সমাজকে ভাঙতে নয়, একত্রিত করাই আরএসএস–এর কাজ : ডা. ভাগবত
মণিপুরে জনজাতি সুশীল সমাজের সঙ্গে বার্তালাপে সামাজিক ঐক্যের আহ্বান সরসংঘচালকের, বলেন, ভারতের ধর্মই সৌভ্রাতৃত্ব ইমফল, ২১ নভেম্বর (হি.স.) : সমাজকে ভাঙতে নয়, একত্রিত করাই আরএসএস–এর কাজ। সমাজকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যেই আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সমাজ
জনজাতি প্ৰমুখ সম্মেলনে সরসংঘচালক


জনজাতি বিশিষ্টদের সঙ্গে বাৰ্তালাপ ডা. মোহন ভাগবতের


যুব সম্মেলনে সরসংঘচালক ডা. মোহন ভাগবত


জনজাতি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবর্গ


মণিপুরে জনজাতি সুশীল সমাজের সঙ্গে বার্তালাপে সামাজিক ঐক্যের আহ্বান সরসংঘচালকের, বলেন, ভারতের ধর্মই সৌভ্রাতৃত্ব

ইমফল, ২১ নভেম্বর (হি.স.) : সমাজকে ভাঙতে নয়, একত্রিত করাই আরএসএস–এর কাজ। সমাজকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যেই আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সমাজ তথা দেশে স্থায়ী শান্তি, সম্প্রীতি এবং অগ্রগতির জন্য সততা, সহানুভূতি, ঐক্য এবং দায়িত্ববোধের ইতিবাচক গুণাবলীকে আত্মস্থ করে সচ্চরিত্রবান ব্যক্তির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ভারতের ধর্ম কী, ভারতের ধর্ম সৌভ্রাতৃত্ব। ইমফলে জনজাতি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে কথাগুলি বলেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর সরসংঘচালক ডা. মোহন ভাগবত।

আজ শুক্রবার মণিপুর সফরের দ্বিতীয় দিন রাষ্ট্ৰীয় স্বয়ংসেবক সংঘের শতবৰ্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে জনজাতি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করছিলেন সংঘের সরসংঘচালক। ইমফলে ভাস্কর প্রভা কমপ্লেক্সে ঐতিহ্যবাহী মণিপুরি খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে বিভিন্ন জনজাতি সম্প্রদায়ের ২০০-এর বেশি প্রতিনিধি ডা. ভাগবতের সাথে সামাজিক সম্প্রীতি ও সাংস্কৃতিক সমরসতার উদাহরণ প্রদর্শন করেছেন। ভোজন অনুষ্ঠানে প্ৰদত্ত ভাষণে ডা. মোহন ভাগবত বলেন, ‘আরএসএস একটি সম্পূর্ণ সামাজিক সংগঠন। সংঘের উদ্দেশ্য সমাজকে শক্তিশালী করা। আরএসএস কারও বিরুদ্ধাচরণ করে না।

আরএসএস সমাজকে ভাঙার জন্য নয়, সমাজকে একত্রিত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নেতা, রাজনীতিবিদ, সরকার - এরা সবাই সমাজের মিত্র। তবে সমাজের আসল প্রয়োজন ঐক্য।’ তিনি স্পষ্ট করেছেন, ‘সংঘ রাজনীতি করে না বা কোনও সংগঠনকে নির্দেশও দেয় না। সংঘ কেবলমাত্র বন্ধুত্ব, স্নেহ এবং সামাজিক সম্প্রীতির জন্য কাজ করে।’

ভারতের ক্রমাগত সভ্যতাগত চেতনা তুলে ধরে সংঘ-প্রধান বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতের মানুষের সাংস্কৃতিক এবং জেনেটিক ডিএনএ ৪০ হাজার বছর ধরে একই। আমাদের বৈচিত্র সুন্দর। আমাদের চেতনা এক... ঐক্যের জন্য অভিন্নতার প্রয়োজন নেই।’

ড. ভীমরাও আম্বেদকরের প্ৰসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ভারতের সংবিধানে নিহিত মূল মূল্যবোধ - স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্ব ফরাসি বিপ্লবে অনুপ্রাণিত নয়, ভগবান বুদ্ধের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত।’ ডা. ভাগবত বলেন, ‘এ ব্যাপারে বিশ্বের অনেক দেশ ব্যর্থ হয়েছে কারণ, তারা ভ্রাতৃত্বকে গুরুত্ব দেয়নি। ভারত সফল, কারণ ভারতের ভ্রাতৃত্বই ধর্ম।’

সংঘ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যের ওপর আলোকপাত করে ডা. ভাগবত বলেন, ‘প্রতিক্রিয়া হিসেবে নয়, সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সংঘের। সংঘ মানুষ গড়া এবং চরিত্র গঠনের এক অভিযান। এর বাস্তবতা বুঝতে হলে শাখায় আসুন।’ তিনি বলেন, যে সমাজের ভালোর জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেন এবং ভারতীয় সভ্যতার সাথে সম্পর্ক রাখেন তিনি ‘অঘোষিত স্বয়ংসেবক’। সংঘ নিজের জন্য কিছু চায় না, কেবল একটি ভালো সমাজ চায়, বলেন তিনি।

জনজাতি নেতাদের উত্থাপিত প্রসঙ্গে ডা. ভাগবত আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আপনার সমস্যাগুলি আমাদের সকলের সমস্যা।’ তিনি বলেন, পরিবারের অন্দরের মতো আলোচনা এবং সাংবিধানিক কাঠামোর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। বলেন, ‘গত তিন বছর থেকে সংঘর্ষপীড়িত মণিপুরে শান্তি ফেরাতে সংঘ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। কেননা, সংঘের কাজ মানুষের মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতির বতাবরণ সৃষ্টি করা। সরকার তার মতো কাজ করছে, আর সংঘও তার মতো করে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এর জন্য আপনাদেরও করণীয় বহু কাজ আছে। রাজ্যে শান্তি ফেরাতে সংঘ-কার্যকর্তারা অবিরাম কাজ করছেন। তাঁদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আপনারাও এগিয়ে আসুন।’ এ প্ৰসঙ্গে তিনি বলেন, বহু আঞ্চলিক সমস্যা ও বিভাজনের শেকড় ঔপনিবেশিক আমলের নীতির মধ্যে নিহিত।

মানুষ নিৰ্মাণকে জাতীয় পুনর্জাগরণের ভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করে ডা. ভাগবত সংঘ কৰ্তৃক পরিচালিত সদভাবনা বৈঠক এবং পঞ্চ পরিবর্তনের প্রচেষ্টার উল্লেখ করেছেন। সংঘের শতবৰ্ষ পূৰ্তি উপলক্ষ্যে গৃহীত কার্যক্রম ‘পঞ্চ পরিবর্তন’ ‘যেমন সামাজিক সমরসতা’ (সামাজিক সম্প্রীতি), ‘কুটুম্ব প্ৰবোধন’ (পারিবারিক জাগরণ), ‘নাগরিক কর্তব্য’, স্বদেশী ও স্বনির্ভরতা’ এবং ‘পরিবেশ সংরক্ষণ’-এর ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।

জনজাতি সম্প্রদায়কে স্বদেশী জীবনধারা গ্রহণ করতে এবং তাঁদের ঐতিহ্য, ভাষা ও লিপি নিয়ে গর্বিত হওয়ার আহ্বান জানান সংঘ-প্রধান ডা. ভাগবত। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব আজ দিকনির্দেশনার জন্য ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে। তাই আমাদের একটি শক্তিশালী জাতি গঠন করতে হবে। এ জন্য আরএসএস নিরন্তর কাজ করছে।’

জনজাতি নেতৃত্বের সঙ্গে বাৰ্তালাপ এবং ভোজসভার ঐতিহাসিক কার্যক্রমটি ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ - সাংস্কৃতিক ঐক্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং জাতীয় দায়িত্বের একটি প্রাণবন্ত বার্তার মূর্তিতে পরিণত হয়েছিল।

এদিকে আজ ইমফলে জনজাতি সম্মেলনের পাশাপাশি যুব প্ৰতিনিধিদের সাথেও এক বিশেষ কথোপকথন কাৰ্যক্রমে অংশগ্ৰহণ করেছেন আরএসএস-এর সরসংঘচালক ডা. মোহন ভাগবত। তিনি তরুণ প্রজন্মকে ভারত একটি নতুন সৃষ্ট দেশ নয়, একটি প্রাচীন এবং অখণ্ড সভ্যতার দেশ বলে বোঝার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মহাকাব্য - রামায়ণ এবং মহাভারতে মণিপুর, ব্রহ্মদেশ (অধুনা মায়ানমার) এবং বর্তমান আফগানিস্তানের মতো অঞ্চলগুলির উল্লেখ রয়েছে। এতে ভারতের বিশাল সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে।’

ডা. মোহন ভাগবত বলেন, ‘পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং চেতনার উপর ভিত্তি করে গড়েছে হিন্দু সভ্যতা। আমাদের বৈচিত্র্যময় সমাজ আমাদের শক্তি। কারণ ধর্ম আমাদের ভিতর থেকে ঐক্যবদ্ধ রাখে।’ তরুণদের তাঁদের পরিচয় নিয়ে গর্ব করতে এবং সাংস্কৃতিক আত্মবিশ্বাসের সাথে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান সরসংঘচালক।

যুব শক্তিকে জাতি গঠনের পথপ্রদর্শক হিসেবে বর্ণনা করে ডা. ভাগবত বলেন, আরএসএস-এর শাখাগুলি দায়িত্বশীল, সক্ষম এবং নিঃস্বার্থ নাগরিক তৈরি করে, যাঁরা তাঁদের দক্ষতা এবং প্রতিভা দেশের জন্য উৎসর্গ করেন। তিনি বলেন, সত্যিকারের অগ্রগতি আসে ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব থেকে যা সামাজিক রূপান্তর এবং শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থার পরিবর্তনের দিকে পরিচালিত করে।

পশ্চিমী বস্তুবাদ ও চরম ব্যক্তিবাদের প্রভাবের বিরুদ্ধে সতর্ক করে ডা. ভাগবত বলেন, শক্তিশালী পরিবার ও মূল্যবোধই একটি শক্তিশালী দেশের ভিত্তি। যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘স্বার্থপরতার ঊর্ধ্বে ওঠে চিন্তা করুন, যখন ভারত উঠবে, তখনই বিশ্ব উঠবে। আমাদের কর্তব্য জাগ্রত, সংগঠিত এবং দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।’

হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস




 

 rajesh pande