

বিলপারে নগর পরিকাঠামো উন্নয়নে রাজ্য সরকারের জনকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পুনরুল্লেখ জলসম্পদ মন্ত্রীর
শিলচর (অসম), ২৩ ডিসেম্বর (হি.স.) : শিলচরের নগর পরিকাঠামো আরও সুদৃঢ় করা এবং দীর্ঘদিনের নাগরিক সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে আজ মঙ্গলবার রাজ্যের জলসম্পদ ও জনসংযোগ বিভাগের মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা বিলপাড়ের রাধামাধব আখড়ার নিকটবর্তী সিঙ্গিরখালের ওপর ৪.৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আরসিসি নর্দমা নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য শিলচরের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করা এবং শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকায় দুই ও তিন চাকার যানবাহনের নির্বিঘ্ন চলাচল সহজ করা।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে ছিলেন মন্ত্রী কৌশিক রায়, শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী, কাছাড়ের জেলাশাসক মৃদুল যাদব সহ ঊর্ধ্বতন আধিকারিকবৃন্দ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৪৮০ মিটার দীর্ঘ আরসিসি নর্দমা নির্মাণের পাশাপাশি একটি পাকা চলাচল পথ গড়ে তোলা হবে, যা বিলপাড়, ফাটক বাজার এবং সংলগ্ন নিউ মার্কেট এলাকার বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও যাতায়াতকারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য স্বস্তি বয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা বলেন, এই প্রকল্পটি কেবলমাত্র একটি নির্মাণমূলক উদ্যোগ নয়, বরং শিলচরের মানুষের দৈনন্দিন জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত একটি দীর্ঘমেয়াদি নাগরিক সমাধান। তিনি বলেন, বিলপাড় ও ফাটক বাজারের মতো শহর এলাকাগুলিতে ব্যাপক বাণিজ্যিক ও পথচারী চলাচল রয়েছে এবং নিকাশি ব্যবস্থার সমস্যাগুলি জননিরাপত্তা, যান চলাচল ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। বৈজ্ঞানিক ও টেকসই পরিকাঠামোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে মন্ত্রী বলেন, অসম সরকার অস্থায়ী ব্যবস্থার পরিবর্তে সুপরিকল্পিত ও স্থায়ী সুফল প্রদানকারী প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে সচেতনভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
মন্ত্রী জানান, অনুমোদিত ৪.৮০ কোটি টাকার বরাদ্দ মানসম্মত পরিকাঠামো উন্নয়নে সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। সিঙ্গিরখালের ওপর আরসিসি নর্দমা নির্মাণ এবং দুই ও তিন চাকার যানবাহনের জন্য পৃথক চলাচল পথের ব্যবস্থা বর্ষাকালে দ্রুত জল নিষ্কাশন নিশ্চিত করার পাশাপাশি সারা বছর নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন যাতায়াতের সুযোগ করে দেবে। এ ধরনের সমন্বিত পরিকল্পনাই শিলচরের মতো ক্রমবর্ধমান শহরের দীর্ঘমেয়াদি নগর উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বর্তমান অসম সরকারের উন্নয়ন দর্শনের পুনরুল্লেখ করে মন্ত্রী হাজরিকা বলেন, সকল উদ্যোগের কেন্দ্রে রয়েছে জনকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা, যেখানে বাস্তব পরিস্থিতি ও দীর্ঘদিনের জনদাবির ভিত্তিতে প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বরাক উপত্যকা সহ রাজ্যের সর্বত্র সমানভাবে পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে, যাতে সুষম আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য উন্নত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যায়।
বক্তব্যের শেষে মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা আশ্বাস দেন, প্রকল্পটি সময়মতো এবং গুণগত মান বজায় রেখে সম্পন্ন করার জন্য জলসম্পদ দফতর নিয়মিতভাবে নজরদারি করবে। নির্মাণকালীন সময়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতা কামনা করে তিনি নাগরিকবান্ধব, দীর্ঘস্থায়ী ও মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে আরও নিরাপদ, সহজ ও মর্যাদাপূর্ণ করে তোলার লক্ষ্যে এমন উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণে সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
এর আগে অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী আজকের দিনকে বিলপার ও আশপাশের বাণিজ্যিক এলাকার মানুষের জন্য আনন্দের ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের দিন হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ফাটক বাজার ও নিউ মার্কেট এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা বিশেষত বর্ষাকালে দীর্ঘদিন ধরে জল জমার সমস্যায় ভুগে আসছেন এবং এই নতুন প্রকল্পটি তাঁদের জন্য স্থায়ী সমাধান এনে দেবে। শিলচরের মানুষের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থাকার জন্য মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা এবং সমর্থনের জন্য মন্ত্রী কৌশিক রায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে এই উদ্যোগকে এলাকার জন্য এক যুগান্তকারী উন্নয়ন হিসেবে অভিহিত করেন।
বিধায়ক আরও বলেন, কর্মসূচিটি সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য দলীয় কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সক্রিয় সহযোগিতা অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং উন্নয়নমূলক কাজের কার্যকর বাস্তবায়নে জনঅংশগ্রহণ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা এই উদ্যোগের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস