
গুয়াহাটি, ২০ ডিসেম্বর (হি.স.) : আজ শনিবার অপরাহ্ন প্ৰায় তিনটা নাগাদ দুদিনের অসম সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দুদিনের সফরকালে আজ তিনি গুয়াহাটির লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১.৪ লক্ষ বৰ্গমিটার ব্যাপী বিস্তৃত, চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত টার্মিনালের উদ্বোধন করবেন। এছাড়া আগামীকাল উজান অসমের নামরূপে ১২ লক্ষ মেট্রিক টন উৎপাদনক্ষম ইউরিয়া সার কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন সহ কয়েকটি কাৰ্যসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন প্ৰধানমন্ত্ৰী। দুদিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন এবং শিলান্যাস ছাড়াও ঐতিহাসিক অসম আন্দোলনের শহিদ স্মারকক্ষেত্ৰে গিয়ে ৮৬০ জন শহিদকে শ্রদ্ধা জানাবেন।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, আজ বিকালে নিৰ্ধারিত ২:৪৫ মিনিটে পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে ২:৫৫ মিনিটে বিমানবন্দরে ১.৪ লক্ষ বৰ্গমিটার ব্যাপী বিস্তৃত নবনির্মিত টার্মিনাল ভবনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। প্ৰসঙ্গত বছরে ১.৩ কোটি যাত্ৰী পরিচালনাযোগ্য ডিজাইনকৃত এবং অত্যাধুনিক রানওয়ে, এয়ারফিল্ড সিস্টেম, অ্যাপ্ৰন এবং ট্যাক্সি ওয়ারে উন্নীত করা হয়েছে গুয়াহাটি বিমানবন্দরে নবনির্মিত টার্মিনাল। বলা হচ্ছে, এই টার্মিনালটি ভারতের মধ্য সর্বাধিক উন্নত ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হয়েছে।
উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলে স্থানীয়ভাবে উপলব্ধ প্ৰায় ১৪০ মেট্ৰিক টন বাঁশ দিয়ে তৈরা করা হয়েছে টাৰ্মিনাল ভবনে। একে সাজানো হয়েছে কাজিরঙার সবুজ প্ৰাকৃতিক দৃশ্য, জাঁপি আকৃতি, মোহনীয় গণ্ডারের প্ৰতীক। এছাড়া অসমের জাতীয় অর্কিড-ফুল কপৌকে প্ৰতিফলিত করে ৫৭ প্রজাতির অৰ্কিডের আধারে স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। সঙ্গে নিৰ্মাণ করা হয়েছে প্ৰায় এক লক্ষ স্থানীয় প্ৰজাতির উদ্ভিদ ব্যবহার করে এক অনন্য সুন্দর ‘স্কাই ফরেস্ট’। টাৰ্মিনালটি বিমানযাত্ৰীদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা এবং ডিজিটাল উদ্ভাবনের ক্ষেত্ৰে নতুন মানদণ্ড নিৰ্ধারণ করেছে। দ্ৰুত, নন-ইন্ট্ৰাসিভ সিকিউরিটি স্ক্ৰিনিঙের জন্য ফুল-বডি স্ক্যানার, ‘ডিজিটালযাত্ৰা’-চালিত কন্টেক্টলেস ট্ৰ্যাভেল, স্বয়ংক্ৰিয় ব্যাগেজ পরিচালনা, ফাস্ট-ট্ৰ্যাক ইমিগ্ৰেশন এবং এআই-চালিত এয়ারপোর্ট অপারেশনের নিরবচ্ছিন্ন, নিরাপদ ও ফলপ্ৰসূ যাত্ৰা নিশ্চিত করবে নবনির্মিত টার্মিনালটি।
এর পর অসমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈয়ের ৮০ ফুট উঁচু পূর্ণায়ব মূর্তি উন্মোচন করবেন তিনি। উল্লেখ্য, কংগ্ৰেস নেতা গোপীনাথ বরদলৈকে মরণোত্তর ভারতরত্ন প্রদান করেছিল অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকার। বিকাল ৪:১৫ মিনিটে নতুন টাৰ্মিনাল পরিদৰ্শন কর সেখানে আয়োজিত এক জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি।
বিমানবন্দর চত্বরে অনুষ্ঠিত জনসভা শেষে বিকাল ৪:৫৫ মিনিটে তিনি রওয়ানা হবেন বশিষ্ঠ এলাকায় অবস্থিত বিজেপির প্রদেশ সদর দফতর অটলবিহারী বাজপেয়ী ভবনের উদ্দেশ্যে। বিকাল ৫:১৫ মিনিটে বাজপেয়ী ভবনে গিয়ে দলীয় কাৰ্যকৰ্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী।
খানাপাড়ায় অবস্থিত কইনাধরা রাজ্য অতিথিশালায় নৈশযাপন করে আগামীকাল রবিবার সকাল ৯:৪৫টায় গুয়াহাটির বরাগাঁওয়ে অবস্থিত শহিদ স্মারকক্ষেত্ৰে গিয়ে অসম আন্দোলনে শহিদদের শ্ৰদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করবেন প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্র মোদী। শ্ৰদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপনের পর ব্রহ্মপুত্র নদে একটি চলমান ফেরিতে ২৫ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর সঙ্গে ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ শীর্ষক এক বিশেষ কাৰ্যসূচিতে অংশগ্ৰহণ করবেন মোদী। ব্রহ্মপুত্র পারাপারের সময় প্রস্তাবিত মতবিনিময়ে মাধ্যমে অসমে এক অনন্য নদী পর্যটনের অনুঘটক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে সরকার। প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার এই তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা জানিয়েছিলেন, গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কাজিরঙা জাতীয় উদ্যান পরিদর্শন করেছিলেন। যার ফলে কাজিরঙা ন্যাশনাল পার্কে বেড়েছে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ভিড়।
এই অনুষ্ঠানের পর তিনি উজান অসমের ডিব্রুগড় জেলার অন্তর্গত নামরূপের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। নামরূপে গিয়ে তিনি ব্ৰহ্মপুত্ৰ ভ্যালি ফাৰ্টিলাইজার কৰ্পরেশন লিমিটেড চত্বরে প্রস্তাবিত ১২ লক্ষ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদনক্ষম নতুন ব্ৰাউনফিল্ড অ্যামনিয়া-ইউরিয়া সার প্ৰকল্পে ভূমিপূজন করবেন।
১২,৬০০ কোটির বেশি টাকা ব্যয়সাপেক্ষে প্রস্তাবিত প্ৰকল্পটি অসম সহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সারের প্ৰয়োজনীয়তা পূরণ, আমদানির ওপরত নিৰ্ভরশীলতা হ্ৰাস, বহু কর্মসংস্থানের সুযোগ সহ আঞ্চলিক অৰ্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্ৰে অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস