অসমে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে চালু সর্ববৃহৎ মহিলা উদ্যোক্তা প্রকল্প, প্রথম পর্যায়ে উপকৃত ২৭,০৪,১৬১ জন
গুয়াহাটি, ১ এপ্রিল (হি.স.) : আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে অসমের প্রায় ২৮ লক্ষ মহিলাকে স্ব-কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়ে উপকৃত করতে অসম সরকার আজ রাজ্যের সর্ববৃহৎ উদ্যোক্তা সহায়তা উদ্যোগ 'মুখ্যমন্ত্রী মহিলা উদ্যমিতা অভিযান' শীর্ষক এক প্রকল্প চালু করেছ
জনৈক সুবিধাভোগীর হাতে মুখ্যমন্ত্রী মহিলা উদ্যমিতা অভিযান প্রকল্পের চেক প্রদান করছেন মুখ্যমন্ত্রী


মুখ্যমন্ত্রী মহিলা উদ্যমিতা অভিযান প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের একাংশ


গুয়াহাটি, ১ এপ্রিল (হি.স.) : আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে অসমের প্রায় ২৮ লক্ষ মহিলাকে স্ব-কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়ে উপকৃত করতে অসম সরকার আজ রাজ্যের সর্ববৃহৎ উদ্যোক্তা সহায়তা উদ্যোগ 'মুখ্যমন্ত্রী মহিলা উদ্যমিতা অভিযান' শীর্ষক এক প্রকল্প চালু করেছে।

আজ মঙ্গলবার বিহালিতে 'মুখ্যমন্ত্রী মহিলা উদ্যমিতা অভিযান' (চিফ মিনিস্টাৰ্স মহিলা এনটারপ্রেনিয়ার্স স্কিম) শীর্ষক প্রকল্প চালু করেছেন ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। এই উদ্যোগের বলে গ্রামীণ মহিলাদের আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়নকে অনুঘটক করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বিহালি বিধানসভা নির্বাচনী এলাকায় প্ৰথম পর্যায়ের এই প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথম পর্যায়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে ২৭,০৪,১৬১ জন মহিলাকে নির্বাচিত করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুসারে আজ ড. শর্মা ২৩,৩৭৫ জন মহিলাকে সরাসরি ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদানের সুযোগ করে দিয়েছেন, যা গ্রামীণ মহিলাদের জন্য একটি রূপান্তরমূলক আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা করবে বলে মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এ উপলক্ষ্যে বিশাল সমাবেশে ড. শৰ্মা বলেন, মহিলাদের আর্থিক স্বাধীনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এই উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। সে অনুযায়ী ‘আমরা প্রথম বছরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অংশ হিসেবে নিয়োজিত মহিলাদের পৃথকভাবে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করছি।’ তিনি বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নের জন্য রাজ্যের অন্যতম বৃহৎ এই প্রকল্প সুবিধাভোগীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছোট ছোট উদ্যোগ শুরু করতে তৈরি করা হয়েছে।’

ড. শর্মা বলেন, তাঁর সরকার গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী স্বনির্ভর গোষ্ঠীভুক্ত মহিলাদের জন্য এই প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পকে ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা উদ্যমিতা' বা চিফ মিনিস্টাৰ্স মহিলা এনটারপ্রেনিয়ার্স স্কিম বলে নামকরণ করা হয়েছে। বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁরা গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী মহিলাদের উদ্যোগী হিসেবে রূপান্তর করতে চান। তাঁদের ‘লাখপতি’ তৈরির লক্ষ্য সরকারের। তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিন দফায় মহিলাদের অর্থ-সাহায্য করা হবে।

বিস্তৃত তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে আজ যে সকল মহিলাকে টাকা দেওয়া হয়েছে বা হবে তাঁরা একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করবেন। তাঁরা তাঁদের ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি গ্রুপ তৈরির পরিকল্পনা করবেন।

তিনি বলেন, এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পৰ্যায়ে যে সকল মহিলা প্রথম পৰ্যায়ে প্ৰদত্ত তহবিল বিচক্ষণতার সাথে ব্যবহার করবেন সেই সকল সুবিধাভোগী ব্যাংক থেকে ১২,৫০০ টাকা করে ঋণ পাবেন। তারপর সরকার তাঁদের অতিরিক্ত ১২,৫০০ টাকা দেবে। এতে মোট টাকার পরিমাণ হবে ২৫ হাজার। তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে যে ঋণ নেওয়া হবে, তা ফেরত দিতে হবে। তবে সরকার প্রদত্ত টাকা ফেরত দিতে হবে না। এর সঙ্গে মহিলারা তিন বছরের মেয়াদে ৩৫ হাজার টাকা করে পাবেন। এই আর্থিক কাঠামো কেবল ব্যবসায়িক স্থায়িত্বকে সহজতর করবে না, বরং উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণকেও সক্ষম করবে। যার ফলে পরবর্তী তৃতীয় পর্যায়ে মোট অনুদানের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়বে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পটি গ্রামীণ অর্থনীতির বৈচিত্র্য আনতে সহায়ক হবে। এর মাধ্যমে মহিলাদের জন্য ক্ষুদ্র-উদ্যোগ, কৃষি, পশুপালন, তাঁত এবং হস্তশিল্প সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ তৈরি হবে। উদ্যোগটি কৌশলগতভাবে অসমের উৎপাদন-চালিত অর্থনীতিতে মহিলাদের একীভূত করার লক্ষ্যে নকশায়িত করা হয়েছে, যাতে তাঁরা পরিবর্তনের এক শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে রূপান্তরিত হন।

কথার টানে বিগত দিনের কংগ্রেস সরকারকে ঠুকতে ভুলেননি মুখ্যমন্ত্ৰী। তিনি বলেন, ‘কংগ্ৰেসের শাসনামলে অঙ্গনওয়াড়ির চাকরি পেতে ঘুষ দিতে হতো। কংগ্ৰেস আমজনতাকে ভুল পথে পরিচালিত করছে। চাকরি দেব চাকরি দেব বলে কেবল ঘোরাফেরা করত কংগ্রেস সরকার। টাকার বিনিময়ে যাদের চাকরি দেওয়া হয়েছিল তাদের সময়মতো বেতনও দেয়নি। যার ফরে আজ কংগ্ৰেসিরা গর্তে পড়েছেন। কংগ্ৰেসকে একেবারে গর্তে ফেলে দিতে হবে। কংগ্ৰেস আমলে চাকরির জন্য সর্বনিম্ন ১০ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়া হতো। লুঙ্গি-ধুতির নামেও ঘুষ নিত কংগ্ৰেস।’

মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, ‘এবার আমরা কৃষকদের কাছ থেকে ২৫৫০ টাকায় ধান কিনেছি। আগামী বছর ২৬০০ টাকায় ধান কেনার চেষ্টা করব। তাই কৃষকরা এখন আর খেত এমনিতে ফাঁকা ফেলে রাখবেন না। এখন থেকে চা পাতার চেয়ে ধান বিক্রি করে বেশি লাভ পাবেন কৃষকরা।’

মহিলা উদ্যমিতা চেক প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্ৰী মন্তব্য, ‘চেক নিয়েই আপনারা মোবাইল ফোন কিনতে দোকানে যাবেন না। মোবাইল কিনলে সোনার ডিম পাড়া হাঁসটি মরে যাবে। হাঁসটি থেকে আমরা আর সোনার ডিম পাব না। এই ১০ হাজার টাকায় দুটি ডিম পাড়বে। একটি ডিম ২৫ হাজার টাকার এবং একটি ৫০ হাজার টাকার।’

মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী ও যাঁরা সাধারণ এবং ওবিসিভুক্ত, তাঁদের তিনটির বেশি সন্তান থাকা চলবে না। তিনি বলেন, যদি কোনও মহিলার চারটি সন্তান থাকে, তবে তাঁকে এই প্রকল্পের জন্য অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হবে৷ অবশ্য, মরান, মটক এবং চা বাগান জনগোষ্ঠীয় মহিলারা চার সন্তান পর্যন্ত ছাড় পাবেন, যদিও তাঁরাও ওবিসির মধ্যে পড়েন৷ তিনি জানান, তফশিলি জাতি এবং তফশিলি উপজাতিভুক্ত মহিলাদের চারটি সন্তান থাকলেও এই প্রকল্পের জন্য তাঁরা যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তাই আজ তিনের বেশি সন্তান আছে এমন সুবিধাভোগীদের মহিলা উদ্যমিতার চেক দেওয়া হয়নি।

মুখ্যমন্ত্ৰী আরও বলেন, ‘অসমের মহিলা গোটগুলো ১৭ হাজার কোটি টকা ব্যাংক ঋণ দিয়া হয়েছে। ৯৯ শতাংশ মহিলা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেছেন। আজকের অসমের মহিলাদের এটাই শক্তি।’

হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস




 

 rajesh pande