দুর্গাপুর, ৭ অক্টোবর (হি.স.) : ভারী বর্ষার পরেও জল সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যত লাটে উঠেছে দামোদর উপত্যকার প্রকল্প। ভরা শ্রাবণেও কখনও জলের টান, আবার অতিবৃষ্টিতে ডিভিসির মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে জলের অতিবর্ষণ এক চিরচেনা চিত্র। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের পরেও প্রশ্ন রয়ে যায়, জলধারণ ও সংরক্ষণের স্থায়ী সমাধান কোথায়? ডিভিসির প্রস্তাবিত ঝাড়খণ্ডের বলপাহাড়ী জলাধার প্রকল্প কার্যত বিশ বাঁও জলে।
দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) গঠিত হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ, জল সংরক্ষণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে। সংস্থার পরিকল্পনা অনুযায়ী সাতটি জলাধারের প্রস্তাব থাকলেও বাস্তবে গড়ে উঠেছে চারটি— পাঞ্চেত, মাইথন, কোনার ও তিলাইয়া। কিন্তু বছর বছর অতিরিক্ত জল ছাড়তে হচ্ছে, কারণ নতুন কোনও জলাধার গড়ে ওঠেনি।
২০১২ সালে ডিভিসি ঝাড়খণ্ডের গিরিডি জেলার বলপাহাড়ীতে প্রায় ৭০০ একর জমির ওপর নতুন জলাধার তৈরির পরিকল্পনা নেয়। নির্ধারিত হয় ২,৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয়। জলাধারে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার একরফুট জল সেচের জন্য এবং ৩ লক্ষ ৩০ হাজার একরফুট জল শিল্প ও নগরায়নের জন্য সংরক্ষণের কথা ছিল। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের প্রায় ১ লক্ষ ৩৬ হাজার একর জমি উপকৃত হওয়ার কথা।
কিন্তু বাস্তবায়ন আজও অধরা। জমি অধিগ্রহণ ও স্থানীয় জনজাতি গ্রামের পুনর্বাসন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ডিভিসি চেয়ারম্যান সুরেশ কুমারের বক্তব্য— “বলপাহাড়ী জলাধারের জন্য কেন্দ্রীয় জল কমিশন (গুয়াহাটি) নতুন করে সার্ভে করছে। রিপোর্ট জমা পড়লেই ডিপিআর প্রস্তুতের কাজ শুরু হবে।”
অন্যদিকে, দুর্গাপুর ব্যারেজের জলধারণ ক্ষমতা ক্রমশ কমছে, পলি জমে নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি, হাওড়া ও পূর্ব বর্ধমান জেলাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতি ঘন ঘন তৈরি হচ্ছে। ডিভিআরআরসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মাইথনে জলস্তর ৪৮৪ ফুট ও পাঞ্চেতে ৪১৪ ফুটের কাছাকাছি। সোমবার দু’টি জলাধার থেকেই ৫৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়তে হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বলপাহাড়ী প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মাইথন জলাধারের আয়ু আরও ৬০ বছর বাড়বে। পাশাপাশি শিল্প, কৃষি ও পানীয় জলের জোগানেও মিলবে স্থায়ী স্বস্তি।
গত কয়েক বছরে বর্ষার অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের ফলে রাজ্যের কৃষক ও শিল্প উভয় ক্ষেত্রেই জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে। আবার অতিবৃষ্টিতে প্লাবনও নিত্যসঙ্গী। ২০১৮ ও ২০২০ সালে দুর্গাপুর ব্যারেজে লকগেট বিপর্যয়ে রাজ্যের কৃষি, শিল্প ও মৎস্যচাষ বড় ক্ষতির মুখে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতেই উত্তরবঙ্গ সফরের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধারের পলি সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে শুধু জল ছাড়লেই হবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদি জল সংরক্ষণ ব্যবস্থা জরুরি।” কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রক, জল কমিশন ও তিন রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে গতবছর বলপাহাড়ী জলাধার নিয়ে বৈঠক হয়। কিন্তু প্রকল্প আজও শুরু হয়নি। ফলে পশ্চিমবঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও কৃষির জন্য জল সংরক্ষণ— দুটোই এখনও ‘বিশ বাঁও জলে’।
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / জয়দেব লাহা