
কলকাতা, ২০ নভেম্বর (হি.স.): ১৭৫-তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় কয়লা ও খনিজ মন্ত্রী জি. কিষেণ রেড্ডি বৃহস্পতিবার “Unearthing the Past, Shaping the Future: 175 Years of GSI” শীর্ষক দুই দিনের আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধন করেন। এই ভূ-বিজ্ঞান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খনিজ মন্ত্রকের সচিব পীযূষ গোয়েল, রাজস্থান সরকারের খনিজ ও পেট্রোলিয়াম দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি টি. রবিকান্ত, জিএসআই-এর মহাপরিচালক অসিত সাহা, জিএসআই পশ্চিমাঞ্চলের এডিজি ও এইচওডি বিজয় ভি. মুগল এবং অন্যান্য প্রবীন আধিকারিকরা। এই বিষয়ে জানিয়েছে ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি)।
পিআইবি–র তরফে জানানো হয়েছে, অনুষ্ঠানের সূচনায় বন্দে মাতরম-এর পরিবেশনা এবং দেবী সরস্বতীর বন্দনায় দিনটির আনুষ্ঠানিকতা একটি মরমী আবহ তৈরি করে।
এই সেমিনারে অংশ নেয় ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে, জিওসায়েন্স অস্ট্রেলিয়া-সহ বিশ্বের বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক সংস্থা এবং ভারতের ও বিদেশের শীর্ষ ভূ-বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা। এই সেমিনারের উদ্দেশ্য বৈচিত্র্যময় টেকনিক্যাল সেশন, সাম্প্রতিক গবেষণা, বৈজ্ঞানিক বিনিময় ও অগ্রদৃষ্টিসম্পন্ন ভূ-বিজ্ঞান আলোচনার ভিত্তি শক্ত করা।
নিজের বক্তব্যে কিষেণ রেড্ডি ভারতের বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন, শিল্পোন্নয়ন ও জাতীয় স্থিতিশীলতায় জিএসআই-এর ১৭৫ বছরের অবদানকে উচ্চ প্রশংসা করেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ অনুসন্ধান সম্প্রসারণ, অত্যাধুনিক AI/ML–ভিত্তিক ভূ-বিজ্ঞান প্রযুক্তি গ্রহণ এবং আত্মনির্ভর ভারত–এর লক্ষ্যে দেশের দুর্যোগ–প্রস্তুতি কাঠামো আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দেন। Viksit Bharat@2047–এর দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি অংশগ্রহণকারীদের জাতীয় অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বৈশ্বিক সুস্থায়ী উন্নয়ন ও যৌথ বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে অবদান রাখতে আহ্বান জানান।
নিজের বক্তব্যে খনিজ মন্ত্রকের সচিব পীযূষ গোয়েল বলেন, ভারতের দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটি সুস্থায়ী, আত্মনির্ভর, প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সক্ষম খনিজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, খনিজ মন্ত্রক জিএসআই–সহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় অগ্রাধিকারের সঙ্গে আরও সুসংহতভাবে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।
জিএসআই-এর মহাপরিচালক ও সেমিনারের পেট্রন অসিত সাহা তাঁর বক্তব্যে জিএসআই-এর ১৭৫ বছরের ভূ-বিজ্ঞান ঐতিহ্য তুলে ধরেন এবং মন্তব্য করেন যে, দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক ভূ-বিজ্ঞান প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যৎ দাবি করে আরও উন্নত অনুসন্ধান প্রচেষ্টা, স্মার্ট প্রযুক্তি এবং তীক্ষ্ণ বৈজ্ঞানিক অন্তর্দৃষ্টি। তিনি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ খনিজের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে কনসেপ্ট–চালিত অনুসন্ধান, উন্নত ভূগর্ভস্থ ইমেজিং এবং জনস্বার্থ–নির্ভর ভূ-বিজ্ঞানকে আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন। অসিত সাহা জিএসআই-এর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন—অনুসন্ধান ত্বরান্বিত করা, সমন্বিত গবেষণা গভীরতর করা, দেশের খনিজ সম্পদভাণ্ডার সমৃদ্ধ করা এবং ভারতের দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ নিরাপত্তা ও সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে সহায়তা করাই আগামী দিনের অগ্রাধিকার।
সেমিনার কমিটির চেয়ারম্যান ও জিএসআই পশ্চিমাঞ্চলের এডিজি ও এইচওডি বিজয় ভি. মুগল তাঁর স্বাগত ভাষণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভূ-বিজ্ঞানী, গবেষক, বিশিষ্ট অতিথি ও প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান। তিনি বলেন, এই সেমিনার শুধু জিএসআই-এর ১৭৫ বছরের ঐতিহ্য উদযাপনই নয়, বরং উন্মুক্ত বৈজ্ঞানিক বিনিময়, নতুন ভাবনার অনুপ্রেরণা এবং আগামী দশকের স্পষ্ট ও সমন্বিত ভূ-বিজ্ঞান অগ্রাধিকারের পথ সুগম করবে।
রাজস্থান সরকারের খনিজ ও পেট্রোলিয়াম দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি টি. রবিকান্ত সুস্থায়ী খনিজ উন্নয়নে রাজস্থানের অঙ্গীকার তুলে ধরে জাতীয় সম্পদ–নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গবেষণা, উদ্ভাবন ও সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সেমিনারের পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিওসায়েন্স প্রতিষ্ঠান, শিল্প–সহযোগী ও প্রযুক্তি–উদ্ভাবকদের থিম্যাটিক প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন। তিনি বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করে প্রদর্শিত উদ্ভাবনগুলির প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল জিএসআই-এর সঙ্গে ভারতের দুটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান - আইআইটি মুম্বই এবং আইআইটি খড়গপুর–এর মধ্যে একটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর, যার ফলে যৌথ গবেষণা পোক্ত হবে এবং এক-ইসঙ্গে আগামীতে ভূ-বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিকাশ ত্বরান্বিত হবে। উপলক্ষে প্রকাশিত হয় অ্যাবস্ট্র্যাক্ট ভলিউম, থিম্যাটিক ম্যাপ এবং জিএসআই-এর গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনাগুলি।
আন্তর্জাতিক সেমিনারের প্রথম দিনটি জিএসআই-এর ১৭৫ বছরের ঐতিহ্যকে স্মরণ করার সঙ্গে সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, নেক্সট–জেন অনুসন্ধান প্রযুক্তি, জিওডাইনামিক্স, জলবায়ু সহনশীলতা, ডিজিটাল ও কম্পিউটেশনাল উদ্ভাবন, এবং ভূ-বিজ্ঞান–নির্ভর সুস্থায়ী উন্নয়ন–সহ বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রদৃষ্টিসম্পন্ন আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ সৃষ্টি করে। আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্য এবং বিকশিত ভারতের দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আলোচনাগুলি ভূ-বিজ্ঞানকে জাতীয় সম্পদ–নিরাপত্তা, পরিষ্কার শক্তিতে রূপান্তর এবং পরিবেশগত সহনশীলতা গঠনে এক অনিবার্য স্তম্ভ হিসেবে তুলে ধরে।
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / সৌম্যজিৎ