সঞ্জীব কুমার
ছিন্দওয়ারা, ১৪ জুলাই (হি.স.): মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়ারা জেলা থেকে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দূরে প্রকৃতির কোলে অবস্থিত একলব্য আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ই তামিয়ার জনজাতি শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়ে দিচ্ছে। এই বিদ্যালয়টি নরেন্দ্র মোদী সরকারের 'শিক্ষার মাধ্যমে ক্ষমতায়নের' চিন্তাভাবনার প্রমাণ, যেখানে বিশেষ করে জনজাতি সম্প্রদায়ের শিশুরা উন্নতমানের শিক্ষা পাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ রাকেশ কুশওয়াহার মতে, তামিয়ার একলব্য আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয় ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা প্রদান করে। এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা, খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, বই এবং স্টেশনারির মতো সমস্ত সুযোগ-সুবিধা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, তামিয়ার একলব্য আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয় জনজাতি শিশুদের কেবল বিনামূল্যে শিক্ষা, থাকার ব্যবস্থা, খাবার ইত্যাদি সুবিধাই প্রদান করছে না, বরং সকল খেলাধুলো এবং শিল্পকলায় (চিত্রকলা, সঙ্গীত, নাটক) প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। বলা যায়, এখানকার শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে যাতে এখানকার শিশুরা মূলধারায় যোগ দিতে পারে। একলব্য আদর্শ বিদ্যালয়, তামিয়ার আশেপাশের জনজাতি এলাকার শিশুদের জন্য এক আশীর্বাদ। এই বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া হয়, যাতে যোগ্যতার ভিত্তিতে সক্ষম এবং প্রতিশ্রুতিবান জনজাতি শিশুরা সুযোগ পেতে পারে। এই বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য হল জনজাতি শিশুদের কেবল শিক্ষাগতভাবেই নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবেও ক্ষমতায়ন। সম্প্রতি, তামিয়ার একলব্য আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয়ের চারজন মেধাবী শিক্ষার্থী জেইই মেইন্সে নির্বাচিত হয়েছে, যার কারণে স্কুলে আনন্দের পরিবেশ বিরাজ করছে। জেইই মেইন্সের পর তারা এখন জেইই অ্যাডভান্সডের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাকেশ কুশওয়াহা বলেন, জেইই অ্যাডভান্সডে ভালো র্যাঙ্ক পেতে হলে তিনটি বিষয়েই (গণিত, পদার্থবিদ্যা এবং রসায়ন) ভালো নম্বর পেতে হবে। জেইই মেইন্সে নির্বাচিত হওয়ার পর, শিক্ষার্থীরা রাজ্য স্তরের কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। অ্যাডভান্সডে নির্বাচিত হওয়ার পর, আইআইটির মতো দেশের বড় প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পায়। একলব্য বিদ্যালয়ের এই সাফল্যের ফলে স্কুলটির নাম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকায় স্থান পেয়েছে।
তামিয়ায় অবস্থিত একলব্য আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয় সারা দেশে জেইই এবং এনইইটি-র আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি এই স্কুল থেকে এনইইটি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৬৭ জন জনজাতি শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৭ জন নির্বাচিত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে, ছিন্দওয়ারার জনজাতি উন্নয়ন বিভাগের সহকারী কমিশনার সত্যেন্দ্র সিং মারকাম বলেন, 'একলব্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের কঠোর পরিশ্রম এবং অনুশাসনের কারণে স্কুলের পড়ুয়ারা এই কৃতিত্ব অর্জন করেছে। এটি সত্যিই আমাদের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত, এখানকার শিক্ষার্থীদের সাফল্য অন্যান্য শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠবে।' একলব্য আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয় প্রকল্পের আওতায়, জনজাতি শিশুদের তাদের নিজস্ব পরিবেশে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উন্নতমানের শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, জনজাতি শিক্ষার্থীদের উন্নয়নের জন্য, কেন্দ্রীয় জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রক সারা দেশে ৭২৮টি একলব্য আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যার ফলে প্রায় ৩.৫ লক্ষ জনজাতি শিক্ষার্থী উপকৃত হবে।
বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ রাকেশ কুশওয়াহা বলেন যে একলব্য আদর্শ বিদ্যালয় শুধুমাত্র জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় প্রতিষ্ঠিত করা হয়। বিশেষ করে যেসব এলাকায় ৫০ শতাংশেরও বেশি জনজাতি বা যেসব এলাকায় জনজাতির জনসংখ্যা ২০০০০। এইসব এলাকায় রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় কেন্দ্রীয় সরকার জনজাতি শিশুদের জন্য এই বিদ্যালয়গুলি পরিচালনা করে, যেখানে তাদের প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। একলব্য আদর্শ বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য হল জনজাতি শিক্ষার্থীদের উন্নতমানের শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা, যাতে জনজাতি শিশুরা মূলধারায় যোগ দিতে পারে। এই আবাসিক স্কুলে সকল শিক্ষার্থীর জন্য প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে থাকার ব্যবস্থা, খাবার, বই ও স্টেশনারি, স্কুল ড্রেস, ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি এবং খেলাধুলার সুবিধা। শুধু তাই নয়, এখানে কারিগরি শিক্ষা থেকে শুরু করে স্মার্ট ক্লাস এবং এআই ভিত্তিক কম্পিউটার ল্যাব পর্যন্ত সুবিধাও শুরু হয়েছে। সরকার নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে যে জনজাতি শিশুরা তাদের স্বপ্ন পূরণে কোনও ধরণের অসুবিধার সম্মুখীন না হয়। এখানে অনেক শিশু আছে যারা ডাক্তার হয়ে তাদের দেশবাসীর, বিশেষ করে জনজাতি সমাজের সেবা করতে চায়। কেউ ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়, আবার কেউ তাদের এলাকায় কৃষির জন্য গবেষণা করতে চায়। শিক্ষার প্রতি এই জনজাতি শিশুদের আত্মবিশ্বাস এবং উৎসাহ তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়।
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / সৌম্যজিৎ