
সাব্রুম (ত্রিপুরা), ১৭ নভেম্বর (হি.স.) : দক্ষিণ ত্রিপুরার লুধুয়া চা বাগান আন্তর্জাতিক বাজারে জৈব চা রপ্তানির নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। পশ্চিম এশিয়া, ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাগানটির জৈব চা রপ্তানি হচ্ছে। তবে রপ্তানিমুখী উৎপাদনের কারণে স্থানীয় বাজারে এই চায়ের প্রাপ্যতা অত্যন্ত কম, ফলে সাধারণ ক্রেতারা স্থানীয়ভাবে তৈরি এই সুগন্ধি চায়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
১৯১৯ সালে চন্দ্রপুর চা কোম্পানির ব্যবস্থাপক এ.কে. গুহ-এর উদ্যোগে লুধুয়ার চা চাষ শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে এটি শ্রমিক সমবায় হিসেবে নিবন্ধিত হয়। কলকাতা-ভিত্তিক ফেয়ার ট্রেড অর্গানাইজেশনের সহায়তায় ১৯৯০ সালে বাগানটি সম্পূর্ণ জৈব উৎপাদনে রূপান্তরিত হয় এবং পরবর্তীতে আইএমও-র সার্টিফিকেশন পায়।
বর্তমানে বাগানের প্রায় ৯০ শতাংশ উৎপাদন রপ্তানিতে চলে যায়। সীমিত উৎপাদন ও পূর্বনির্ধারিত চুক্তির কারণে স্থানীয় বাজারে মাত্র ১০ শতাংশ চা সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে। জৈব সার ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে উৎপাদিত চায়ের গুণমান আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
একসময় বাগানের জমি ছিল ১,২৫২ একরের বেশি। সময়ের সঙ্গে কিছু জমি দখলে চলে গেলেও মান বজায় রাখতে সমবায়টি আপস করেনি। পর্যটন উন্নয়নের লক্ষ্যে ২১.৯১ একর জমি রাজ্য সরকারকে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মোট জমি ৩৯৮.৯৪ একর, যার মধ্যে ৯৫.৩৩ একর চা চাষের আওতায়।
বছরে ৪–৪.৫ লক্ষ কেজি সবুজ পাতা থেকে প্রায় ৯০,০০০–১.০৫ লক্ষ কেজি চা উৎপাদিত হয়। জৈব সিটিসি, গ্রিন টি ও অর্থোডক্স—এই তিন ধরনের চা প্রস্তুত করা হয়।
সমবায়ের ব্যবস্থাপক সুজিত শীল জানান, শ্রমিকদের নিষ্ঠায় জৈব উৎপাদন বজায় থাকলেও আর্থিক সমস্যার কারণে বড় পরিসরে পুনঃরোপণ সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ৩২ জন স্থায়ী ও ১৩০ জন অস্থায়ী শ্রমিক বাগানে কাজ করছেন।
রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বাগানের একাংশে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলে লুধুয়ার ব্র্যান্ড মূল্য বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
হিন্দুস্থান সমাচার / গোবিন্দ দেবনাথ