ঝাড়গ্রাম, ৩ সেপ্টেম্বর (হি.স.): আশ্বিনের শারদ প্রাতে জঙ্গলখন্ডের সাঁওতাল জনজীবনে অন্যতম উৎসব হল “ডাঁশায়” পরব। এই সময় শারদ প্রকৃতি সাধারণ মানুষের কাছে আনন্দের হলেও সাঁওতালদের কাছে এটি অতীতের বীরত্ব ও দুঃখের বার্তাবাহী।
ডাঁশায়ে সাঁওতাল পুরুষেরা মহিলাদের পোশাকে সজ্জিত হয়ে নাচে অংশ নেন। তারা শাড়ি-ধুতি মিশ্রণ পরিধান করে, মাথায় পালক গোঁজে এবং ভুয়াং (আদিবাসী একতারা), তিরি (বাঁশি), বানাম (আরণ্যক বেহালা) ও করতালের তালের সঙ্গে বিষাদের সুরে গান পরিবেশন করেন। মহিলারা সরাসরি নাচে অংশ নেন না, বরং পল্লী ও গ্রামে গান শুনেন।
ভুয়াং হল লাউয়ের খোল ও ফাঁকা বাঁশ দিয়ে তৈরি আরণ্যক একতারা, যা শুধুমাত্র ডাঁশায় পরবে বাজানো হয়। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত এই পরব চলে। ষষ্ঠীর রাতে গুরু, যুবকদের উপস্থিতিতে ভুয়াং পুজো অনুষ্ঠিত করেন। এরপর সাঁওতাল যুবকরা ভুয়াং বাজিয়ে নাচ-গান শুরু করেন। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর দিন পল্লী ও আশেপাশের গ্রামে ঘুরে গান শোনানো হয়। দশমীতে প্রতিটি গ্রামে নিজস্বভাবে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
পরব চলাকালীন বাবুই ঘাসের চাবুক ব্যবহার করে দলের অশুভ প্রভাব দূর করার প্রথা চালু রয়েছে। এছাড়াও, পল্লির ঘর থেকে প্রাপ্ত শস্য ও অর্থ দাঁশায় গুরু ও দলের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
লোকসংস্কৃতির বিশেষজ্ঞ ক্ষিতিশ মাহাতো জানান, ডাঁশায়ের এই রীতি অতীতের বীরত্বগাথা ও আত্মরক্ষার প্রথার সঙ্গে যুক্ত। হুদুর দুর্গা নামের রাজাকে পরাস্ত করতে দেবংশীরা উমা নামের নারী শক্তির সাহায্য নেন। যুদ্ধে দেবংশী পুরুষরা যদুবংশী মহিলাদের হত্যা করত না, ফলে যদুবংশী পুরুষেরা মহিলা সাজে আত্মগোপন করতেন। ভুয়াং বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে এই আত্মরক্ষার ইতিহাসও নিহিত।
হিন্দুস্থান সমাচার / গোপেশ মাহাতো