উত্তরপাড়া, ২০ মে (হি.স.) :উত্তরপাড়া পৌরসভার সাফাই কর্মীদের লাগাতার ধর্মঘট চতুর্থ দিনে পড়ল আজ। এর জেরে গোটা শহর কার্যত আবর্জনার স্তূপে ঢেকে যাচ্ছে। পথে-ঘাটে যত্রতত্র পড়ে থাকা আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব। নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া-সহ বিভিন্ন মারণ রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায়। সাফাই কর্মীদের অভিযোগ, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে বেতন বাড়েনি। সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম রোজগার থেকে তারা বঞ্চিত। ঠিকাদার সংস্থা প্রতি মাসে ২৭ দিন কাজ করিয়ে মজুরি দেয় মাত্র ২৫ দিনের। আরও গুরুতর অভিযোগ, কর্মীদের বেতন থেকে টাকা কাটলেও সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে সেই টাকা জমা দেওয়া হয় না। বহুবার মৌখিকভাবে অভিযোগ জানানো হলেও না পৌরসভা, না ঠিকাদার সংস্থা, কেউই কর্ণপাত করেনি। তাই বাধ্য হয়েই ধর্মঘটের পথে হাঁটতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত কর্মীরা।
এই ধর্মঘটের জেরে শহরজুড়ে সাফাই ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বাড়ি বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহের জন্য পৌরসভা কর নির্ধারণ করলেও পরিষেবা বন্ধ থাকায় ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, নাগরিকদের কর নেওয়ার পরও পরিষেবা বন্ধ থাকায় পৌরসভা কেন চুপ করে আছে? বিষয়টি নিয়ে বিজেপি নেতা পঙ্কজ রাই বলেন, ‘‘দশ বছর আগে আমরাই এই সাফাই কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেছিলাম। তখন শোনা হয়নি। এখন কর্মীরা পেটের দায়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে।’’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ঠিকাদার সংস্থার দুর্নীতির কথা চেয়ারম্যান থেকে সিআইসি— সকলেই জানেন, অথচ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তাঁর দাবি, ‘‘যাঁরা শহরকে পরিষ্কার রাখেন, তাঁদের প্রাপ্য সম্মান ও বেতন নিশ্চিত করুক পৌরসভা।’’ অন্যদিকে, উত্তরপাড়া পৌরসভার সাফাই বিভাগের সিআইসি ও টাউন তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি ইন্দ্রজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে সাফাই কর্মীদের কিছু সমস্যা হয়েছে। কিন্তু তারা পৌরসভাকে কিছু না জানিয়েই ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’’ তিনি জানান, ঠিকাদার সংস্থাকে ইতিমধ্যেই শোকজ করেছে পৌরসভা। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। সর্বোপরি, সাফাই কর্মীদের লাগাতার ধর্মঘটে উত্তরপাড়া শহরে জঞ্জাল সাফাইয়ের পরিকাঠামো সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। সাধারণ মানুষের দাবি, পৌরসভা দ্রুত হস্তক্ষেপ করে এই পরিস্থিতির সমাধান করুক এবং শহরকে ফের স্বচ্ছ ও বাসযোগ্য করে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করুক।
হিন্দুস্থান সমাচার / এ. গঙ্গোপাধ্যায়