এজেপিতে যোগদান প্রাক্তন সাংসদ-কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজেন গোহাঁইর, ঠুকলেন অসম বিজেপিকে
গুয়াহাটি, ৫ নভেম্বর (হি.স.) : অবশেষে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ‘অসম জাতীয় পরিষদ’ (এজেপি)-এ নাম লিখিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির টিকিটে চারবারের নির্বাচিত সাংসদ রাজেন গোহাঁই। আনুষ্ঠানিকভাবে এজেপিতে যোগদান করে অসম প্ৰদেশ বিজেপিকে লাগাতার
সংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য পেশ করছেন রাজেন গোহাঁই


গুয়াহাটি, ৫ নভেম্বর (হি.স.) : অবশেষে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ‘অসম জাতীয় পরিষদ’ (এজেপি)-এ নাম লিখিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির টিকিটে চারবারের নির্বাচিত সাংসদ রাজেন গোহাঁই। আনুষ্ঠানিকভাবে এজেপিতে যোগদান করে অসম প্ৰদেশ বিজেপিকে লাগাতার আক্রমণ করেছেন রাজেন।

এজেপি-সভাপতি লুরিনজ্যোতি গগৈ, সম্পাদক জগদীশ ভুইয়াঁ সহ দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আজ বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন রাজেন গোহাঁই। বিজেপির ওপর হামলা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘অসমকে পুলিশ-চালিত রাজ্যে পরিণত করেছে বৰ্তমান বিজেপি। এই রাজ্যে এখন হিটলারি-রাজ চলছে, চলছে কর্তৃত্ববাদী শাসন।’

রাজেন গোহাঁই বলেন, ‘আমি অনেক জাতীয় দলের শাসন দেখেছি। কিন্তু এখন দেখছি, আমাদের নিজের রাজ্য দিল্লির হাতে তুলে দিয়েছি আমরা। অসমের জনগণ তাঁদের নিজস্ব কণ্ঠস্বর এবং ক্ষমতা ও অধিকার হারিয়েছেন।’ গোহাঁই বলেন, ‘বিজেপি অসমের সামাজিক কাঠামোকে মজবুত করার পরিবর্তে সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠেছে।’

রাজেন গোহাঁইয়ের অভিযোগ, ‘বিজেপি সরকার একটি স্বৈরাচারী ভাবধারা চাপিয়েছে। গোটা প্রশাসনযন্ত্রকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে বিজেপি।’ অভিযোগ করেন।’

প্রয়াত শিল্পী জুবিন গার্গকে স্মরণ করে রাজেন বলেন, ‘জুবিন বলেছিলেন অসমের ময়দান ও বাজার আমাদের হাতে আসতে হবে। তাঁর আদর্শ নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব। ময়দান পরিত্যাগ করে কোনও সম্প্রদায়ই অগ্রসর হতে পারে না।’ এছাড়া অসমের ভূমি ও সম্পদের নিয়ন্ত্রণ করতে বহিরাগতদের অনুমতি দিচ্ছে বলে জাতীয় দলগুলিকে অভিযুক্ত করেছেন তিনি।

নগাঁওয়ের চারবারের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ বলেন, ‘আমার দীৰ্ঘদিনের কর্মীদের লজ্জানত করেছে, অবজ্ঞা করা হচ্ছে আমার কর্মীদের। যাঁদের আত্মসম্মান আছে তাঁদের এই দল ছেড়ে এজেপি (‘অসম জাতীয় পরিষদ) ও এজিপি (অসম গণ পরিষদ)-র মতো আঞ্চলিক শক্তিতে যোগদান করা উচিত।’

কংগ্রেসের সঙ্গে মতপার্থক্য ব্যক্ত করে সময়ের আহ্বানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে গোহাঁই বলেন, ‘কংগ্রেসের সবাই খারাপ নয়। কংগ্রেসে যাঁরা খারাপ কাজ করেছেন তাঁরাই এখন বিজেপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’

রাজেনের দাবি, ‘আমার ছেলে নবারুণ গোহাঁইকে একটি পদে নিযুক্ত করেছে বিজেপি। এর উদ্দেশ্য, তাঁর বাবাকে নিয়ন্ত্রণ করা। তবে আমি ছেলেকে দল (বিজেপি) ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছি।’

প্রয়াত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী জুবিন গার্গের সঙ্গে আচরণের জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মারও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর যদি জুবিনের প্রতি এতকটুও সদিচ্ছা দেখাতেন, তা-হলে জুবিন যখন গাছ কাটার প্রতিবাদ করেছিলেন, তখন তিনি সেই পদক্ষেপ বাতিল করতেন। জুবিন তাঁর চারপাশে বিদ্যমান উচ্চবর্ণের লোকজনের জন্য মৃত্যুমুখে পড়েছেন।’

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গত ৯ অক্টোবর বিজেপির সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন দলের বর্ষীয়ান নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজেন গোহাঁই। সেদিন হিন্দুস্থান সমাচার-এর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বার্তালাপে অভিমানী রাজেন গোহাঁই বলেছিলেন, ‘অসম বিজেপির আচরণে এই সিদ্ধান্ত আমাকে নিতে হয়েছে। বহুদিন থেকে আদি নেতা-কার্যকর্তার প্রতি অন্যায়-অবিচার ও অবহেলা করা হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে আমাকে ব্রাত্য করা হচ্ছিল।’

তিনি বলেছিলেন, ‘বিজেপি-র সঙ্গে কয়েক দশক আগে জড়িত হয়েছিলাম। বিজেপিকে আমি প্ৰাণের চেয়ে ভলোবাসতাম। আজ প্রাণের দলটি ছাড়তে কষ্ট পাচ্ছি। বহু পুরনো স্মৃতি মনকে ভারাক্রান্ত করছে। কিন্তু কী করব? বিজেপি-র যাতে বদনাম না হয়, তাই এতদিন মুখ বন্ধ রেখেছিলাম।’

ভারতীয় জনতা পার্টির টিকিটে ১৯৯৯ সাল থেকে টানা চারবার নগাঁও লোকসভা আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন রাজেন। ক্ষোভ ব্যক্ত করে রাজেন গোহাঁই বলেন, ‘অসমের জনগণকে প্ৰদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতা, রাজ্যে বহিরাগতদের বসতি স্থাপনের অনুমতি দিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে বিজেপি। বিজেপি অসমিয়ার মূল শত্ৰু হয়ে পড়েছে।’

নরেন্দ্র মোদীর প্রথম মেয়াদে রেল দফতরের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন নগাঁওয়ের অপ্ৰতিরোধ্য বিজেপি নেতা রাজেন গোহাঁই। ২০২৩ সালে নগাঁও লোকসভা কেন্দ্রের সীমানা পুনর্নিৰ্ধারণের প্ৰতিবাদে ক্যাবিনেট মযাৰ্দার অসম খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ নিগমের অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন গোহাঁই। তাঁর বক্তব্য ছিল, সীমানা পুনর্নিৰ্ধারণে জনবিন্যাসের ক্ষেত্ৰে প্ৰভাব ফেলবে, খিলঞ্জিয়া ভূমিপুত্রদের আধিপত্য খর্ব হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে তিনি হিমন্তবিশ্ব শৰ্মার সঙ্গে কথাও বলেছিলেন, কিন্তু কোনও ইতিবাচক ফল লাভ হয়নি।

এদিকে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ভোট গ্ৰহণের দিন তিনি দলবিরোধী মন্তব্য করায় মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা তাঁর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। সেদিন (২৬ এপ্রিল ২০২৪) মুখ্যমন্ত্রী তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করে বলেছিলেন, ‘যে ব্যক্তি নিৰ্বাচনের দিন মোদীজির বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন, তাঁর দলে থাকা উচিত না-অনুচিত সেই সিদ্ধান্ত আমার দল নিতে পারে৷’

হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস




 

 rajesh pande