কলকাতা, ৫ ডিসেম্বর (হি.স.) : বাংলাদেশে মৌলবাদীদের দ্বারা সৃষ্ট চলমান হিংসা, সন্ত্রাস, বর্বরতা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নিত্যনৈমিত্তিক চরম আক্রমণ, তাঁদের ভিটে-মাটিতে অগ্নিসংযোগ, হামলার প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে শান্তি ফিরিয়ে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার, মান-সম্ভ্রম, জীবন-জীবিকা, সম্পদ-সম্পত্তির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন মারফত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির কাছে এক স্মারকলিপি প্রদান করেছে ‘আমরা বাঙালী’ রাজনৈতিক দল। এছাড়া দলের পক্ষ থেকে কলকাতার বেকবাগান মোড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ‘আমরা বাঙালী’—র কেন্দ্রীয় সচিব জ্যোতিবিকাশ সিনহা, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সচিব তপোময় বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সচিব অনিতা চন্দ, অসম রাজ্য সচিব সাধন পুরকায়স্থ এবং আমরা বাঙালী’র প্রবীণ নেতা নরেশচন্দ্র রায় সহ এক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে গিয়ে সে দেশের রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্য স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
স্মারকলিপি প্রদানের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দলের কেন্দ্রীয় সচিব জ্যোতিবিকাশ সিনহা এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সচিব তপোময় বিশ্বাস বলেন, ‘২০২৪ সালের আগস্ট মাস থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নানাবিধ হিংসাত্মক ঘটনা সংগঠিত হচ্ছে। সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যম মারফত আমরা জানতে পেরেছি, বাংলাদেশে তদারকি উপদেষ্টামণ্ডলী সরকার পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করার পরও সন্ত্রাসমূলক পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি, বরং দীর্ঘ চারমাস ধরে সেখানকার নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নিরীহ বাঙালিদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে মৌলবাদী শক্তি। হিংস্র দুর্বৃত্তের দল সংগঠিতভাবে সাধারণ নিরপরাধ বাঙালিদের ঘর-বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে, পুড়িয়ে সন্ত্রাস ও পাশবিক নির্যাতন-নিপীড়নের ভয়াবহ বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে। এই সন্ত্রাসের কবল থেকে শিশু, বৃদ্ধ, মহিলা, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিল্পীর মতো প্রগতিশীল বাঙালিরাও রেহাই পাচ্ছেন না! এত সবের পরও তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিষ্ক্রিয়তার চরম নিন্দা করছি আমরা।’
তাঁরা বলেন, ‘গোটা বাঙালি জাতির কাছে আমাদের অনুরোধ, ধর্মীয় বিভেদের ভাবনা মনের ভেতরে তৈরি হতে দেবেন না। সন্ত্রাসবাদীদের একটিই পরিচয় তারা সন্ত্রাসবাদী, দুষ্কৃতী। অতীতের দেশভাগ সহ বিভিন্ন সময় বাঙালি জাতির অভ্যন্তরীণ ঐক্যকে বিনষ্ট করতে ধর্মীয় প্রাচীর টেনে, বাঙালি জাতির মধ্যে ধর্মীয় ভাবাবেগের রাজনীতি করে রক্তক্ষয়ী ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষ বাঁধানো হচ্ছে। আমরা দেখেছি, শুধুমাত্র ধর্মের জিগির তুলে বাঙালি বাঙালিকে কাটছে! নির্দ্বিধায় খুন করছে! কবে বোধোদয় হবে বাঙালির? দেশভাগ, দাঙ্গার ক্ষত আজও বহে বেড়াচ্ছে বাঙালি। এই ‘দাঙ্গা’ বাঁধিয়েছিল কারা? ধর্মের জিগির তুলে এই দাঙ্গা বাঁধিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করে অন্তরালে বসেছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের তাবেদার কিছু পশ্চিমি ধূর্ত রাজনীতিক, ফ্যাসিস্ট-শোষক দেশীয় পুঁজিপতি। আজ আবার একইভাবে বাঙালিকে ধর্মান্ধতায় উন্মত্ত করে, দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা চালাচ্ছে অন্তরালের সেই ফ্যাসিস্ট শোষকরাই।’
বাঙালি জাতিসত্ত্বা বিনষ্টকারী সকল মৌলবাদী অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জ্যোতিবিকাশ সিনহা এবং তপোময় বিশ্বাস বলেন, ‘এমতাবস্থায় আমরা বাঙালীর পক্ষ থেকে আমরা দাবি রেখেছি, বাংলাদেশের প্রত্যেক বাঙালির বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোরতম শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।’
আজকের স্মারকলিপি প্ৰদান কাৰ্যক্ৰমে ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সচিব তথা প্রবীণ নেতা বকুলচন্দ্র রায়, কেন্দ্রীয় অর্থসচিব মোহনলাল অধিকারী, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সচিব অনিতা চন্দ, অসম রাজ্য সচিব সাধন পুরকায়স্থ, বিকাশ বিশ্বাস, বাপী পাল, অরূপ মজুমদার, মিণ্টু বিশ্বাস, প্রতিমা দাশ, মমতা ঘোষাল প্রমুখ দলের নেতৃবৃন্দ।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস