গুয়াহাটি, ২৭ জুলাই (হি.স.) : নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে আগে দলে সত্যিকারের অবদান দেখাতে হবে, এটা সিনেমার টিকিট নয় যে বললেই টিকিট দেওয়া হবে। আজ এভাবেই টিকিট-প্রত্যাশীদের উদ্দেশে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছেন রাজ্য সরকারের অন্যতম প্রধান শরিক দল অসম গণ পরিষদ (অগপ)-এর সভাপতি অতুল বরা।
আসন্ন বডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল রিজিয়ন (বিটিআর) এবং অসম বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে অসম গণ পরিষদ। আসন্ন নির্বাচনে দলীয় টিকিট-প্রত্যাশীদের ভিড় বেজায় বাড়ছে। নানা জায়গায় তৃণমূল স্তরের নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের এ বিষয়ে নানাভাবে হেনস্তা করছেন বলে অভিযোগ আসছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ রবিবার দিশপুরে (গুয়াহাটি) অগপ-র সিনিয়র এবং বিভিন্ন পদমৰ্যাদার নেতা ও কর্মীদের উপস্থিতিতে আসন্ন বিটিআর এবং অসম বিধানসভা নির্বাচনের রণকৌশল নির্ধারণ সম্পর্কিত এক গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ছিলেন দলের কার্যনির্বাহী সভাপতি কেশব মহন্ত, দুই সাংসদ বীরেন্দ্র প্রসাদ বৈশ্য (রাজ্যসভা) ও ফণীভূষণ চৌধুরী (লোকসবা), বিধায়ক রমেন্দ্র নারায়ণ কলিতাও।
অনুষ্ঠিত সভায় বক্তৃতা পেশ করতে গিয়ে দলের সভাপতি অতুল বরা টিকিট-প্রত্যাশীদের উদ্দেশে বেশ কড়া বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, সাংগঠনিক কাজের প্রতি উৎসর্গিত এবং জনভিত্তি-সম্পন্ন তথা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য টিকিট দেওয়া যায় কিনা বিবেচনা করা হবে৷
অতুল বরা বলেন, ‘আপনারা যদি শুধুমাত্র দাবি করেন বা হুমকি দেন, তা-হলে কিন্তু টিকিট পাবেন না। আপনার সাংগঠনিক ভিত্তি থাকতে হবে, দলের জন্য কাজ করতে হবে, জনসাধারণের কাছে যেতে হবে, গিয়ে প্রচার করতে - তবেই টিকিট পাওয়া যাবে।’ তিনি বলেন, ‘দলীয় টিকিট চাওয়ার আগে সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত থাকা জরুরি। নির্বাচনী টিকিট সিনেমার টিকিটের মতো নয় যে চাইলেই পাওয়া যাবে।’
দলীয় সভাপতি আরও স্পষ্ট বার্তা, ‘লবিবাজি চলবে না, লবিঙের ওপর ভিত্তি করে টিকিট প্রদান করা হবে না, একদিকে লবিবাজি করবেন, আর অন্যদিকে টিকিট চাইবেন, তা কিন্তু হবে না। টিকিট-প্রাপ্তি নির্ভর করবে আপনি দলের জন্য কতটা কাজ করেছেন তার ওপর।’
টিকিট বণ্টন নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সম্পর্কিত প্ৰচলিত জল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘টিকিট বরাদ্দকে কেন্দ্র করে বিদ্যমান অগপ বিধায়কদের মধ্যে কোনও অসন্তোষ নেই।’ দলের সভাপতির বক্তব্য, ‘কোনও রাজনৈতিক দলে মতের পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। তবে দলের অন্দরে বিরোধ বা বিদ্রোহের কোনও স্থান নেই।’
অতুল বরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে ২৬টি আসনের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হবে। এ বিষয়ে প্রধান জোটশরিক বিজেপির সঙ্গে কথা চলছে। জেলা কমিটির মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এই সিদ্ধান্তে যাচ্ছি আমরা।’
অগপ-র প্রভাব বিস্তারের প্রতি মনোনিবেশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সভাপতি বরা বলেন, ‘আমরা অবশ্যই আমাদের আসন ভাগ বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তা করছি। তবে আমাদের এ মুহূর্তে প্রাথমিক ফোকাস পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করা। আমরা যদি নতুন শক্তি না আনতে পারি, তা-হলে তা কীভাবে কাজ করবে? অগপ নতুন ধারণা, নতুন চিন্তা এবং নতুন যুগের নতুন মুখকে অগ্রাধিকার দেবে।’
জোট-রাজনীতির জন্য অগপ-র প্রস্তুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, দলীয় সভাপতি অতুল বরা বলেন, ‘যদি আমরা জোটে থাকি, তা-হলে আমাদের দেওয়া-নেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’
দলের অন্য নেতারা আজকের গুরুত্বপূর্ণ সভাকে নির্বাচনের আগে শক্তিশালী তৃণমূল সংহতি নিশ্চিত করার এক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করে বক্তব্য পেশ করেছেন। তাঁদের সকলেই দলীয় ঐক্য ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে যুব ও উদ্ভাবনের ওপর নতুন করে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। দলের সর্বস্তরের নেতারা নির্বাচনী কৌশলকে আরও ধারালো করতে আগামী দিনগুলোতে সাংগঠনিক কার্যক্রম তীব্রতর করার অঙ্গীকার করেছেন।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস