
আগরতলা, ১৯ নভেম্বর (হি.স.) : মর্মান্তিকভাবে মৃত দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী দীপান্বিতা পালের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে বুধবার সকালে তাদের বাড়িতে পৌঁছান প্রদেশ বিজেপির সহ-সভাপতি সুবল ভৌমিক। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের ডেপুটি মেয়র মনিকা দাস দত্ত। দু’জনেই শোকস্তব্ধ পরিবারের সদস্যদের পাশে দাঁড়িয়ে সহমর্মিতা জানান।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেন বিজেপি নেতৃত্ব। দীপান্বিতার অকালমৃত্যুতে গোটা মহল্লায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিবারের সদস্যরা এদিন বিজেপির প্রতিনিধিদ্বয়কে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন এবং বিদ্যালয়ের অবহেলার অভিযোগ জানান।
সমবেদনা জ্ঞাপন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সুবল ভৌমিক বলেন, “এই হৃদয়বিদারক ঘটনার সান্ত্বনার কোনও ভাষা আমার কাছে নেই। রাজ্যবাসীকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে এই মৃত্যু। একটি নিষ্পাপ প্রাণ এভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে—এটা ভাবতেই কষ্ট হয়।” তিনি আরও বলেন, “বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আরও কিছুটা যত্নবান ও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করি।”
ডেপুটি মেয়র মনিকা দাস দত্তও বলেন, “এ ধরনের ঘটনা কোনওভাবেই কাম্য নয়। আমরা আশা করি, উচ্চ পর্যায়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের মধ্যে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকেরই দাবি, বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা ও শিক্ষার্থীদের প্রতি পর্যাপ্ত নজরদারি নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি দফতরে যখন বন্দে ভারত অনুষ্ঠানের কর্মসূচি চলছে, ঠিক তখনই শিক্ষিকার অবহেলায় ঘটে গেল মর্মান্তিক ঘটনা। আগরতলাস্থিত ক্ষুদিরাম বসু ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী, সাত বছরের দীপান্বিতা পাল অমানবিক আচরণের শিকার হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। বাড়ি যোগেন্দ্রনগরের বনকুমারি এলাকায়।
মৃত শিশুর পিতা দেবাশীষ পাল অভিযোগ করে জানান, গত ৯ নভেম্বর স্কুলের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষিকা তাঁর মেয়েকে দীর্ঘক্ষণ রোদে দাঁড় করিয়ে রাখেন। অসুস্থতা অনুভব করে দীপান্বিতা যখন শিক্ষিকাকে জানায়, তখন শিক্ষিকা বলেন—“শীতের দিন, রোদে দাঁড়ালে কিছু হবে না।” কিছুক্ষণ পরই মাথা ঘুরে অচেতন হয়ে পড়ে ছাত্রীটি।
স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের খবর দিলে তাঁরা ছুটে এসে দীপান্বিতাকে জিবিপি হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসকেরা জানান, শিশুটি সানস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে এবং শরীরের এক পাশ প্যারালাইসড হয়ে গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার পুনরায় স্ট্রোক হলে অবস্থা আরও জটিল হয়ে ওঠে। অবশেষে মঙ্গলবার সকালে মৃত্যুর কাছে হেরে যায় সে।
অভিযোগ, স্কুলের পক্ষ থেকে প্রথমদিকে কেউই হাসপাতালে এসে খোঁজ নেননি। পরে জেলা শাসককে জানানো হলে কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা হাসপাতালে যান। মেয়েকে হারানোর বেদনায় বিধ্বস্ত পিতা দেবাশীষ পালের অভিযোগ—“সেদিন শিক্ষিকা যদি আমার মেয়েকে রোদ থেকে সরিয়ে ছায়ায় এনে দিতেন, তাহলে আজ আমার কোল খালি হত না।”
হিন্দুস্থান সমাচার / গোবিন্দ দেবনাথ