
ধর্মশালা, ২১ ডিসেম্বর (হি.স.) : অবসরের পর যেখানে অধিকাংশ মানুষ বিশ্রামের জীবন বেছে নেন, সেখানে হিমাচল প্রদেশের কাংড়া জেলার নগরোটা সুরিয়ান এলাকার ঘার জারোট গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জীবন সিং রানা গড়ে তুলেছেন সাফল্যের এক নতুন দৃষ্টান্ত। শিক্ষা দফতরের প্রভাষক পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি প্রাকৃতিক চাষকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে আজ শতাধিক কৃষকের অনুপ্রেরণায় পরিণত হয়েছেন।
কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া জীবন সিং রানা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পঞ্জাবের বার্নালায় জেলায় একটি ড্রাগন ফল চাষ প্রকল্প পরিদর্শন করেন। সেখান থেকেই এই লাভজনক ফসল চাষের ধারণা নেন। পরবর্তীতে তিনি তাঁর পুত্র, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আশিস রানা এবং স্ত্রী কুন্তা রানার সহযোগিতায় কৃষি ও উদ্যানচর্চায় নতুন উদ্যোগ শুরু করেন। হিমাচল প্রদেশ উদ্যান দফতরের কারিগরি সহায়তায় তিনি ৬ কানাল (জমির মাপের একটি একক, যা মূলত উত্তর ভারত ও পাহাড়ি রাজ্যগুলোতে (হিমাচল প্রদেশ, জম্মু–কাশ্মীর, পঞ্জাব ইত্যাদি) বেশি ব্যবহৃত হয়) জমিতে লাল খোসার ড্রাগন ফলের ৪৫০টি চারা রোপণ করেন।
প্রথম মৌসুমেই এর সুফল মিলতে শুরু করে এবং দ্বিতীয় মৌসুমে প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা আয় হয়। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৬ কুইন্টাল ড্রাগন ফল উৎপাদন করে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা আয় করেছেন তিনি। বর্তমানে তাঁর বাগানে ১১২৫টি পোলের উপর ৪৫০০-রও বেশি ড্রাগন ফলের গাছ রয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই চাষ আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, জীবন সিং রানা ২০১৪ সাল থেকেই প্রাকৃতিক চাষ পদ্ধতি গ্রহণ করেন। কৃষি দফতরের প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করেন তিনি। সাহিওয়াল জাতের গরু পালন করে প্রাকৃতিক চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ নিজেই প্রস্তুত করেন, যার ফলে জমির উর্বরতা বজায় থাকে এবং ফসল রোগমুক্ত থাকে।
ড্রাগন ফলের পাশাপাশি তিনি স্ট্রবেরি, ভুট্টা, গম, লাল বাসমতী ধান, ছোলা, তিসি, কোদো, আদা ও হলুদের সফল চাষ করছেন। এছাড়া লাউ, টিন্ডা, শসা, করলা, ঢেঁড়স ও বেগুনসহ নানা সবজি উৎপাদন করছেন। তাঁর জমিতে পেয়ারা, পেঁপে, জাম, হরিতকী, বহেরা ও আমলকীর মতো ফলদ গাছও রয়েছে।
প্রাকৃতিক চাষে সুখী কৃষক প্রকল্পের অধীনে দেশি গরু ক্রয়ে ২০ হাজার টাকা, গোশালা নির্মাণ, গো-মূত্র সংরক্ষণ ব্যবস্থা, ট্র্যাক্টরে ২.৫ লক্ষ টাকা, বোরওয়েলে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা, ড্রিপ ও স্প্রিঙ্কলার সেচ ব্যবস্থায় ২২ হাজার টাকা এবং ড্রাগন ফলের চারা ও পলিহাউসে ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে।
জীবন সিং রানা জানান, প্রথমে ১০০ পোলের উপর ৫০০টি ড্রাগন ফলের চারা লাগানো হয়েছিল। পরবর্তীতে আরও ১২৫টি পোল যুক্ত করে চাষ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। তিনি প্রাকৃতিক চাষ পদ্ধতিতে মাল্টি-ক্রপিংও করছেন, যেখানে ঢেঁড়স ও মটরের মতো ফসল অন্তর্ভুক্ত।
হিমাচল প্রদেশ উদ্যান দফতরের উপ-পরিচালক জানান, কাংড়া জেলায় ড্রাগন ফল চাষে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৩ হেক্টর জমিতে এই চাষ হচ্ছে এবং পাঁচজন উদ্যানপালক যুক্ত রয়েছেন। নগরোটা সুরিয়ান, নুরপুর, দেরা, রাইত সহ বিভিন্ন এলাকায় এই চাষ বিস্তৃত হচ্ছে।
জীবন সিং রানার মতে, সৎ পরিশ্রম ও নিষ্ঠা থাকলে গ্রামে থেকেও সম্মানজনক জীবনযাপন, সুস্বাস্থ্য ও ভালো আয় সম্ভব। বর্তমানে তাঁর পুত্র আশিস রানা এই উদ্যোগে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন।
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / সৌমি বৈদ্য