শিলচর (অসম), ৪ অক্টোবর (হি.স.) : কাছাড় জেলা সদর শিলচরের শিলকুড়িতে নারী ক্ষমতায়ন ও জনমুখী উন্নয়নের এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ চিহ্নিত হলো ‘সখী নিবাস কর্মজীবী মহিলা হস্টেল’-এর শিলান্যাসের মধ্য দিয়ে। রাজ্য সরকারের ‘মিশন শক্তি’ প্রকল্পের আওতায় নির্মীয়মাণ এই হস্টেলের শিলান্যাস করেন রাজ্যের খাদ্য, নাগরিক সরবরাহ ও ভোক্তা সুরক্ষা, খনিজ ও খনিজ পদার্থ এবং বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী কৌশিক রায়। সঙ্গে ছিলেন শিলচরের সাংসদ পরিমল শুক্লবৈদ্য, কাছাড়ের জেলাশাসক মৃদুল যাদব, প্রশাসনিক আধিকারিক, বিশিষ্টজন ও সাধারণ মানুষ।
আজ সখী নিবাস কর্মজীবী মহিলা হস্টেলের শিলান্যাস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে মন্ত্রী কৌশিক রায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার নেতৃত্বাধীন বর্তমান রাজ্য সরকার বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সমানতালে উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাজ্যের প্রতিটি অঞ্চলে সমানভাবে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দেওয়াই সরকারের লক্ষ্য।
কাছাড় জেলায় চলমান বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সোনাবাড়িঘাট বাইপাস সংলগ্ন সংযুক্ত জেলাশাসকের অফিস কমপ্লেক্স এবং শিলচরে নতুন আবর্ত ভবন নির্মাণ কেবল আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তুলবে না, প্রশাসনিক কাজকর্মকেও সহজ করবে। একই সঙ্গে যানজট কমিয়ে শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে উন্নয়নের সেতু তৈরি করবে।
সখী নিবাস প্রসঙ্গে মন্ত্রী কৌশিক রায় বলেন, এটি শুধুমাত্র একটি হস্টেল নয়, এটি হবে নারীর মর্যাদা, নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়নের প্রতীক। মিশন শক্তির মাধ্যমে রাজ্য সরকার সমান সুযোগ তৈরি করতে, নিরাপদ ও সুলভ আবাসনের ব্যবস্থা করতে এবং প্রকৃতার্থে নারী-পুরুষ সমতার পথ প্রশস্ত করতে বদ্ধপরিকর।
মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কৌশিক বলেন, তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে অক্লান্ত নিষ্ঠার ফলেই আজ কাছাড় জেলা জুড়ে এমন রূপান্তরমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সাংসদ পরিমল শুক্লবৈদ্য বলেন, কাছাড়ে এ ধরনের কর্মজীবী মহিলা হস্টেল এই প্রথমবার গড়ে উঠছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার নেতৃত্বকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এমন উদ্যোগ আগে কখনও গৃহীত হয়নি। হস্টেলটি কেবল থাকার জায়গা দেবে না, বরং কর্মজীবী মহিলা ও দূরদূরান্ত থেকে পড়াশোনা করতে আগত ছাত্রীদের জন্য একটি নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে।
সাংসদ বলেন, শিলচরের এনআইটি, অসম বিশ্ববিদ্যালয় ও শিলচর মেডিক্যাল কলেজে অধ্যয়নরত গবেষক, ছাত্রছাত্রী ও কর্মজীবী মহিলাদের জন্য এই হস্টেল বিশেষভাবে উপকারী হবে। এই প্রকল্প হবে নারীকল্যাণ ও ক্ষমতায়নের এক মডেল, যা সমাজে মহিলাদের আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
জেলাশাসক মৃদুল যাদব অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বলেন, ৮.৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মাণ এই হস্টেলে থাকবে ২০টি কক্ষ, যেখানে পিজি ধাঁচের আধুনিক ও সুলভ সুযোগ-সুবিধা থাকবে। বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত মহিলা ও যাঁরা কর্মসূত্রে পরিবার থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হন, তাঁদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আসন দেওয়া হবে। তিনি আশ্বাস দেন, হস্টেলের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিশ্চিত করা হবে। অবস্থানগত দিক থেকেও এটি উপযুক্ত। কারণ এনআইটি, অসম বিশ্ববিদ্যালয় ও শিলচর মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি হওয়ায় মহিলাদের আর দূরে গিয়ে অনিরাপদ জায়গায় থাকার প্রয়োজন হবে না।
জেলাশাসক মৃদুল যাদব জানান, নির্মাণকাজের মেয়াদ ১৮ মাস হলেও মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যেই হস্টেলটি চালু করার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
শুরুতে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানিয়ে সহকারী আয়ুক্ত তথা ভারপ্রাপ্ত কাছাড় জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক দীপা দাস অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ব্যাখা করতে গিয়ে বলেন, মিশন শক্তি প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো মহিলাদের সুরক্ষিত, সুলভ ও মর্যাদাপূর্ণ আবাসন প্রদান করা। এর মাধ্যমে রাজ্য সরকার মহিলাদের সামাজিক-অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং প্রকৃত লিঙ্গসমতার পথে অগ্রসর হতে চাইছে।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলাশাসক তথা সমাজকল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিলিস হ্রাংচল সহ জেলার বহু প্রশাসনিক আধিকারিক ও বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস