গুয়াহাটি, ৬ অক্টোবর (হি.স.) : শিলচর শহরে যানজট সমস্যা সমাধানে এলিভেটেড করিডোর, অসমের মেডিক্যাল কলেজ এবং ডেন্টাল কলেজের সংশোধনী (প্রথম বর্ষের এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সে ভর্তি) বিধি, সরকারি কৰ্মচারী, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, স্বাস্থ্যখণ্ডের পরিকাঠামো, গ্ৰামীণ সংযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, অরুণোদয় ৩.০ প্রকল্পের সম্প্ৰসারণ সমেত একাধিক জনহিতকর প্ৰস্তাবে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিলমোহর পড়েছে, জানিয়েছন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
আজ সোমবার দিশপুরে অবস্থিত লোকসেবা ভবনে মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মার পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠক। বৈঠক শেষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা জানান, শিলচর শহরে যানজট সমস্যা সমাধানে একটি এলিভেটেড করিডোর নির্মাণ প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্ৰিসভা। শিলচরের ক্যাপিটাল পয়েন্টের কাছে ট্রাংক রোড থেকে শহরের রাঙ্গিরখাড়ি পয়েন্ট পর্যন্ত (৩০৬ নম্বর জাতীয় সড়ক) একটি এলিভেটেড করিডোর (ফ্লাইওভার) নির্মাণের জন্য (ফেজ-১) এসওপিডি-জি-র অধীনে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে জমি অধিগ্রহণ বাবদ ১০০ কোটি টাকা সহ মোট ৫৬৪.৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হবে ৩.৫ কিলোমিটার।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এলিভেটেড করিডোর প্রকল্পটি শিলচর শহরের প্রাণকেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্ন, নিরাপদ এবং দক্ষ চলাচল প্রদান করবে, নাগরিকদের যাতায়াতের সময় কমিয়ে দেবে এবং যানবাহন নির্গমন হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। এর ফলে পরিষ্কার এবং সবুজ শহুরে গতিশীলতা সমর্থন করবে, বলেন ড. শর্মা।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্ৰী জানান, রাষ্ট্ৰীয় পেনশন প্রকল্পের অধীনস্থ সরকারি কৰ্মচারীদের জন্য নতুন ইউনিফাইড পেনশন প্রকল্পে অনুমোদন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই প্রকল্পের অধীনে অবসর গ্রহণের পর নিশ্চিতভাবে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ পেনশন হিসেবে লাভ করবেন সংশ্লিষ্টরা। তিনি জানান, পারিবারিক পেনশন হবে মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত প্রাপ্ত পেনশনের ৬০ শতাংশ। এছাড়া অবসরের সময় এককালীন ভাতা হিসেবে প্ৰত্যেক সার্ভিস ইয়ারের মাসিক মূল বেতন এবং মহার্ঘ্যভাতার ১০ শতাংশ প্ৰদান করা হবে।
মুখ্যমন্ত্ৰী জানান, আগামীকাল (৭ অক্টোবর) থেকে চালু হবে অরুণোদয় ৩.০ প্রকল্প। অসম রাজ্য গ্ৰামীণ জীবিকা অভিযানের অধীনে ১০,১৮৬ জন কমিউনিটি ক্যাডারকে অরুণোদয় ৩.০ প্রকল্পের সুবিধাভোগী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
অসম স্থিতিস্থাপক গ্ৰামীণ সেতু কৰ্মসূচির বলে গ্ৰামাঞ্চলে সংযোগ নিশ্চিত করতে ৪,৮১৬.৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক সেতু নিৰ্মাণ প্রস্তাবে মন্ত্রিসভা অনুমোদন জানিয়্ছে। এই প্ৰকল্পের অধীনে ৩৫০টি নতুন সেতু নিৰ্মাণ, ১০৩টি সেতুকে প্রশস্ত করা, ৬৯৪টি ভেঙে পরা বা বিপদসংকুল সেতুর পুনর্নির্মাণ করা এবং ৩৭টি বিদ্যমান সেতুর পরিচৰ্যা করা হবে।
স্বাস্থ্যখণ্ডে বিশাল বিনিয়োগ করা হবে। সে অনুযায়ী ৪,২৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আসাম স্টেট টার্সিয়ারি হেলথকেয়ার অগমেন্টেশান প্ৰকল্পের মাধ্যমে গৌহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে নতুন ভবন নিৰ্মাণ, পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং চিকিৎসা সেবার গুণগত মান বৃদ্ধি করা হবে। গৌহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি দেশের অন্যতম উৎকৃষ্ট হাসপাতাল হবে, বলেন মুখ্যমন্ত্ৰী।
এভাবে শিক্ষকদের সুবিধা নিশ্চিতকরণ প্রকল্প অনুযায়ী ধুবড়ি, দক্ষিণ শালমারা-মানকাচর এবং চর অঞ্চলে নিয়োজিত শিক্ষিকারা পাঁচ (৫) বছর পর নিজেদের গৃহজেলায় বদলি করার প্রস্তাবে অনুমোদন জানানো হয়েছে। সমগ্ৰ শিক্ষা অভিযানের অধীনে তিন (৩) বছর সেবা সম্পূৰ্ণকারী শিক্ষকদের সরকারি শিক্ষক হিসেবে নিয়মিত করা হবে।
আরেক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তামিলনাড়ু দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারবর্গকে আৰ্থিক সাহায্য প্রদান করতে রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন মিলেছে। তামিলনাড়ুতে সংঘটিত মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত নয় (৯)-জনের পরিবারবর্গকে মুখ্যমন্ত্ৰীর ত্রাণ তহবিল থেকে পাঁচ (৫) লক্ষ টাকা করে আৰ্থিক সাহায্য প্ৰদান করা হবে।
তাছাড়া রাজ্যের শিক্ষাৰ্থীদের জন্য সাইকেল এবং মাশুল মুক্তি প্রকল্প অনুয়ায়ী রাজ্য বিদ্যালয়ের নবম শ্ৰেণির ৩,১১,৬১৪ জন শিক্ষার্থীকে সাইকেল বিতরণ করা হবে।
প্ৰজ্ঞা ভারতী প্রকল্পের অধীনে স্নাতক প্ৰথম বৰ্ষের ১,৭৫,৮১৭ জন শিক্ষার্থীর ভৰ্তি মাশুল পরিশোধের জন্য ১২৬.৯৭ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে ক্যাবিনেট।
অস্থায়ী কৰ্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করার প্রস্তাবেও সিলমোহর পড়েছে। ১,২৩১ জন মাস্টাররোল, অস্থায়ী এবং ফিক্সড পে-প্রাপক কৰ্মচারীদের ন্যূনতম বেতন প্ৰদান করা হবে। এছাড় সাধারণ প্রশাসন বিভাগের ৯৯ জন চতুৰ্থ শ্রেণির কৰ্মচারীর ফিক্সড পে ১৬,৪০০ টাকায় বৃদ্ধিতে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
আসাম মেডিক্যাল কলেজ এবং ডেন্টাল কলেজে ভৰ্তি বিধি, ২০১৭ সংশোধন অনুমোদিত হয়েছে। এর অধীনে অসমের স্থায়ী বাসিন্দা, রাজ্যের বাইরে অধ্যয়নরত হলেও তাঁরা অসম কোটায় ভৰ্তির জন্য যোগ্য হবে। অরুণাচল প্ৰদেশ মরাণ জনগোষ্ঠীও এই কোটার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। ওবিসি/এমওবিসি (এনসিএল) প্ৰাৰ্থীরা আবেদন না করলে প্ৰথম কাউন্সেলিঙের আগে দাখিল করার অনুমতি পাবেন। বলা হয়েছে, ২০২৬ সাল থেকে অরুণাচল প্ৰদেশে বসবাসকারী মরাণ জনগোষ্ঠী অসমে বসবাসকারী মরাণদের সমান অধিকার পাবেন।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস