(রাউন্ড আপ) বিহার বিধানসভা নির্বাচন: প্রথম দফায় বিকেল ৫টা পর্যন্ত বেগুসরাইয়ে সর্বাধিক ভোট
পাটনা, ৬ নভেম্বর (হি.স.): বিহারে প্রথম দফার বিধানসভা নির্বাচনে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটদানের হার দাঁড়াল ৬০.১৮ শতাংশ। বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ছাড়া তেমন কোনও অশান্তির অভিযোগ নেই। কিছু ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র (ইভিএম) ঠিক মতো কাজ না করায় ভোট গ্রহণে
নির্বাচন কমিশন


পাটনা, ৬ নভেম্বর (হি.স.): বিহারে প্রথম দফার বিধানসভা নির্বাচনে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটদানের হার দাঁড়াল ৬০.১৮ শতাংশ। বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ছাড়া তেমন কোনও অশান্তির অভিযোগ নেই। কিছু ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র (ইভিএম) ঠিক মতো কাজ না করায় ভোট গ্রহণে সাময়িক বিঘ্ন ঘটেছে। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, বেগুসরাই জেলায় বিকেল ৫টা পর্যন্ত সর্বাধিক ভোট পড়েছে। পাটনায় ভোটের হার সব চেয়ে কম।

রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, বিকেল ৫টা পর্যন্ত মাধেপুরায় ৬৫.৭৪ শতাংশ, সহরসায় ৬২.৬৫ শতাংশ, দ্বারভাঙ্গায় ৫৮.৩৮ শতাংশ, মুজাফফরপুরে ৬৫.২৩ শতাংশ, গোপালগঞ্জে ৬৪.৯৬ শতাংশ, সিওয়ানে ৫৭.৪১ শতাংশ, সারানে ৬০.৯০ শতাংশ, বৈশালীতে ৫৯.৪৫ শতাংশ, সমস্তিপুরে ৬৬.৬৫ শতাংশ, বেগুসরাইয়ে সর্বোচ্চ ৬৭.৩২ শতাংশ, খাগারিয়ায় ৬০.৬৫ শতাংশ, মুঙ্গেরে ৫৪.৯০ শতাংশ, লখীসরাইয়ে ৬২.৭৬ শতাংশ, শেখপুরায় সর্বনিম্ন ৫২.৩৬ শতাংশ, নালন্দায় ৫৭.৫৮ শতাংশ, পাটনায় ৫৫.০২ শতাংশ, ভোজপুরে ৫৩.২৪ শতাংশ এবং বক্সারে ৫৫.১০ শতাংশ ভোট পড়েছে।

এদিন সকাল সকাল গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হলেন লালুপ্রসাদ যাদবের পরিবারের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার সকালে পাটনার একটি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন লালু। এছাড়াও তাঁর স্ত্রী রাবড়ি দেবীও ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে নিয়ে পাটনার একটি বুথে ভোট দেওয়ার পর আরজেডি প্রধান তথা বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব বলেন, ‘পরিবর্তন হবে’।

তেজস্বী এবং তেজপ্রতাপ— দুই সন্তানকেই শুভেচ্ছা জানান লালু-পত্নী রাবড়ী দেবী। রাবড়ি দেবী বলেন, আমার দুই ছেলেকেই আমার শুভেচ্ছা। তেজ প্রতাপ একাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আমি তাঁদের মা। তাঁদের দুজনের জন্যই শুভকামনা। পাটনায় স্ত্রী রাজশ্রী যাদবের সঙ্গে ভোট দিলেন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। ভোট দিয়ে বেরিয়ে লালু-পুত্র জানান, তিনি বিরোধী জোট ‘মহাগঠবন্ধন’-এর জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। আগামী ১৪ নভেম্বর (বিহারে ভোটগণনা এবং ফলপ্রকাশের দিন) নতুন সরকার তৈরি হবে বলেও দাবি করেন তেজস্বী।

ভোট দিতে আসার সময় লালুর মেয়ে এবং আরজেডি নেত্রী রোহিনী আচার্য বলেন, দূর-দূরান্তের গ্রামের শ্রমিকরা চাকরির জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছুটোছুটি করছে। এই নির্বাচন তাদের জন্য। আমি নিশ্চিত যে বিহারের মানুষ এমন একটি সরকারকে নির্বাচিত করবে যা চাকরি দেবে এবং ডাবল ইঞ্জিন সরকারকে উপড়ে ফেলবে।

লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে তথা জনশক্তি জনতা দলের জাতীয় সভাপতি এবং মহুয়া বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী তেজ প্রতাপ যাদব বৃহস্পতিবার সকালে পাটনার একটি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট দিয়েছেন। ভোট দেওয়ার পর তেজপ্রতাপ বলেন, প্রতিটি ভোটই গুরুত্বপূর্ণ। বিহারের জনগণকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তেজপ্রতাপ বলেন, বিহারের জনগণকে অবশ্যই তাদের ভোট দিতে হবে। প্রতিটি ভোটই গুরুত্বপূর্ণ। এদিনই তেজপ্রতাপের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন তাঁর মা রাবড়ি দেবী। এ প্রসঙ্গে তেজপ্রতাপ বলেন, বাবা-মায়ের আশীর্বাদের একটি বিশেষ স্থান রয়েছে এবং জনগণের আশীর্বাদেরও নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে।

সকাল সকাল নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেন বিজেপি নেতা তথা বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী বিজয় কুমার সিনহা। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়িতে পুজো দেওয়ার পর সোজা ভোট কেন্দ্রে যান বিজয় কুমার সিনহা। ভোট দেওয়ার আগে তিনি বলেন, আমিও নিজের ভোট দিতে যাচ্ছি। বিহারের প্রত্যেকেরই নিজেদের ভোট দেওয়ার সুযোগ আছে। আমি প্রতিটি বিহারিকে বাইরে এসে বিপুল সংখ্যায় ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন করছি। ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হয়েছে, আমি নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই। পরে ভোট দেওয়ার পর বিজয় কুমার সিনহা বলেন, আমরাও গণতন্ত্রের মহা উৎসবে অংশগ্রহণ করেছি। আমাদের ভোটের মাধ্যমে, আমরা দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন করি। বিহারীরা গর্বিত হবে এবং আজ বিহার তাদের থেকে মুক্ত হবে যারা বিহারীদের উপর নির্যাতন করে, যারা অরাজকতা, জঙ্গলরাজ এবং গুন্ডা রাজ নিয়ে আসে। রাহুল গান্ধী এবং তেজস্বী যাদব উভয়ই সহানুভূতির রাজনীতি করছেন। তাঁদের নিজস্ব পরিচয়ের অভাব রয়েছে। তাঁরা নিজেদের বাবা-মা এবং তাঁদের পরিবারের অর্জনের উপর ভিত্তি করে রাজনীতি করছে।

বিহারে ভোট শুরু হতেই বিশেষ বার্তা দিলেন বিজেপি প্রার্থী তথা গায়িকা মৈথিলী ঠাকুর। আলিনগর থেকে ভোটের ময়দানে লড়ছেন তিনি। বললেন, ‘আমার হাত দিয়ে যদি মানুষের সেবা করার সৌভাগ্য লেখা থাকে, তবে যেন সেই সুযোগটি পাই। আশা করছি সব মঙ্গলময় হবে।’ বৃহস্পতিবার সকালেই তিনি দ্বারভাঙার বিশ্বনাথ মন্দিরে পুজো দেন। তারপরেই বেরিয়ে পড়েন নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্রের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে। সেখানে ভোটদাতাদের সঙ্গে কথা বলেন। উল্লেখ্য, ২৫ বছর বয়সী এই গায়িকা তথা বিজেপি প্রার্থী মৈথিলী ঠাকুর লড়ছেন লালু প্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের প্রার্থী বিনোদ মিশ্র ও প্রশান্ত কিশোরের জন সূরজ পার্টির বিপ্লব কুমার চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

বিহারের জনগণকে পূর্ণ উদ্যমে ভোটদানের আহ্বান জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ অমিত শাহ লেখেন, বিহারের ভোটারদের, বিশেষ করে তরুণদের আজ ভোটের প্রথম দফায় রেকর্ড সংখ্যায় ভোট দেওয়ার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। আপনাদের প্রতিটি ভোট বিহারে জঙ্গলরাজের প্রত্যাবর্তন রোধ, সুশাসন বজায় রাখা এবং একটি বিকশিত, আত্মনির্ভর বিহার গড়ে তোলার পথ প্রশস্ত করবে। অমিত শাহ আরও জানান, অনুপ্রবেশকারী এবং নকশালপন্থীদের সুরক্ষা প্রদান করে যারা দেশের নিরাপত্তা নিয়ে খেলছে তাদের এই নির্বাচনে শিক্ষা দিন। রাজ্যের প্রতিটি বাসিন্দাকে আধুনিক শিক্ষা, দরিদ্রদের কল্যাণ এবং যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদানের পাশাপাশি বিহারের গর্ব পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

বিহারে ভালো ও শক্তিশালী সরকার গঠনের আহ্বান জানালেন রাম কৃপাল যাদব। দানাপুর বিধানসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী রাম কৃপাল যাদব বৃহস্পতিবার সকালে পাটনার একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। নিজেও ভোট দিয়েছেন, জনগণকেও রেকর্ড সংখ্যায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। রাম কৃপাল যাদব বলেন, আমি সকল ভোটারদের কাছে আবেদন করছি, বুথে যান, ভোট দিন এবং একটি ভালো ও শক্তিশালী সরকার গঠন করুন। দানাপুরের জনপ্রতিনিধিরা সেখানে কোনও কাজ করেননি। সেখানে উন্নয়নমূলক কাজ স্থগিত রয়েছে। মানুষ চিন্তিত এবং সেখানে অপরাধের ঘটনা বাড়ছে। তাঁরা এর থেকে মুক্তি চায়। এটি তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।

বিহার নির্বাচনে মহাগঠবন্ধনের জয়ের ব্যাপারে আস্থা প্রকাশ করলেন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সাংসদ মিসা ভারতী। তিনি এদিন বলেন, যুবসমাজ চায় রাজ্যের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করতে, এনডিএ জোটের সরকার গত ২০ বছর ধরে জনগণকে প্রতারণা করছে বলেও এদিন অভিযোগ করেন তিনি। এও বলেন, আমাদের (মহাগঠবন্ধন) সরকার অবশ্যই হবে এখানে।

সপরিবারের এদিন ভোট দেন বিকাশশীল ইনশান পার্টির প্রধান মুকেশ সাহানি। বৃহস্পতিবার সকালে বিহারের দ্বারভাঙ্গায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হন মহাজোটের উপমুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী মুকেশ সাহানি। ভোট দেওয়ার জনগণকেও বিপুল সংখ্যায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মুকেশ সাহানি বলেন, আমার বার্তা হল, প্রত্যেকেরই ঘর থেকে বের হয়ে ভোট দেওয়া উচিত - একটি উন্নত সরকার এবং উন্নত বিহারের জন্য। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য ভোট দিন। এই দেশ আপনার, কোনও রাজনীতিকের নয়। জনগণ এই দেশের মালিক। তাঁরা প্রতি ৫ বছর অন্তর ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়, তাই আপনার ভোটাধিকার ব্যবহার করুন।

নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে গণতন্ত্রের মহাপর্বে যোগ দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা নিত্যানন্দ রাই। বৃহস্পতিবার সকালে বিহারের হাজিপুরের একটি ভোটদান কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন নিত্যানন্দ রাই ও তাঁর স্ত্রী। ভোট দেওয়ার পর নিত্যানন্দ বলেন, আমাদের সকলেরই গণতন্ত্রের উৎসবটি অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে উদযাপন করা উচিত। আজ বিহারে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমরা সকল ভোটারকে ভোট দেওয়ার এবং এই 'লোকতন্ত্রের মহাপর্ব' উদযাপন করার জন্য অনুরোধ করছি।

বৃহস্পতিবার বিহারের নির্বাচন প্রসঙ্গে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা বলেন, বিহারের মানুষ অবশ্যই জানেন তাঁদের কোনটা প্রয়োজন। গত ১৫-২০ বছরে তাঁরা রাজ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখেছেন। তাঁরা পুরোপুরি বুঝতে পেরেছেন যে, বিহারের উন্নয়ন শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ-র নির্দেশনায় এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সরকারের পক্ষেই করা সম্ভব। আমি আত্মবিশ্বাসী যে এনডিএ এখানে পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করবে। এনডিএ জোট গতবারের থেকেও বেশি আসন পাবে ও ভোটে জিতবে।

বিহারের নির্বাচন প্রসঙ্গে জেডি(ইউ) সাংসদ সঞ্জয় কুমার ঝা বলেন, আমরা স্পষ্টতই জনগণের সমর্থনের স্রোত দেখতে পাচ্ছিলাম, বিশেষ করে যখন আমরা দুদিনের পথযাত্রায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলাম, সেসময়ে। মানুষ যেভাবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করছিলেন এবং তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন, তাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে জনগণ সম্পূর্ণরূপে এনডিএ-র পক্ষে। আমার মনে হচ্ছে, মহিলা ভোটাররা বিপুল সংখ্যায় ভোট দিচ্ছেন। কারণ, এনডিএ এবং নীতীশ কুমারের উপর তাঁদের আস্থা রয়েছে। তিনি বিহারের জনসাধারণের কাছে রাজ্যের উন্নয়নের জন্য ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে বলেন, জনগণকে রাজ্যে সুশাসনের জন্য ভোট দিতে হবে। এই নির্বাচন কেবল আগামী পাঁচ বছর কেমন হবে তা নির্ধারণ করার জন্য নয়, বরং আগামী ২৫ বছরে রাজ্যটি কোথায় গিয়ে পৌঁছবে তা নির্ধারণ করার জন্য এবারের ভোট।

বিহার বিধানসভা নির্বাচনে সস্ত্রীক ভোট দেন বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ। বৃহস্পতিবার সকালে পাটনার একটি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ ও তাঁর স্ত্রী মায়া শঙ্কর। ভোট দেওয়ার পর রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, বিহারের ফলাফল ঐতিহাসিক ও নির্ণায়ক হবে।

রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, জনগণ অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে ভোট দিচ্ছেন। তাঁরা তা অব্যাহত রাখবেন। তিনি (তেজস্বী যাদব) কেবল ভোটের জন্যই ভোট দিয়েছেন। তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। বিহারের ফলাফল ঐতিহাসিক এবং নির্ণায়ক হবে। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর ভোট চুরির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। তাঁর সমস্ত দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি মিথ্যা বলার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ।

বিহারে ভোটগ্রহণের মধ্যে একগুচ্ছ অভিযোগ আনে আরজেডি। তাঁদের দাবি, ইচ্ছে করেই আস্তে আস্তে ভোট করানো হচ্ছে। এছাড়াও ভোটকেন্দ্রে বিদ্যুৎ বিভ্রাটেরও অভিযোগ এনেছে আরজেডি। আরজেডি-র সমস্ত অভিযোগ খারিজ করেছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর থেকে জানানো হয়েছে, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর। বিহারের সমস্ত ভোটকেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। ভারতের নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং নিরবিচ্ছিন্নভাবে সম্পন্ন করার জন্য সমস্ত মানসম্মত প্রোটোকল অনুসরণ করছে। এই ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারণার কোনও ভিত্তি নেই।

পাটনার বখতিয়ারের একটি বুথে ভোট দিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার। ভোট দেওয়ার পর সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহিত করেন নীতীশ। তিনি লেখেন, “গণতন্ত্রে ভোটদান কেবল আমাদের অধিকারই নয়, এটা আমাদের দায়িত্বও বটে। তিনি আরও জানান, আজ বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম পর্যায়ের ভোটগ্রহণ চলছে। সব ভোটারের কাছে আমার আবেদন, আপনারা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন। অন্যদেরও ভোটদানে উৎসাহিত করুন।”

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা শিবরাজ সিং চৌহান। বিহারের ভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মহাজোট পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে, এনডিএ-র 'মহাবিজয়' নিশ্চিত। বৃহস্পতিবার শিবরাজ বলেন, রাহুল গান্ধী ইতিমধ্যেই নিজের পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন। ভোটের একদিন আগে, তিনি ভোট চুরির অভিযোগ করেছেন। জনগণ তাঁদের ভোট দেয় না এবং তিনি বলেছেন যে ভোট চুরি হয়েছে। মানুষ মাছ ধরা বা জিলিপি তৈরির জন্য ভোট দেবে না। তাই, মহাজোট ইতিমধ্যেই পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে এবং এনডিএ-র 'মহাবিজয়' নিশ্চিত। শিবরাজ আরও বলেন, আজকের ভোট এমনিতেই এনডিএ-র বিশাল জয়ের গল্প বলছে। বিহারের মানুষ 'সুশাসন', উন্নয়ন এবং জনকল্যাণের জন্য ভোট দিচ্ছে। নিজের শাসনকালে লালু শাসন নয়, নিপীড়ন করেছেন। ভয়, দুর্নীতি, ক্ষুধা বিহারের পরিচয় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এখন ভয় নেই বরং আস্থা আছে, দুর্নীতি নেই বরং উদ্ভাবন আছে, জঙ্গলরাজ নেই বরং সুশাসন আছে। জনকল্যাণের ইতিহাস লেখা হয়েছে।

বিহারের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করতে আসেন সাতটি দেশের প্রতিনিধিরা। নির্বাচন কমিশনের আন্তর্জাতিক নির্বাচক পরিদর্শক কর্মসূচি বা ‘ইন্টারন্যাশনাল ইলেক্টরস ভিসিটর প্রোগ্রাম’-এ সাতটি দেশের ১৬ জন প্রতিনিধি নির্বাচনের সাক্ষী হতে এসেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ইন্দোনেশিয়া, কলম্বিয়া, ফিলিপিন্স, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, দক্ষিণ আফ্রিকা ও থাইল্যান্ডের প্রতিনিধিরা। বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, এদিন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিরা সারন জেলার সোনপুরে নির্বাচন ও ভোটদান প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন। আর ফিলিপিন্স-এর প্রতিনিধিরা মুজাফফরপুর জেলায় নির্বাচন এবং ভোটদান প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিহারের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করতে কলম্বিয়ার একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলও নালন্দার একটি মডেল ভোটগ্রহণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেখানে সামগ্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া, নির্বাচনী আধিকারিকদের কার্যক্রম, শিশুদের জন্য ক্রেশের সুবিধা, বিশেষভাবে সক্ষম ভোটারদের জন্য হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা পর্যবেক্ষণ করেন।

বিহার বিধানসভা নির্বাচনে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা এলজেপি (আরভি) প্রধান চিরাগ পাসওয়ান। বৃহস্পতিবার বিহারের খাগাড়িয়ায় একটি পোলিং বুথে গিয়ে ভোট দিয়েছেন চিরাগ। পরে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, আমি নিজের ভোট দিয়ে আমার দায়িত্ব পালন করেছি এবং আমি চাই প্রত্যেকেই নিজের পছন্দের সরকার নির্বাচন করার জন্য একই কাজ করুক। কংগ্রেস নেতা রাহুলকে কটাক্ষ করে চিরাগ বলেন, যদি মহাজোট জনগণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য ততটা প্রচেষ্টা করত, যতটা অজুহাত খুঁজে বের করার জন্য করছে, তাহলে তাঁদের এই অজুহাতের প্রয়োজন হত না। মহাজোট নির্বাচনে হেরে যাচ্ছে। তাঁরা এসআইআর-কে ইস্যু করে, রাহুল গান্ধী প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করছেন, যদি এতই ভুল হচ্ছে, তাহলে তাঁরা আদালতে যান না কেন?

এদিন কয়েকটি নির্দিষ্ট বুথে ধীরে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ খারিজ করে চিরাগ বলেন, ভোট চলাকালীন বিরোধীরা সর্বদা মিথ্যা অভিযোগ করে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসওয়ান বলেন, ভোটের সময় আলাউলির মানুষ সবসময় মনে রাখবে কে আমার বাবা রাম বিলাস পাসওয়ানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল... পরিবার ভাঙার সিদ্ধান্ত আমার 'চাচার' ছিল... তিনি সবসময় বলতেন যে তিনি কখনও পুনর্মিলন চান না... আমি কখনওই ভুলতে পারি না যে আমার ছোট (খুড়তুতো) ভাই আমার মাকে কীভাবে অপমান করেছিল। তিনি এদিন বিহারের ভোটারদের গণতন্ত্রের উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি সকলের কাছে আবেদন করছি যে সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে আসুন এবং তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন। এই ভোট আপনার ভবিষ্যতকে আরও উন্নত করতে পারে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে বিহারে চলছে বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। বিহারের ১৮টি জেলার ১২১টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হচ্ছে এদিন। ১,৩১৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য ইভিএম-বন্দি হবে। এই ভোট নিয়ে এবার শুভেচ্ছা এলো সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। প্রায় ৭ কোটি ৫০ লক্ষ ভোটারকে নিয়ে বিহার নির্বাচনের জন্য শুভেচ্ছা জানালেন দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচন কমিশনের চেয়ারপার্সন মোসোথো মোপিয়া। তাঁর কাছ থেকে ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের কাছে হঠাৎই ফোন আসে। মোসোথো উল্লেখ করেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার সংসদের সদস্যেরা বিশ্বের অন্যতম স্বচ্ছ এবং দক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে শীঘ্রই ভারত সফর করতে চান।

---------------

হিন্দুস্থান সমাচার / সৌম্যজিৎ




 

 rajesh pande