলার জিবি হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মারা যান।
আশীষ দে ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর অকালমৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে তাঁর স্ত্রী, দুই পুত্র সন্তান, বৃদ্ধ মা-বাবা সহ গোটা পরিবার। নিতান্তই হতদরিদ্র এই পরিবার এখন চরম অনিশ্চয়তার মুখে। এই অবস্থায় তাঁর সহকর্মী ও স্থানীয় সমাজসেবীরা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, যেন মৃতের পরিবারকে যথাযথ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় এবং অন্তত দুটি সন্তান যাতে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হয়।
এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের একবার সামনে এসেছে ৮ নম্বর জাতীয় সড়কের দমদমা অঞ্চলের দীর্ঘদিনের ভয়াবহ পরিস্থিতি। স্থানীয় সমাজসেবী তাপস লোধ জানান, সাব্রুম-আগরতলা জাতীয় সড়কের এই অংশটিকে 'এক্সিডেন্টাল জোন' তথা দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করা প্রয়োজন, কারণ এখানে একাধিক দুর্ঘটনার নজির রয়েছে।
তিনি বলেন, “এই ১০০ মিটার এলাকাতেই বছর দুয়েক আগে বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন গৌড় সুন্দর বসাক ওরফে টাবলু। কিছুদিন আগেও প্রবীণ শিক্ষক জীবন দে বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। শুধু বাইক নয়—বাস, অটো, চারচাকার গাড়ির একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে এখানে।
তিনি আরও বলেন, রাস্তার অ্যালাইনমেন্ট ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এই রাস্তায় পর্যাপ্ত সিগনাল নেই, রাত্রিকালীন আলোর ব্যবস্থা দুর্বল এবং বাঁকগুলি অত্যন্ত বিপজ্জনক। এই সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে অতিসত্বর পদক্ষেপ না নিলে আরও অনেক তরতাজা প্রাণ ঝরে যেতে পারে।”
অঞ্চলবাসীর পক্ষ থেকে রাজ্য সরকার এবং জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে জোরালো দাবি জানানো হয়েছে - অবিলম্বে এই অংশটিকে এক্সিডেন্টাল জোন হিসেবে যাতে ঘোষণা করা হয়। যেন রাস্তার পুনর্গঠন ও সঠিক অ্যালাইনমেন্ট নিশ্চিত করা হয়। উপযুক্ত ব্রেকিং জোন, স্পিড হাম্প, সিসিটিভি ও রাতের আলো স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরী।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাঁরা রাজ্য সরকারের মানবিক সহানুভূতির আশায় আছেন, যাতে এক উপার্জনকারীর মৃত্যুতে পরিবারের অস্তিত্ব সংকটে না পড়ে। জনগণের বক্তব্য যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া হলে, এই সড়ক হয়তো ভবিষ্যতেও কেড়ে নেবে আরও অনেক প্রাণ—এই আশঙ্কাই এখন প্রতিটি মানুষের মনে।
হিন্দুস্থান সমাচার / গোবিন্দ দেবনাথ