পান্ডবেশ্বরে একটা বুথেই ১৯১ ভুয়ো ভোটার, বিস্ফোরক অভিযোগ জিতেন্দ্র তেওয়ারী
দুর্গাপুর, ১ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : গ্রামে বাসিন্দাই নেই। অথচ ভোটার তালিকায় জ্বলজ্বল করছে নাম! একজন দুজন নয়, একেবার প্রায় দু''শ জন। তাও আবার একটা বুথে। সোমবার দুর্গাপুর সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে সরব হলেন বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস
পান্ডবেশ্বরে একটা বুথেই ১৯১ ভুয়ো ভোটার, বিস্ফোরক অভিযোগ জিতেন্দ্র তেওয়ারী


দুর্গাপুর, ১ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : গ্রামে বাসিন্দাই নেই। অথচ ভোটার তালিকায় জ্বলজ্বল করছে নাম! একজন দুজন নয়, একেবার প্রায় দু'শ জন। তাও আবার একটা বুথে। সোমবার দুর্গাপুর সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে সরব হলেন বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য জিতেন্দ্র তেওয়ারী। একই সঙ্গে অতিতে নির্বাচন তালিকা সংশোধনকারী বিএলওদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থার দাবী তুললেন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য এসআইআর লাগু হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ভুয়ো ভোটারে হদিশ তুলে সরব হয়েছে গেরুয়া শিবির। এবার পশ্চিম বর্ধমানের পান্ডবেশ্বর বিধানসভার একটা বুথে প্রায় দু'শ জন ভুয়ো ভোটারের তথ্য তুলে ধরল বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য জিতেন্দ্র তেওয়ারী। পুরোনো তালিকা অনুযায়ী পান্ডবেশ্বর বিধানসভায় ২৩৯ টি বুথ রয়েছে। চলতি বছর গত ৬ জানুয়ারী তালিকা অনুযায়ী পান্ডবেশ্বরের ৬৫ নং বুথে ১০৪৫ জন ভোটার। ওই বুথটি রয়েছে ছোড়া কোলিয়ারী ৭৯ পিট, চানক পাড়া, বাউরী পাড়া, প্রীতিলতা ৭৯ পিট। অভিযোগ তার মধ্যে ১৯১ জন ভোটারের কোন হদিশ নেই। ভুয়ো ভোটার। এলাকায় ওইসব নামে কোন বাসিন্দাই নেই।

সোমবার দুর্গাপুরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি নেতা জীতেন্দ্র তেওয়ারী বলেন, এসআইআর লাগু হতে তৃণমূল বিরোধিতায় করায় আমাদের সন্দেহ হয়। আমরা বুথ ভিত্তিক ভোটার তালিকা নিয়ে সার্ভে করি। তাতে কেবলমাত্র একটা বুথে ১৯১ জন ভুয়ো ভোটার রয়েছে। যাদের কোন অস্তিত্বই নেই। এরকম পান্ডবেশ্বরে ৫০ শতাংশের বেশী বুথে দেড়'শ থেকে দু'শ করে ভুয়ো ভোটার রয়েছে। সব মিলিয়ে গোটা বিধানসভায় সঠিক তদন্ত হলে ৩৫-৪০ হাজার বেরোবে। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাবো। প্রয়োজনে আদালতে যাবো।

তিনি আরও বলেন, এর আগে ভোটের দিন আমাদের কর্মীদের বুথে বসতে দেয়নি তৃণমূল, আমাকে ভোটের দিন এলাকায় ঢুকতে দেয়নি। তার এটাই কারন, এসব ভুয়ো ভোটারদের ভোট দিয়েছে। তিনি বলেন, যারা সব জানা স্বত্ত্বেও ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করে এসেছে, অথচ এসব ভুয়ো ভোটারের নাম বাদ দেয়নি,তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা নিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। আর এসব বিএলও রা সব তৃণমূলের শিক্ষা সেলে যুক্ত। এখন প্রশ্ন, খনি অঞ্চলে এই ভুয়ো ভোটার কি শুধু ভোট ব্যাঙ্ক? না, অন্য কোন দুর্নীতির রহস্য রয়েছে? উল্লেখ্য, ইসিএল শোনপুর বাজারী প্রজেক্টের ভাটমুড়া, মধুডাঙা, শোনপুর বাজারী গ্রাম সহ ১০ টি গ্রাম অধিগ্রহনের কাজ শুরু করে। পুনরবাসনের গোল্ডেন প্যাকেজে গ্রামবাসীদের জমি ও বাড়ির মূল্য নির্ধারিত করা হয়। তাতে বাড়ির জন্য সর্বনিম্ন ৩ লক্ষ ২৫ হাজার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। গোওয়াল ঘরের জন্য ২৫ হাজার টাকা ও জিনিসপত্র স্থানান্তরিত করার খরচ বাবদ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এছাড়াও রোজগারের ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্য শ্রমআইন অনুযায়ী এক বছরে ৩০০ দিনের মজুরীর টাকা দেওয়া হয়। এছাড়াও জমির বদলে ১০০ বর্গ মিটার বসত জমি। ২ একর জমি থাকলে পরিবার পিছু ক্ষতিপূরণ বাবদ একটি চাকরি। পুনর্বাসনের জমিতে নুন্যতম পরিকাঠামোর জল, বিদ্যুত, রাস্তা, নিকাশী, স্কুল স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরী করে দেওয়া হয়। জমি না নিলে তার জন্য ৪ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ক্ষতিপূরণ বাবদ কমপক্ষে সাড়ে ১২ লাখ টাকা পাবে উচ্ছেদ হওয়া পরিবার। যার চার কিস্তিতে ওই টাকা দেওয়া হয়। পুনর্বাসনের প্রকল্পে চুড়ান্ত তালিকার জন্য গ্রাম কমিটি করা হয়। ওই চুড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী উপভোক্তাদের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড সহ তালিকা যাচাই করে স্বাক্ষর করে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধান ও সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক। ২০২৩ সালে

ভোটার লিস্ট আসতেই অনিয়মের পর্দা ফাঁস করে বিজেপি। তাতে দেখা যায় দেড়'শ জন বহিরাগতের নাম নতুন লিস্টে। তাদের কেউ আসানসোল, কেউ ঝড়খন্ড, কেউ বীরভূমের বাসিন্দা। ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের প্রকল্পের টাকা তুলতেই বহিরাগতদের নাম তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে গেরুয়া শিবির।

অভিযোগ, বহিরাগতদের ভাটমুড়া গ্রামের ভোটার তালিকায় নাম তুলে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড করানো হচ্ছে। এরকম ৫০ টি বহিরাগত পরিবারের নাম সংযোজন হয়েছে। ভোটার তালিকায় এমনই ভুয়ো ভোটারের নাম নজরে পড়তেই প্রতিবাদে সরব হয় বিজেপি। জীতেন্দ্র তেওয়ারী বলেন, ভাটমুড়া গ্রামে অভিযোগ করেছিলাম। তদন্ত করছিলেন বিডিও। তাতে জানানো হয় ৫০ জন জামাই আছে। অর্থাৎ জামাইদের নামেও পুনর্বাসনের প্যাকেজ তোলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তৃণমূলের মদতে এসব ভুয়ো ভোটারদের নাম তোলা হয়েছে। তাই আমি চ্যালেঞ্জ করছি, ৬৫ নং বুথে এই ১৯১ জন ভোটারকে তৃণমূল কংগ্রেস ও নির্বাচন কমিশন সামনে নিয়ে আসুক।

উল্লেখ্য, গত ২০২১ সালে পান্ডবেশ্বরে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন জীতেন্দ্র তেওয়ারী। সেবারে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। সেই পরাজয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণনায় ২১ রাউন্ড পর্যন্ত লিড ছিল। তারপর কাউন্টিং থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়। এবং পোস্টাল ব্যালট গণনায় গরমিল করে। আমরা হারিনি। জোর করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এটা পান্ডবেশ্বরের মানুষ জানে। যদিও এপ্রসঙ্গে তমণমূলের পান্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি কীরিটি মুখোপাধ্যায় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ২০২১ সালে জীতেন্দ্র তেওয়ারী পরাজিত হওয়ার পর আর এলাকায় দেখা পাওয়া যায়নি। আবারও হয়তো ২০২৬ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তাই এভাবে অবান্তর অভিযোগ তুলে বাজার গরম করছেন। মানুষ সবই দেখছে। ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন।

হিন্দুস্থান সমাচার / জয়দেব লাহা




 

 rajesh pande