




গুয়াহাটি, ২১ ডিসেম্বর (হি.স.) : গুয়াহাটির বরাগাঁওয়ে নবনির্মিত ‘শহিদ স্মারক ক্ষেত্র’-এ অসম আন্দোলনের ৮৬০ শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। আজ রবিবার সকালে শহিদ স্মারক ক্ষেত্রে গিয়ে অসম আন্দোলনের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐতিহাসিক আন্দোলন অসমের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছে।
এই স্মারকে ছয় বছরব্যাপী ‘বহিরাগত বিতারণ’ (অবৈধ বাংলাদেশি-বিতারণ)-এর লক্ষ্যে ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সংগঠিত অসম আন্দোলনে আত্মবলিদানকারী ৮৬০ জন শহিদের স্মরণ করা হয়েছে। তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এখানে একটি অনন্তকালের জন্য প্রজ্বলিত প্রদীপ রয়েছে। প্ৰজ্বলিত এই প্ৰদীপ ত্যাগ ও দৃঢ়তা, জ্ঞান, আশা, ইতিবাচকতা ও শুভ শক্তির প্রতীক, যা অন্ধকার তথা অজ্ঞানতা) দূর করা এবং সনাতন সংস্কৃতিতে দেবত্ব ও শুভ কর্মের প্ৰতিফলন।
অসমের রাজ্যপাল লক্ষ্মণপ্রসাদ আচার্য, মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, রাজ্যের মন্ত্রী অগপ সভাপতি অতুল বরা এবং রাজ্যের প্রশাসনিক ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদী শহিদদের গ্যালারি পরিদর্শন করেন। গ্যালারিতে অসম আন্দোলনে নিহতদের আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। তিনি আন্দোলনের প্রথম শহিদ হিসেবে স্বীকৃত খর্গেশ্বর তালুকদারের মূর্তিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। খর্গেশ্বর তালুকদার ১৯৭৯ সালের ১০ ডিসেম্বর শহিদ হয়েছিলেন।
‘শহিদ স্মারক ক্ষেত্র’-এ শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গুয়াহাটির পশ্চিম বরাগাঁওয়ে অবস্থিত শহিদ স্মারক ক্ষেত্র পরিদর্শন করা আমার কাছে ছিল একটি অত্যন্ত আবেগঘন অভিজ্ঞতা, যা অসম আন্দোলনের সময় দেশভক্তদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘শহিদ স্মারক ক্ষেত্রে শ্রদ্ধা জানিয়ে শহিদ-প্রণাম জ্যোতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেছি। শহিদ গ্যালারির মধ্য দিয়ে হাঁটা ছিল এক গভীরভাবে আবেগস্পর্শী অভিজ্ঞতা, যা অসম আন্দোলনের সময় শহিদ হওয়া বীর শহিদদের সাহস ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’
শহিদদের আত্মত্যাগের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী মোদী অসমের অগ্রগতির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার প্রতি তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
প্রসঙ্গত, প্রায় ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই স্মারকটি স্মৃতিচারণার পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততার স্থান হিসেবেও নকশা করা হয়েছে। এই কমপ্লেক্সে জলাশয়, একটি অডিটোরিয়াম, প্রার্থনা কক্ষ, সাইকেল ট্র্যাক এবং সাউন্ড-অ্যান্ড-লাইট শোর সুবিধা রয়েছে, যার মাধ্যমে অসম আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ও রাজ্যের বিস্তৃত ইতিহাস তুলে ধরা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার অসম আন্দোলনের উত্তরাধিকার সংরক্ষণে তাঁদের গুরুত্বারোপের বিষয়টি স্পষ্ট করেছে, যা আজও অসমের আধুনিক ইতিহাসের এক সংজ্ঞায়িত অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গত ১০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, রাজ্যের দুই মন্ত্রী তথা অগপ সভাপতি এবং কার্যনির্বাহী সভাপতি যথাক্রমে অতুল বরা ও কেশব মহন্ত, মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারিদের সঙ্গে নিয়ে ‘শহিদ স্মারক ক্ষেত্র’-এর উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস