বিধানসভা নির্বাচনের আগে কয়লাকান্ডে সক্রিয়, দুর্গাপুর-ঝাড়খন্ড সহ ৪০ টির বেশী জায়গায় একযোগে ইডি'র তল্লাশী অভিযান
দুর্গাপুর, ২১ নভেম্বর (হি. স.) : রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে আবার সক্রিয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। শুক্রবার কয়লাপাচার কান্ডে রাজ্যের কলকাতা সহ দুর্গাপুর, আসানসোল, পুরুলিয়া ও ঝাড়খন্ডের ৪০ টি জায়গায় একযোগে অভিযান চালাল ইডি আধিকারিকরা। যার মধ
বিধানসভা নির্বাচনের আগে কয়লাকান্ডে সক্রিয়, দুর্গাপুর-ঝাড়খন্ড সহ ৪০ টির বেশী জায়গায় একযোগে ইডি'র তল্লাশী অভিযান


দুর্গাপুর, ২১ নভেম্বর (হি. স.) : রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে আবার সক্রিয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। শুক্রবার কয়লাপাচার কান্ডে রাজ্যের কলকাতা সহ দুর্গাপুর, আসানসোল, পুরুলিয়া ও ঝাড়খন্ডের ৪০ টি জায়গায় একযোগে অভিযান চালাল ইডি আধিকারিকরা। যার মধ্যে দুর্গাপুরে ৯ টি জায়গায় কয়লা কারবারিদের অফিস ও বাড়িতে একসঙ্গে তল্লাশী শুরু করে ইডি। ঘটনাকে ঘিরে বিস্তর শোরগোল শুরু হয়েছে শিল্পাঞ্চলজুড়ে।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে রাজ্য সরকারের পালাবদলের পর অবৈধ কয়লা কারবারের রাস ছিল অনুপ মাজি ওরফে 'লালা'-র হাতে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কড়া নজরে রয়েছে লালা। বাম জামানার অবসান হতেই তাবত খনি অঞ্চলে নতুন করে সিন্ডিকেটের দাপট শুরু হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে কয়লা কেলেঙ্কারিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই ও ইডি তদন্ত করছে। ইসিএলের একাধিক আধিকারিক, কয়লা মাফিয়া ধরাও পড়েছে। অনেক মাফিয়া এখনও অধরা। তারমধ্যে আবার নতুন করে কায়লাপাচারচক্রে সিন্ডিকেট শুরু হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। পুরোনো কায়দায় 'প্যাড' মাধ্যমে ঝাড়খন্ড থেকে রমরমিয়ে চলছিল এই কয়লা পাচারচক্র। প্যাড পিছু রাজ্যের সীমান্তবর্তী ওই সিন্ডিকেট অফিস বসিয়ে ২৫ হাজার টাকা লরি পিছু ধার্য করত। তার বিনিময়ে যে টোকেন বা প্যাড দিত তাতেই জাতীয় সড়কের ডানকুনি পর্যন্ত ধরপাকড়ে ছাড় মিলত। আর এই নতুন চক্রে লালা ঘনিষ্ট লোকেশ সিং, নারান খাড়কা, চিন্ময় মন্ডল, অনিমেষ মাজি'রা যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ। এছাড়াও তাবত খনি অন্চলে ইসিএলের কয়লা কারবারে এই সিন্ডিকেট রাজ করত। এই সিন্ডেকেটের জুলুমবাজিরও অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ, রাজ্যের শাসকদলের মদতে ও ইসিএলের একশ্রেণীর ছত্রছায়ায় চলছে সিন্ডিকেট রাজ। ইসিএলের বিভিন্ন কোলিয়ারি থেকে রেল ও সড়ক পথে কয়লা বিক্রির জন্য ডিও' র বের হয়। ইসিএলের কাজোড়া, কুনুস্তড়িয়া, সাতগ্রাম, শ্রীপুর, ডাবর, চিনাকুড়ি, কাজোড়া, শোনপুর বাজারি সহ বিভিন্ন কোলিয়ারী থেকে কয়লার ডিও বের হয়। জানা গেছে, শোনপুর বাজারি প্রজেক্ট থেকে মাসে ৬০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টন সড়ক পথের (রোড সেল) ডিও বের হয়। এছাড়াও বাকি বাঁশাড়া, কাজোড়া, শ্রীপুর সাতগ্রাম সহ অন্যান্য কোলিয়ারী থেকে মাসে ৫-৬ হাজার টন সড়ক পথে (রোড সেল) ডিও বের হয়। গতবছরই শ্রীদীপ চক্রবর্তী এই জুলুমবাজির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। অভিযোগ জানিয়ে তিনি বলেন, ওই ডিও' র মাধ্যমে কয়লা বের করার সময় এই সিন্ডিকেটকে টন পিছু ১৬৫০-২১৫০ টাকা অবৈধ সিন্ডিকেট 'তোলা' খয়রাতি দিতে হয়। এই তোলা না দিলে ডিও কয়লা ব্যাবসায়ীদের চরম হেনস্থার শিকার হতে হয়। এই 'তোলা' দিতে গিয়ে চরম লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে ব্যাবসায়ীদের। তিনি আরও বলেন, ব্যাবসায়ীরা প্রতিবাদ করলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও ইসিএল কর্তৃপক্ষের কোন সুরক্ষা সহযোগিতা পাওয়া যায় না। উল্টে, ব্যাবসায়ীদের ডিও বাতিল করা হয়। আবার কখনও কোলিয়ারিতে ব্যাবসায়ীর পরিবহন লরি ঢুকে পড়লে, কয়লার সঙ্গে পাথর, বালি, কাদা মিশিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শ্রীদীপবাবু বলেন, এই সিন্ডিকেটে রয়েছে, লকেশ সিং, রাকেশ সিং, কান্তা শর্মা গৌরান্ডী বারাবনির বাসিন্দা। পাপ্পু সিং, নারান খাড়কা, কৃষ্ণকয়াল মুরারী, পার্থ মুখার্জী। এইসমস্ত মাফিয়ারা গোটা খনি অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের সঙ্গে খোট্টারডিহির যুধিষ্টির ঘোষ, চিন্ময় মন্ডল, অনিমেষ মাজিরা জড়িত। শ্রীদিপবাবু অভিযোগে আরও বলেন, একটি ১৬ চাকার লরি পিছু ৩০ টন কয়লা বোঝাই হয়। ওই ৩০ টনের দরুন আগাম সিন্ডিকেট অফিসে তাদের নির্ধারিত 'তোলা' না দিলে কোলিয়ারি র সাইডিং পরিবহন লরি ঢুকতে দেওয়া হয় না। সুকৌশলে ওই লরি আটকে রাখা হয়। এছাড়াও কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পথে বৈধ কয়লার লরি থেকে ২ টন কয়লা মাঝপথে মাফিয়াদের ডিপোতে জোরপুর্বক নামিয়ে নেওয়া হয়। তার বদল একধরনের পাথর/ কারকোল চাপিয়ে দেয়। ক্রেতাকে যখন ওই কয়লা দেওয়া হয়, তারা পাথর বাছাই করে বাদ দেয়। তার দাম পাওয়া যায় না। এককথায় ২ টন কয়লাও সিন্ডিকেটকে খয়রাতি স্বরূপ বাড়তি দিতে হয়। সব মিলিয়ে ইসিএলের বৈধ কয়লা তুলতে গিয়ে লরি পিছু ৭৩ হাজার টাকা বাড়তি গুনাকার দিতে হয় সিন্ডিকেট। তিনি অভিযোগে আরও বলেন, প্রতিদিন এই সিন্ডিকেটের কয়েক' কোটি টাকার কারবার চলে। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার সল্টলেক, আসানসোল, দুর্গাপুর, পুরুলিয়া, ঝাড়খণ্ড, হাওড়ার একাধিক জায়গায় হানা দেন ইডি আধিকারিকরা। যার মধ্যে অনুপ মাজি ওরফে লালা ঘনিষ্ট লোকেশ সিংয়ের দুর্গাপুর মেনগেটে বাড়ি ও সিটিসেন্টার অম্বুজায় তার অফিসে তল্লাশী অভিযান শুরু হয়।দুর্গাপুরের বিধাননগরে সালারপুরিয়া ৫ নং টাওয়ারে ১৪ তলায় রয়েছে কয়লা মাফিয়া নারান খাড়কার ফ্ল্যাট। এদিন সেখানে দরজা ভেঙে ঢোকে আধিকারিকরা। বেলা গড়াতে এক ব্যাঙ্ক কর্মীকে নিয়ে আসা হয় ওই অভিযানে। এছাড়াও নারানের অ্যাকাউন্টেন্ট সুশান্ত গোস্বামীর বাড়িতে চলে ইডির হানা। এছাড়াও বিধাননগরে কয়লা ও বালি কারবারি চিন্ময় মন্ডলের বাড়িতে, লালা ঘনিষ্ট অনেমেষ মাজির বাড়িতেও তল্লাশী শুরু করে ইডি। এছাড়াও দুর্গাপুর সিটি সেন্টারে কয়লা ও লোহার ছাট কারবারি রামধনী জয়শওয়াল, ঠিকাদার রাজ কিশোর যাদবের বাড়িতে অভিযান হয়। জানা গেছে, রামধনী জয়শওয়ালের ব্যাবসায় ও রাজ কিশোর যাদবের ঠিকাদারি ব্যাবসায় কালো টাকা সাদা করা হত। আরও অভিযোগ উঠেছে, শহরের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের মৃত ব্যাক্তিদের অ্যাকাউন্টে লেনদেনের। অভিযোগ, মৃত ব্যাক্তিদের অ্যাকাউন্টে কালো টাকা সাদা করার রমরমা কারবার চালাতো। যদিও সেসব তদন্ত সাপেক্ষ। বিজেপি নেতা শ্রীদিপ চক্রবর্তী বলেন, দুর্গাপুর, আসানসোল, রানীগঞ্জের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মৃত ব্যাক্তিদের অ্যাকাউন্ট তদন্ত করা হোক। এবং সেগুলি অবিলম্বে বাতিল করা হোক। দুর্গাপুরের পাশাপাশি এদিন ভোরে পাণ্ডবেশ্বরের খোট্টাডিহি গ্রামে তৃণমূল নেতা যুধিষ্ঠীর ঘোষ নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতেও পৌঁছে যান কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় ভোর পাঁচটা থেকে শুরু হয় অভিযান। প্রসঙ্গত এই যুধিষ্ঠীর ঘোষের বিরুদ্ধে অবৈধ কয়লা ও বালি কারবারের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তিনি কয়লা কাণ্ডে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও বহাল তবিয়েতে কয়লা ও বালি পাচার চক্রে কাজ করছিলেন বলে অভিযোগ।

হিন্দুস্থান সমাচার / জয়দেব লাহা




 

 rajesh pande