শিলচর (অসম), ৬ জুলাই (হি.স.) : ‘এক দেশ, এক সংবিধান’-এর স্বপ্নদ্ৰষ্টা, আত্মবলিদানকারী ভারতের মহান দেশপ্রেমিক, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও দূরদর্শী নেতা ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ১২৫-তম জন্মবার্ষিকী আজ রবিবার কাছাড় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হয়েছে কাছাড় জেলা প্ৰশাসনের উদ্যোগে।
শিলচরে জেলাশাসক কার্যালয়ের পুরনো সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি শুরু হয় ড. মুখোপাধ্যায়ের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে। প্রথমে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন কাছাড়ের জেলা উন্নয়ন আয়ুক্ত নরসিং বে, বিশিষ্ট কবি-সাংবাদিক এবং মুখ্যমন্ত্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত অতীন দাশ, উধারবন্দ জগন্নাথ সিং কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রধান ড. গঙ্গেশ ভট্টাচার্য সহ জেলা প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকবৃন্দ, কর্মচারী এবং স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত হেমাঙ্গ নবীশ উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানিয়ে তাঁর বক্তব্যে বলেন, ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জীবন আমাদের সকলের জন্য এক প্রেরণার বাতিঘর। তিনি জাতীয় ঐক্য ও অখণ্ডতার পক্ষে যে অটল অবস্থান নিয়েছিলেন, তা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
অনুষ্ঠানের মূল বক্তা বিশিষ্ট কবি ও লেখক অতীন দাশ ড. মুখোপাধ্যায়ের সংগ্রামী জীবনের নানা দিক তুলে ধরে বলেন, ‘তিনি শুধু রাজনীতিক ছিলেন না, ছিলেন একজন দূরদর্শী চিন্তক, যিনি কখনও আপস করেননি দেশের স্বার্থে। যেদিন দেশভাগের ছায়া বাংলার ওপর নেমে এসেছিল, সেদিন তিনি রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষার পথপ্রদর্শক হয়েছিলেন। তাঁর কাশ্মীর নীতিতে আপসহীনতা, তাঁর ত্যাগ, তাঁর আত্মবলিদান আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে হয়।’
অতীন দাশ বলেন, ‘ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জীবন আমাদের শেখায় ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠে কীভাবে দেশের কল্যাণে কাজ করতে হয়। তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক ও সমাজসংস্কারক হিসেবে ভারতের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।’
এর পর বক্তব্য পেশ করেন ইতিহাসবিদ ও জগন্নাথ সিং কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রধান ড. গঙ্গেশ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘ড. মুখোপাধ্যায়ের জীবন কেবল একটি রাজনৈতিক জীবনের কাহিনি নয়, বরং এক নিঃস্বার্থ দেশসেবার মহাকাব্য। দেশের শিল্পোন্নয়ন, শিক্ষা ও সংবিধানিক অগ্রগতিতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি কেবলমাত্র প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, বরং একজন সৃজনশীল শিক্ষাবিদও ছিলেন, যিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকনিষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কাশ্মীরে আত্মবলিদান ভারতের অখণ্ডতার জন্য এক চিরন্তন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ভাষণে জেলা উন্নয়ন আয়ুক্ত নরসিং বে বলেন, ‘আমাদের উচিত ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ত্যাগ ও আদর্শকে স্মরণ করে আমাদের কর্মে ও চিন্তায় জাতীয় ঐক্য ও অখণ্ডতার মন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখা। তাঁর জীবন আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে দৃঢ়তার সঙ্গে সঠিক পথে অটল থাকতে হয়।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের সঙ্গে ছিলেন সহকারী আয়ুক্ত তথা শিলচরে তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-অধিকর্তা এবং জেলা সাংস্কৃতিক পরিক্রমা শাখার আধিকারিক দীপা দাস, সহকারী আয়ুক্ত তথা ভারপ্রাপ্ত সমাজকল্যাণ বিভাগের আধিকারিক অঞ্জলি কুমারী, জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ, রেভিনিউ সেরেস্তাদার বিক্রমজিৎ চক্রবর্তী, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট দেবব্রত দাস নেসলে সাইলা প্রমুখ।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস