বিশ্ব খাদ্য দিবস : সুস্থ ভবিষ্যৎ ও গুণমান সম্পন্ন আহারের জন্য হাতে হাত রেখে এগিয়ে চলা
নয়াদিল্লি, ১৬ অক্টোবর (হি.স.): প্রতি বছর ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হয়। খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি এবং সুস্থায়ী কৃষিকাজ পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এটি একটি বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ। এটি বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতিগুলির কথা মনে করিয়ে দেয় যেগুল
বিশ্ব খাদ্য দিবস : সুস্থ ভবিষ্যৎ ও গুণমান সম্পন্ন আহারের জন্য হাতে হাত রেখে এগিয়ে চলা


নয়াদিল্লি, ১৬ অক্টোবর (হি.স.): প্রতি বছর ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হয়। খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি এবং সুস্থায়ী কৃষিকাজ পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এটি একটি বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ। এটি বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতিগুলির কথা মনে করিয়ে দেয় যেগুলি নিশ্চিত করতে হবে যাতে প্রতিটি মানুষ নিরাপদ, পর্যাপ্ত এবং পুষ্টিকর খাদ্য পেতে পারে। খাদ্য হল জীবনের ভিত্তি, যা স্বাস্থ্য, বৃদ্ধি ও মঙ্গলের জন্য অতি প্রয়োজন। খাদ্য উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী অগ্রগতি সত্ত্বেও, এখনও লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধা ও অপুষ্টির শিকার হচ্ছে। এটি কার্যকর নীতি, স্থিতিস্থাপক খাদ্য ব্যবস্থা এবং সম্মিলিত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। এই বিষয়ে জানিয়েছে ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি )।

পিআইবি-র তরফে জানানো হয়েছে, বিশ্ব খাদ্য দিবস - ১৯৪৫ সালে সম্মিলিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা প্রতিষ্ঠার দিনটিকেই চিহ্নিত করে। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবার ১৯৮১ সালে Food Comes First অর্থাৎ খাদ্যই প্রথম - এই ধারণা নিয়ে পালিত হয় এবং সম্মিলিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৮৪ সালে দিনটিকে অনুমোদন দেয়।বিশ্বজুড়ে ১৫০-টি দেশে যে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা বিশ্ব খাদ্য দিবসকে রাষ্ট্রসংঘের ক্যালেন্ডারে সবচেয়ে বেশি উদযাপিত দিনগুলির মধ্যে একটিতে পরিণত করেছে। এটি ক্ষুধা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং খাদ্য, মানুষ ও গ্রহের ভবিষ্যতের জন্য পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে। ২০২৫ সালের থিম গুণমান সম্পন্ন খাদ্য ও সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য হাতে হাত রেখে এগিয়ে চলা - কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থাকে রূপান্তরিত করার জন্য সরকার, সংস্থা, সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছে।

একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সুস্থায়ী দেশ গঠন

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ যে দেশে বাস করে, সেই ভারত ক্ষুধা মোকাবিলা এবং খাদ্য সুরক্ষাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এটি সম্ভব হয়েছে অপুষ্টি কমানো, দারিদ্র্য দূর করা এবং কৃষিক্ষেত্রে স্থায়িত্বকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচি ও নীতির মাধ্যমে।

এই বছরের বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রধান বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে, দেশের এই বর্তমান প্রয়াসগুলি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এবং প্রতিটি বাড়িতে পুষ্টিকর খাদ্য পৌঁছানো নিশ্চিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ভারতের বৈচিত্র্যময় খাদ্য সুরক্ষা কাঠামোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় প্রকল্প এবং স্থানীয় উদ্যোগ, যা নিম্ন আয়ের পরিবার, শিশু ও বয়স্ক মানুষদের সহায়তা করে। গত এক দশকে, ভারতে খাদ্যশস্য উৎপাদন প্রায় ৯০ মিলিয়ন মেট্রিক টন বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে ফল ও সবজির উৎপাদন ৬৪ মিলিয়ন মেট্রিক টনের বেশি বেড়েছে।

বর্তমানে ভারত দুগ্ধ ও বাজরা উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করে এবং মাছ, ফল ও সবজি উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। ২০১৪ সালের তুলনায় মধু ও ডিমের উৎপাদনও দ্বিগুণ হয়েছে। গত ১১ বছরে ভারতের কৃষি রপ্তানি প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় দেশটি বিশ্বব্যাপীও তার স্থান সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।

খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান সরকারি উদ্যোগ

জাতীয় স্তরে অগ্রগতির লক্ষ্যে খাদ্য ও কৃষিকাজের কেন্দ্রীয় স্তরে ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকার সকলের জন্য গুণগত মানের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে, কৃষিকাজ পদ্ধতিকে উৎসাহিত করতে এবং কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বেশ কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। এই সরকারি কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি কার্যকরভাবে ক্ষুধা ও অপুষ্টি দূর করার জন্য ভারতের অবিচ্ছিন্ন অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যে - সকল মানুষ, সব সময় যেন সক্রিয় ও সুস্থ জীবনযাপনের জন্য তাদের খাদ্যতালিকার চাহিদা ও পছন্দের সঙ্গে মানানসই পর্যাপ্ত নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যে শারীরিক ও অর্থনৈতিকভাবে সুযোগ সুবিধা পায়। এটি অর্জন করতে হলে শুধুমাত্র খাদ্যের পর্যাপ্ত উৎপাদনই নয়, বরং এর ন্যায়সঙ্গত বন্টনও অপরিহার্য।

জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা মিশন

উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার ২০০৭-০৮ সালে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা মিশন চালু করে। এর উদ্দেশ্য ছিল এলাকা সম্প্রসারণ এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ধান, গম ও ডালের উৎপাদন বাড়ানো, মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা, কর্মসংস্থান তৈরি করা এবং খামার স্তরের অর্থনীতিকে উন্নত করা।

২০১৪-১৫ সালে, এই মিশনের আওতায় মোট দানাশস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যেখানে উৎপাদনশীলতা, মাটির স্বাস্থ্য এবং কৃষকের আয়ের উপর মনোনিবেশ করা হয়। ২০২৪-২৫ সালে, এটির নতুন নামকরণ করা হয় জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি মিশন যেখানে খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টি - উভয়ের ওপরই জোর দেওয়া হয়।

জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন

এই আইনটি অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবারগুলির আওতায় ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী গ্রামীণ জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত এবং শহুরে জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত, অর্থাৎ মোট ৮১.৩৫ কোটি মানুষকে সুবিধা প্রদান করে।

অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনার অন্তর্গত পরিবারগুলি প্রতি মাসে ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য পায়, আর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবারগুলি জনপ্রতি মাসে ৫ কেজি করে খাদ্যশস্য পায়। বর্তমানে এই আইনের অধীনে প্রায় ৭৮.৯০ কোটি সুবিধাভোগী রয়েছে।

এএনএফএসএম/এনএফ এসএনএম (NFSM/NFSNM) যেখানে কেন্দ্রীয় স্তরে মজুতের জন্য বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন নিশ্চিত করে, সেখানে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন ২০১৩ সেই খাদ্যশস্যের ন্যায়সঙ্গত বন্টন নিশ্চিত করে। এই দুটি, এএনএফএসএম/এনএফ এসএনএম এবং এনএফএসএ একসঙ্গে ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা কাঠামোর মেরুদণ্ড তৈরি করে। একটি উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং অন্যটি বন্টন নিশ্চিত করে - যার ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধি, স্থায়িত্ব এবং পুষ্টি নিরাপত্তা একইসঙ্গে যুক্ত হয়।

প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা

দেশে কোভিড-১৯ এর সময় মহামারীর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটে দরিদ্র ও অভাবী মানুষেরা যে কষ্ট ভোগ করেছিলেন, তা লাঘব করার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনার সূচনা হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনার মূল কাজ হল, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনের (NFSA) আওতাভুক্ত এবং চিহ্নিত পরিবারগুলিকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ করা। প্রকল্পটি সাতটি ধাপে কার্যকর ছিল। প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার সপ্তম ধাপটি ৩১.১২.২০২২ তারিখ পর্যন্ত চালু ছিল।

দরিদ্র সুবিধাভোগীদের আর্থিক বোঝা লাঘব করতে এবং এই কর্মসূচিটি দেশজুড়ে অভিন্নতা ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার অধীনে অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবারের সুবিধাভোগীদের বিনামূল্যে খাদ্যশস্য প্রদান করা হবে।

এই বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণের সময়সীমা ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু করে আরও পাঁচ বছরের জন্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর আনুমানিক আর্থিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১.৮০ লক্ষ কোটি টাকা, যা সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকার বহন করবে।

প্রধানমন্ত্রী পোষণ (পোষণ শক্তি নির্মাণ) প্রকল্প

প্রধানমন্ত্রী পোষণ (PM POSHAN) প্রকল্পটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় উদ্যোগ, যা সরকারী এবং সরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে শিশুদের পুষ্টির মান উন্নত করার মাধ্যমে শিক্ষা বৃদ্ধি এবং ক্ষুধা মোকাবিলা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে সুবিধা থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে আসতে উৎসাহিত হয়।

এই প্রকল্পের আওতায়, ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি পুষ্টিকর রান্না করা মিড ডে মিল প্রদান করা হয়।

পুষ্টির মানদণ্ড পূরণকারী মধ্যাহ্নভোজ নিশ্চিত করার মাধ্যমে, এটি শিশুদের সুস্বাস্থ্য, স্কুলের নিয়মিত উপস্থিতি এবং শিক্ষার ফলাফলের উন্নতিতে সহায়তা করে। একই সাথে, এটি সামাজিক সমতা ও সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণকেও উৎসাহিত করে।খাদ্য ও গণবন্টন দপ্তর থেকে ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের জন্য বরাদ্দ: ২২.৯৬ লক্ষ মেট্রিক টন চাল ও গম।

ভারতে চালের প্রসঙ্গ

দেশের মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ক্ষুদ্র পুষ্টি উপাদানের গ্রহণ উন্নত করা সবসময়ই ভারত সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়। খাদ্য ও গণবন্টন দপ্তর এই লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সামগ্রিক পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।

এই দপ্তরের পক্ষ থেকে শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগগুলির মধ্যে একটি হল চালের পুষ্টি সংবর্ধন উদ্যোগ।

প্রয়োজনীয় ক্ষুদ্র পুষ্টি উপাদান দ্বারা প্রধান খাদ্যদ্রব্যের পুষ্টি সংবর্ধন বা ফর্টিফিকেশন হল বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি নিরাপদ, সাশ্রয়ী এবং প্রমাণ-ভিত্তিক হস্তক্ষেপ। এটি ক্ষুদ্র পুষ্টি উপাদানের অভাবের বোঝা কমানোর একটি সহায়ক কৌশল।

যেহেতু ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৬৫% মানুষের প্রধান খাদ্য হল ভাত (চাল), তাই ভারত সরকার ২০১৯ সালে চালের পুষ্টি সংবর্ধনের উপর একটি অন্যতম প্রধান কর্মসূচি চালু করে।

২০২১ সালে ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন যে, ২০২৪ সালের মধ্যে সরকারের খাদ্য-ভিত্তিক প্রকল্পগুলির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে দেশের দরিদ্রতম এবং সবচেয়ে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য পুষ্টি সংবর্ধিত চাল সরবরাহ করা হবে।

পুষ্টি সংবর্ধিত চাল তৈরি করা হয় চালের সাথে এক্সট্রুডেড পুষ্টি সংবর্ধিত চালের শস্য ১% ওজন অনুপাতে মিশিয়ে। এই এফআরকে (FRK) গুলিতে চালের গুঁড়ো এবং তিনটি প্রধান ক্ষুদ্র পুষ্টি উপাদান থাকে, যেমন: আয়রন, ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি১২। এগুলি আকার, আকৃতি এবং রঙে সাধারণ চালের মতোই দেখতে হয় এবং সাধারণ চালের মত একই গন্ধ, স্বাদ ও গঠন বজায় রাখে।

ভারতে চালের পুষ্টি সংবর্ধন প্রকল্পটি একটি সম্পূর্ণ পরিকল্পনা জীবনচক্রের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে, যার মধ্যে ছিল পরীক্ষামূলক প্রয়োগ, মান নির্ধারণ, প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি, বাস্তবায়ন এবং পরে সম্প্রসারণ।

এই প্রকল্পটি পর্যায়ক্রমে সম্প্রসারিত হয়েছে:

প্রথম পর্যায় (২০২১-২২): আইসিডিএস এবং পিএম পোষণ প্রকল্পের আওতাভুক্ত ছিল। দ্বিতীয় পর্যায় (২০২২-২৩): আইসিডিএস পিএম পোষণ এবং টিডিপিএস (লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থা) - এই তিনটিই ২৬৯টি আকাঙ্ক্ষী এবং গুরুতর খর্বতা কবলিত জেলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।তৃতীয় পর্যায় (২০২৩-২৪):

টিপিডিএস-এর অধীনে থাকা বাকি জেলাগুলিকেও এর আওতায় আনা হয়। ২০২৪ সালের মার্চ মাসের মধ্যে, সমস্ত রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা (PMGKAY), আইসিডিএস(ICDS), পি- এমপোষণ (PM-POSHAN) সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের অধীনে সরবরাহ করা ১০০% চালেই পুষ্টি সংবর্ধন অর্থাৎ ফোর্টিফিকেশন পদ্ধতি সম্পন্ন হয়েছে।

সম্প্রতি ক্যাবিনেট ২০২৮ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের অধীনে পুষ্টি সংবর্ধিত চালের সার্বজনীন সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। এর সম্পূর্ণ ১০০% অর্থায়ন (১৭,০৮২ কোটি টাকা) প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার (PMGKAY) অংশ হিসেবে ভারত সরকার বহন করবে।

গণবন্টন ব্যবস্থায় আধুনিকীকরণ এবং প্রযুক্তি-চালিত সংস্কার

ভারত সরকার স্মার্ট-পিডিএস (গণবন্টন ব্যবস্থায় প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিকীকরণ ও সংস্কারের প্রকল্প)-এর মাধ্যমে গণবন্টন ব্যবস্থাকে আধুনিক করেছে।

ভারত ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে স্মার্ট-পিডিএস উদ্যোগ চালু করতে প্রস্তুত। এর লক্ষ্য হল পিডিএস-এর প্রযুক্তিগত কাঠামোকে শক্তিশালী করা এবং চারটি প্রধান মডিউলের উপর জোর দিয়ে রূপান্তরমূলক পরিবর্তন আনা:

১.খাদ্যশস্য সংগ্রহ

২.সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা ও শস্য বরাদ্দ

৩.রেশন কার্ড এবং ন্যায্য মূল্যের দোকান ব্যবস্থাপনা

৪.বায়োমেট্রিক-ভিত্তিক শস্য বিতরণ মডিউল (ই-কেওয়াইসি) ।

আমার রেশন ২.০ (Mera Ration 2.0)

প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনার সুবিধাভোগীদের জন্য স্বচ্ছতা ও সুবিধা বাড়াতে খাদ্য ও গণবন্টন দপ্তর ২০২৪ সালের ২০শে আগস্ট 'আমার রেশন ২.০' (Mera Ration 2.0) মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটি চালু করেছে।

এই উন্নতমানের অ্যাপটি সুবিধাভোগীদের জন্য সঠিক সময়ে তাঁদের প্রাপ্য বরাদ্দ, শস্য তোলার বিস্তারিত তথ্য এবং নিকটতম ন্যায্য মূল্যের দোকানের অবস্থান জানিয়ে দেয়। পাশাপাশি, এটি একটি সহজ ও নির্বিঘ্ন ব্যবহার অভিজ্ঞতার জন্য বেশ কিছু নতুন মূল্য সংযোজিত বৈশিষ্ট্য নিয়ে এসেছে। অ্যাপটি ইতিমধ্যেই ১ কোটিরও বেশি বার ডাউনলোড হয়েছে।

গণবন্টন ব্যবস্থার সংস্কারকে আরও উন্নত করতে সরকার আরও একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে -

ডিজিটাইজেশন :

সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে রেশন কার্ড এবং সুবিধাভোগীদের তথ্যভান্ডার সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল করা হয়েছে।

স্বচ্ছতা ও অভিযোগ নিষ্পত্তি :

দেশজুড়ে একটি স্বচ্ছতা পোর্টাল, অনলাইন অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা এবং টোল-ফ্রি নম্বর চালু করা হয়েছে।

অনলাইন বরাদ্দ ও সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা :

চণ্ডীগড়, পুদুচেরি এবং দাদরা ও নগর হাভেলির শহুরে এলাকাগুলি যেখানে সরাসরি নগদ অর্থ স্থানান্তর প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, সেই অঞ্চল গুলি ছাড়া বাকি সমস্ত রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অনলাইন বরাদ্দ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ৩১-টি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা কম্পিউটারাইজড করা হয়েছে।

আধার সংযুক্তি :

জাতীয় স্তরে প্রায় ৯৯.৯% রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার নম্বর যুক্ত করা হয়েছে।

ন্যায্য মূল্যের দোকানের স্বয়ংক্রিয়করণ:

প্রায় সমস্ত ন্যায্য মূল্যের দোকানে এখন ই-পিওএস (ePoS) ডিভাইস রয়েছে, যা এনএফএসএর (NFSA) অধীনে খাদ্যশস্যের ইলেকট্রনিক ও স্বচ্ছ বিতরণের জন্য বায়োমেট্রিক/আধার-ভিত্তিক প্রমাণীকরণ সম্ভব করেছে।

এক দেশ, এক রেশন কার্ড (ওয়ান নেশন ওয়ান রেশন কার্ড):

এই উদ্যোগটি সুবিধাভোগীদের দেশের যেকোনো জায়গা থেকে পিডিএস -এর সুবিধাগুলি গ্রহণ করার সুযোগ দেয়, যা বহনযোগ্যতা এবং সুবিধা নিশ্চিত করে।

হেল্পলাইন নম্বর:

গণবন্টন ব্যবস্থার অভিযোগ জানানোর ও নিষ্পত্তির জন্য এবং সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীদের যেকোনো ধরনের অভিযোগ জানানোর জন্য সমস্ত রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে হেল্পলাইন নম্বর ১৯২৭/১৮০০-স্টেট সিরিজ নম্বর চালু আছে। এই দপ্তরে যেকোনো উৎস থেকে পিডিএসে (PDS) দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ-সহ অন্যান্য অভিযোগ এলে, তা তদন্ত করার ও যথাযথ ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত সরকারগুলির কাছে পাঠানো হয়।

খোলা বাজার বিক্রয় প্রকল্প [OMSS(D)]

বাজারে খাদ্যশস্যের সরবরাহ বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে স্থানীয় খোলা বাজার বিক্রয় প্রকল্পের [OMSS(D)] মাধ্যমে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য (গম ও চাল) বিক্রি করা হয়।

এই প্রকল্পটি নিম্নলিখিত বিষয়গুলিতে সাহায্য করে:

বাজারে খাদ্যশস্যের সরবরাহ বৃদ্ধি করা।

দাম স্থিতিশীল রাখার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্যশস্যকে আরও সাশ্রয়ী করে তোলা।

এছাড়াও, খোলা বাজার বিক্রয় প্রকল্প (স্থানীয়) বা OMSS-D নীতির অধীনে ভর্তুকিযুক্ত দামে সাধারণ গ্রাহকদের কাছে আটা ও চাল পৌঁছে দিতে ভারত আটা এবং ভারত চাল চালু করা হয়েছে।

ডাল উৎপাদনে স্বনির্ভরতা মিশন

প্রধানমন্ত্রী ডাল উৎপাদনে স্বনির্ভরতা মিশন (২০২৫–২৬ থেকে ২০৩০–৩১) সূচনা করেছেন।

২০২৫ সালের ১১ অক্টোবর ১১,৪৪০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ নিয়ে এই মিশনটির সূচনা করা হয়। ডাল মিশনটির লক্ষ্য হল পুষ্টি সুরক্ষা এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা বাড়ানোর জন্য দেশীয় ডাল উৎপাদন বৃদ্ধি করা। চাষের আওতায় থাকা জমি ৩৫ লক্ষ হেক্টর বাড়িয়ে এটি প্রায় দুই কোটি ডাল চাষীকে সুবিধা দেবে।

ওয়ার্ল্ড ফুড ইন্ডিয়া ২০২৫ (World Food India 2025):

আন্তর্জাতিক স্তরে খাদ্যের ক্ষেত্রে ভারতের নেতৃত্ব প্রদর্শন

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প মন্ত্রক দ্বারা আয়োজিত ওয়ার্ল্ড ফুড ইন্ডিয়া ২০২৫ (World Food India 2025) ছিল একটি প্রধান অনুষ্ঠান। আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করে এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, স্থায়িত্ব ও উদ্ভাবনে দেশের শক্তি তুলে ধরে ভারতকে একটি আন্তর্জাতিক খাদ্য কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এর লক্ষ্য।

নব্বইটিরও বেশি দেশের অংশগ্রহণ এবং ২,০০০-এরও বেশি প্রদর্শক নিয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে ভারতের ভূমিকাকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছে।

বিশ্বের নজরে ভারতীয় থালি

ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় থালি সম্প্রতি পুষ্টি এবং স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ডব্লিউডব্লিউএফ-এর 'লিভিং প্ল্যানেট রিপোর্ট'-এ স্বীকৃত হয়ে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে।

ভারতীয়দের ঐতিহ্যবাহী খাদ্যতালিকা, যা মূলত উদ্ভিদ-নির্ভর, শস্য, ডাল, মসুর ডাল ও সবজির উপর কেন্দ্রীভূত। এটি প্রাণীজ-ভিত্তিক খাদ্যের তুলনায় প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমায় এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণও কমায়।

রিপোর্টটি তুলে ধরেছে যে, যদি বিশ্ব জনসংখ্যা ভারতের গ্রহণ-পদ্ধতি গ্রহণ করে, তবে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদনের স্থায়িত্ব বজায় রাখতে আমাদের কেবলমাত্র ০.৮৪ পৃথিবীর সমান সম্পদের প্রয়োজন হবে। এই স্বীকৃতি ভারতকে সুস্থায়ী খাদ্য অভ্যাসের ক্ষেত্রে অগ্রভাগে স্থাপন করেছে, যা দেখায় যে কিভাবে স্থানীয় ঐতিহ্যগুলি সকলের স্বাস্থ্যের উন্নতির পাশাপাশি পরিবেশগত কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে।

উপসংহার

বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২৫ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সকলের জন্য নিরাপদ, পুষ্টিকর এবং সুস্থায়ী খাদ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা কতটা জরুরি। এ বছরের মূলবক্তব্য, গুণমানসম্পন্ন খাদ্য ও সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য হাতে হাত রেখে এগিয়ে চলা, ক্ষুধা ও অপুষ্টি মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে সহযোগিতা এবং সম্মিলিত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। এই প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতের বিভিন্ন উদ্যোগগুলি খাদ্য নিরাপত্তা এবং নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের প্রতি দেশের অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে। কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, খাদ্য বিতরণ শক্তিশালী করা এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করার লক্ষ্যে গৃহীত সমন্বিত কর্মসূচির মাধ্যমে ভারত ক্ষুধা নির্মূলের পথে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করছে। এই বিশেষ দিনটিতে, ভারতের এই প্রয়াসগুলি স্থিতিস্থাপক খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রতি দেশের প্রতিশ্রুতির উপর আলোকপাত করে এবং বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি ইতিবাচক উদাহরণ স্থাপন করেছে।

---------------

হিন্দুস্থান সমাচার / ফারজানা পারভিন




 

 rajesh pande