সুস্থায়ী পর্যটন, এক-ই সঙ্গে সমৃদ্ধি
নয়াদিল্লি, ৬ অক্টোবর (হি.স.): ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত বলেছেন , পর্যটন মানে শুধু ভ্রমণ নয় - এটি মানুষের সঙ্গে মানুষের সেতু গড়ে তোলে, জীবিকা নির্বাহের একটি উৎস হয় আর এর মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতি বিশ্বের
সুস্থায়ী পর্যটন, এক-ই সঙ্গে সমৃদ্ধি


নয়াদিল্লি, ৬ অক্টোবর (হি.স.): ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত বলেছেন , পর্যটন মানে শুধু ভ্রমণ নয় - এটি মানুষের সঙ্গে মানুষের সেতু গড়ে তোলে, জীবিকা নির্বাহের একটি উৎস হয় আর এর মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতি বিশ্বের সঙ্গে আদান-প্রদান করা হয়। পর্যটন এবং এর সুস্থায়ী রূপান্তরের জন্য নিবেদিত এই বিশ্ব পর্যটন দিবসে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সিদ্ধান্তমূলক নেতৃত্বে ভারতে পর্যটনের আবহ কীভাবে পুনর্নিমিত হয়েছে তা স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ। যে পর্যটন একসময় মৌসুমী এবং বিক্ষিপ্তভাবে সাধিত হত তা আজ জাতীয় উন্নয়নের একটি পরিকল্পিত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সুস্থায়ী চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে।

এই পরিবর্তনটি বিমূর্ততায় নয় বরং জীবনের স্পর্শে পরিমাপ করা হয়। ২০২৫ সালের জুন নাগাদ, দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন শিল্পে ১৬.৫ লক্ষ পর্যটক, বহির্গামী ভ্রমণ ৮৪.৪ লক্ষ এবং পর্যটন থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ৫১,৫৩২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। শুধুমাত্র ২০২৩-২৪ সালে, এই ক্ষেত্রটি জিডিপিতে ১৫.৭৩ লক্ষ কোটি টাকা অবদান রেখেছে - যা অর্থনীতির পাঁচ শতাংশেরও বেশি - এবং ৮৪০ লক্ষেরও বেশি কর্মসংস্থানকে সমর্থন করেছে। এই পরিসংখ্যানের পেছনে রয়েছে কারিগরদের নতুন বাজার খুঁজে বের করা, পরিবারগুলির হোমস্টে খোলা ও গাইড, যানচালক এবং ছোট ব্যবসাগুলির স্থিতিশীল চাহিদা।

এই অগ্রগতির মূলে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় বিশ্বাস যে পর্যটনকে হাল্কাভাবে না দেখে জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে দেখা উচিত। তাই নতুন নতুন বিমানবন্দর, আধুনিক রেলপথ, নবনির্মিত মহাসড়ক এবং অভ্যন্তরীণ জলপথের মাধ্যমে পরিকাঠামো এবং যোগাযোগ সম্প্রসারিত করা হয়েছে। উড়ান প্রকল্পের ফলে বিমান ভ্রমণ ছোট শহরগুলির নাগালের মধ্যে চলে এসেছে।

ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং তীর্থযাত্রীদের সার্কিটের সঙ্গে প্রান্তিক এলাকাগুলির উন্নত সংযোগ লক্ষ লক্ষ এমন মানুষের জন্য ভ্রমণকে সম্ভব করে তুলেছে, যারা একসময় খরচ বা দূরত্বের কারণে বাদ পড়েছিল। পর্যটন এইভাবে আজ নিছকই একটি নাগরিক বিলাসিতা নয়, বরং সুষম আঞ্চলিক উন্নয়নের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

পর্যটন গন্তব্য উন্নয়নও এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পরিচালিত হয়েছে। ‘স্বদেশ দর্শন ২.০’ এবং ‘প্রসাদ’-এর মতো প্রোগ্রামগুলি স্থায়িত্ব এবং সাংস্কৃতিক অখণ্ডতাকে ঘিরে রচিত হয়েছে। গন্তব্য ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলির প্রবর্তন সরকার, বেসরকারি সংস্থাগুলি এবং স্থানীয় জনগণকে একসূত্রে গেঁথে, নিশ্চিত করে যাতে সম্পদগুলি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিচালিত হবে এবং সুবিধাগুলি সুষমভাবে প্রবাহিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী ভারত কীভাবে বিশ্বের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করবে তার পুনর্কল্পনাও করেছেন। একটি পুনরুজ্জীবিত অবিশ্বাস্য ভারত পোর্টাল, বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে অংশীদারিত্ব এবং ডিজিটাল গল্প বলার নতুন রূপ ক্ষুদ্রতম অপারেটরদের - গ্রামের হোস্ট, হোমস্টে, সাংস্কৃতিক উদ্যোক্তাদের - বিশ্বব্যাপী দর্শকদের কাছে অ্যাক্সেস দিয়েছে। প্রযুক্তি কেবল বিপণনের জন্য নয়, ডেটা-চালিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভঙ্গুর স্থানগুলিকে রক্ষা করার জন্যও একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

তবে, সুস্থায়ী পর্যটন এই রূপান্তরের সবচেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বৃহত্তর জীবনশৈলী আন্দোলন - পরিবেশের জন্য জীবনশৈলী - এর উপর ভিত্তি করে জীবনযাত্রার জন্য ভ্রমণ চালু করেছেন, যা পর্যটনের মধ্যেই স্টুয়ার্ডশিপ বা তত্ত্বাবধানকে অন্তর্ভুক্ত করে। স্বল্প-প্রভাবশালী গ্রামীণ অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে পরিবেশ-সংবেদনশীল পরিকাঠামো এবং দায়িত্বশীল তীর্থযাত্রা ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত, ভ্রমণ যাতে ক্ষয় না হয় তার পরিবর্তে লালন-পালন নিশ্চিত করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ভারতের জি-২০ সভাপতিত্বের অধীনে, গোয়া পথচিত্রটি সুস্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী পর্যটনকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য উন্নত করা হয়েছিল, যার মধ্যে সবুজ বৃদ্ধি, দক্ষতা, ডিজিটালাইজেশন এবং অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের জন্য সহায়তাকে বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা হয়েছে।

আর্থিক সংস্কারগুলি এই কাঠামোগত পরিবর্তনগুলিকে আরও জোরদার করেছে। সাম্প্রতিকতম – ১০০০ টাকা থেকে ৭৫০০ টাকার মধ্যে হোটেলরুমের উপর ৫ শতাংশ জিএসটি হ্রাস - মধ্যবিত্ত ভ্রমণকারীদের উৎসাহিত করার জন্য একটি সচেতন পদক্ষেপ ছিল যাদের তীর্থযাত্রা, সপ্তাহান্তে ভ্রমণ এবং গ্রামীণ অবস্থান এই ক্ষেত্রের বেশিরভাগ অংশকে টিকিয়ে রাখে। ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট প্রত্যাহার নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত থাকলেও, বৃহত্তর প্রভাব স্পষ্ট : ক্রয়ক্ষমতার সামর্থ্যকে প্রসারিত করেছে। আরও বেশি ভ্রমণকারী মানে হোটেলগুলি পূর্ণ থাকবে, স্থানীয় পরিষেবার চাহিদা বাড়বে, আর কারিগর ও শিল্পোদ্যোগীদের জন্য নতুন সুযোগ। প্রধানমন্ত্রী মোদী যেমন জোর দিয়ে বলেছেন, সুলভ মূল্য শুধু একটি অর্থনৈতিক শক্তি নয়, বরং একটি গণতান্ত্রিক নীতি, যা ভ্রমণকে গুটিকয়েক লোকের সুযোগের চাইতে বেশি করে অনেকের অধিকারে রূপান্তরিত করে তোলে।

তবুও প্রধানমন্ত্রী আমাদের বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন যে কেবল নীতিই যথেষ্ট নয়। রূপান্তর সমাজকে হৃদয়ে রেখে এগুতে চায়। এই কারণেই কর্মসূচিগুলি স্থানীয় যুবক-যুবতীদের গাইড হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়, পরিবেশ-বান্ধব আতিথেয়তাকে উৎসাহিত করে, বৃহত্তর বাজারে পৌঁছাতে কারিগরদের সাহায্য করে এবং তীর্থযাত্রীদের পরিধির পবিত্রতা রক্ষা করে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে পর্যটন উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয় না বরং যাদের জীবনকে এটি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে তাঁদেরকে নিয়েই তৈরি করা হয়।

চ্যালেঞ্জগুলি রয়ে গেছে - পরিকাঠামোগত বাধা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপ্রবণতা, আধুনিক ভ্রমণকারীদের ক্রমবর্ধমান প্রত্যাশা - কিন্তু আজ ভারতের কাছে সাড়া দেওয়ার জন্য সরঞ্জাম রয়েছে। শ্রী মোদীর নেতৃত্বে, আমরা এই পরীক্ষাগুলি মোকাবিলা করার জন্য প্রতিষ্ঠান, অর্থায়ন মডেল এবং প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করেছি।

সামনের দিকে তাকালে, তিনটি অগ্রাধিকার আমাদের পথ দেখাবে। আমাদের স্থায়িত্ব আরও গভীর করতে হবে, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে প্রবৃদ্ধি সর্বদা পরিবেশগত লভ্যাংশ প্রদান করে। স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলিতে বিনিয়োগ করে আমাদের সুবিধাগুলিকে গণতান্ত্রিক করতে হবে এবং আমাদের শাসন ও তথ্যকে শক্তিশালী করতে হবে যাতে প্রবাহ বিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচালিত হয় এবং সম্পদ সংরক্ষণ করা হয়।

ভারতের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে যখন সুসংগত নীতি, আর্থিক বিচক্ষণতা এবং সম্প্রদায়ের প্রবৃত্তি দূরদর্শী নেতৃত্বে সমন্বিত হয়, তখন রূপান্তর বাস্তব। এই বিশ্ব পর্যটন দিবসে, আসুন আমরা দায়িত্বশীলভাবে ভ্রমণ করার, স্থানীয় জীবিকা নির্বাহের জন্য এবং প্রতিটি ভ্রমণপথে উন্নত ভারতের প্রতিশ্রুতিকে জীবন্ত রাখার প্রতিশ্রুতি দিই। সঠিকভাবে লালিত পর্যটন কেবল আমাদের অর্থনীতির একটি স্তম্ভই হবে না বরং ভারতের সভ্যতার নীতিমালার জীবন্ত সাক্ষ্য হবে - উন্মুক্ত, স্থিতিস্থাপক এবং আতিথেয়তামূলক। সামনের পথ দীর্ঘ, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে, আমরা এই বাহনটি তৈরি করেছি। এখন আমাদের এটিকে যত্ন, সাহস এবং উদ্দেশ্যের একটি ভাগাভাগি চেতর সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে।

সোমবার এই বিষয়ে জানিয়েছে ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি )।

---------------

হিন্দুস্থান সমাচার / ফারজানা পারভিন




 

 rajesh pande