সহপাঠীর সঙ্গে খাবার খেতে বেরিয়ে, জঙ্গলে টেনে নিয়ে গিয়ে দুর্গাপুরে ডাক্তারি পড়ুয়াকে গণধর্ষণ! অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে বিজেপির বিক্ষোভে উত্তাল শহর
দুর্গাপুর, ১১ অক্টোবর (হি.স.) : ফের রাজ্যে এক ডাক্তারি পড়ুয়াকে গণধর্ষণের অভিযোগে তীব্র চাঞ্চল্য। আরজিকর ও মুর্শিদাবাদের পর এবার শিল্পনগরী দুর্গাপুরের এক বেসরকারি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীর ওপর নৃশংস অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। সহপাঠীর সঙ্গ
সহপাঠীর সঙ্গে খাবার খেতে বেরিয়ে, জঙ্গলে টেনে নিয়ে গিয়ে দুর্গাপুরে ডাক্তারি পড়ুয়াকে 'গনধর্ষণ'! অপরাধীদের শাস্তির দাবীতে বিজেপির বিক্ষোভ, উত্তাল


দুর্গাপুর, ১১ অক্টোবর (হি.স.) : ফের রাজ্যে এক ডাক্তারি পড়ুয়াকে গণধর্ষণের অভিযোগে তীব্র চাঞ্চল্য। আরজিকর ও মুর্শিদাবাদের পর এবার শিল্পনগরী দুর্গাপুরের এক বেসরকারি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীর ওপর নৃশংস অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। সহপাঠীর সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে ফুচকা খেতে বেরিয়ে পড়ুয়া গণধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ। শনিবার সকাল থেকে কলেজ চত্বর ও থানার সামনে তীব্র বিক্ষোভে ফেটে পড়েন কলেজের ছাত্রছাত্রী, বিজেপি ও সিপিএম কর্মীরা। ঘটনায় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় দুর্গাপুরের শোভাপুরে অবস্থিত ওই বেসরকারি মেডিকেল কলেজে। বর্তমানে নির্যাতিতা আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে দুর্গাপুর নিউটাউনশিপ থানার পুলিশ। নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে ছুটে আসেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যা ড. অর্চনা মজুমদার।

ওড়িশার জলেশ্বরের বাসিন্দা ওই তরুণী দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের এমবিবিএস ছাত্রী। তিনি কলেজের হোস্টেলেই থাকতেন। শুক্রবার রাতে এক সহপাঠীর সঙ্গে ফুচকা খেতে বাইরে যান। অভিযোগ, কলেজ গেটের সামনেই কয়েকজন যুবক তাঁকে জঙ্গলে টেনে নিয়ে যায় এবং সেখানেই গণধর্ষণ করে। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে জঙ্গলে ফেলে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। নির্যাতিতা কোনওভাবে কলেজের জরুরি নম্বরে ফোন করতে গেলে, দুষ্কৃতীরা তাঁর মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। খবর পেয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করে। রাতেই কলেজে পৌঁছান স্থানীয় বিজেপি নেতারা। পরে নিউটাউনশিপ থানায় পৌঁছে তারা বিক্ষোভে অংশ নেন। অভিযোগ, ঘটনাস্থল কোন থানার অধীনে তা নিয়ে টানাপোড়েনের কারণে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি করে। তবে শনিবার ভোরের দিকে দুর্গাপুর ও নিউটাউনশিপ থানার পুলিশ গিয়ে নির্যাতিতার বয়ান রেকর্ড করে।

শনিবার সকালে হাসপাতালে পৌঁছান নির্যাতিতার বাবা-মা। মেয়ের অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা । নির্যাতিতার বাবা বলেন, “রাত সাড়ে ৯টার সময় এক সহপাঠী মেয়েকে ফুচকা খাওয়ার জন্য বাইরে নিয়ে যায়। তখন ২-৩ জন যুবক মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণ করলে তার সহপাঠী পালিয়ে যায়। এরপর মেয়েকে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয়, মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। ৩ হাজার টাকা না দিতে পারায় মেয়েকে হুমকি দিয়ে রেখে পালায়।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, “কলেজ হোস্টেলে কোনও নিরাপত্তা নেই। সহপাঠীর ভূমিকাও সন্দেহজনক। পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি।” এই ঘটনার পর কলেজে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন মেডিকেল ছাত্রছাত্রীরা। তাদের দাবি, “হোস্টেলে কোনও নিরাপত্তা নেই। সহপাঠীর ওপর বর্বরোচিত হামলার বিচার চাই। দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”

খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাসপাতালে হাজির হন সিপিএম নেতা ও কর্মীরা। কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে উত্তেজনা ছড়ায়। অন্যদিকে, বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘড়ুই ও নির্মল ধারা ঘটনাস্থলে গিয়ে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ফোনে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং চিকিৎসার সবরকম সহায়তার আশ্বাস দেন। বিজেপির যুব নেতা পারিজাত গাঙ্গুলি বলেন, “যে ছাত্রের সঙ্গে মেয়েটি বাইরে গিয়েছিল, তাঁর ভূমিকাও অত্যন্ত সন্দেহজনক। আমরা দ্বিতীয় আরজিকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে দেব না।” ঘটনার জেরে ফের রাজ্যে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিপিএম নেতা সিদ্ধার্থ বসু বলেন, “দুর্গাপুরে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। নেতামন্ত্রীরা উৎসব আর উদ্বোধনে ব্যস্ত, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিপন্ন।” বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘড়ুই বলেন, “ডাক্তারি পড়ুয়াকে গণধর্ষণ — এর চেয়ে লজ্জার কিছু হতে পারে না। রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই।”

অন্যদিকে, জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যা ড. অর্চনা মজুমদার হাসপাতালে গিয়ে নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, “ছাত্রীটি গণধর্ষণের শিকার। তাঁর সহপাঠীর ভূমিকাও সন্দেহজনক। কমিশন নিজস্বভাবে তদন্ত করবে এবং মেয়েটির পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পাশে থাকবে।” ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন। রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য চেয়েছেন। রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “এটি একটি সামাজিক অপরাধ। পুলিশ তদন্ত করছে।” তবে তিনি বিজেপির সমালোচনা করে বলেন, “ওড়িশা ও মণিপুরে নারীদের ওপর নির্যাতন নিয়ে বিজেপি কেন চুপ?” কলেজের ডিরেক্টর সুদর্শনা গাঙ্গুলি জানান, “সন্ধ্যা ৭টা ৫৮ মিনিটে দু’জন বাইরে বেরোয়, পরে আবার ফিরে আসে। কিছু সময় পর পুনরায় বেরোয় এবং ফেরার পরেই ছাত্রীটি নিগ্রহের অভিযোগ জানায়। পুলিশ তদন্ত করছে, আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করছি।”

ডিসি অভিষেক গুপ্তা জানিয়েছেন, “পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। খুব শীঘ্রই দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

---------------

হিন্দুস্থান সমাচার / জয়দেব লাহা




 

 rajesh pande