ডিমা হাসাওয়ের ছোটওয়াপু অনাথ আশ্রমের শিশু–আবাসিকদের কাটছে শরণার্থী-জীবন, অভিযোগ কংগ্রেসের
হাফলং (অসম), ৩ আগস্ট (হি.স.) : ডিমা হাসাও জেলা সদর হাফলং থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরবর্তী ছোটওয়াপুতে রাজ্যের সমাজকল্যাণ বিভাগের অধীনস্ত অনাথ আশ্রমের শিশু-আবাসিকদের শরণার্থী শিবিরের মতো দিন কাটাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেস মহল থেকে। কংগ্রেসের অভি
ডিমা হাসাওয়ের ছোটওয়াপু অনাথ আশ্রম


হাফলং (অসম), ৩ আগস্ট (হি.স.) : ডিমা হাসাও জেলা সদর হাফলং থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরবর্তী ছোটওয়াপুতে রাজ্যের সমাজকল্যাণ বিভাগের অধীনস্ত অনাথ আশ্রমের শিশু-আবাসিকদের শরণার্থী শিবিরের মতো দিন কাটাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেস মহল থেকে। কংগ্রেসের অভিযোগ, অনাথ আশ্রমের শিশু-আবাসিকদের জন্য নেই উপযুক্ত প্রয়োজনীয় কোনও সুযোগসুবিধা।

২০০৯-১০ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের এনএলসিপিআর প্রকল্পে জাটিঙ্গার বড়হাফলংয়ে অনাথ শিশুদের জন্য অনাথ আশ্রম নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৯৮ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা অনুমোদন লাভ করেছিল। সে অনুযায়ী পিতৃ-মাতৃহারা শিশুদের জন্য অনাথ আশ্রম নির্মাণ হওয়ার পর ২০২১ সালের ২৬ জুলাই রাজ্যের মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা, বিধায়ক (অধুনা পরিষদীয় মন্ত্রী) নন্দিতা গার্লোসার উপস্থিতিতে এই অনাথ আশ্রমের উদ্বোধন করেছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

তার পর ২০২২ সালে জাটিঙ্গার বড়হাফলং থেকে এই অনাথ আশ্রমকে স্থানান্তরিত করে ছোটওয়াপুতে উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য দেবোলাল গার্লোসা উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে বড়হাফলং অনাথ আশ্রম থেকে শিশুদের ছোটওয়াপুতে স্থানান্তরিত করা হয়। জাটিঙ্গার ওই অনাথ আশ্রম এখন একটি বিলাসবহুল হোটেলে রূপান্তরিত করে গত ২৭ জুলাই এর উদ্বোধন করেন দেবোলাল গার্লোসা।

তার পর থেকে এনিয়ে শুরু হয় তীব্র বিতর্ক। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় ছোটওয়াপু অনাথ আশ্রমের শিশু-আবাসিকদের করুণ চিত্র। অনাথ আশ্রমে একপ্রকার শরণার্থীর মতো জীবন কাটাচ্ছে শিশুরা। ছোটওয়াপু অনাথ আশ্রমে বর্তমানে মোট ২৫ জন শিশু রয়েছে। কিন্তু এই অনাথ আশ্রমে নেই শিশুদের জন্য উপযুক্ত সুযোগসুবিধা। তিনটি কামরায় চার-পাঁচটি বিছানায় থাকতে হচ্ছে শিশুদের। এমন-কি শিশু-আবাসিকদের জন্য নেই ডাইনিং হল, নেই স্টাডি রুম, নেই উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা, নেই বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা। রান্নাঘরের অবস্থা আরও করুণ। রান্নাঘরের দরজা-জানালা ভেঙে চুরমার। তার ওপর অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের যোগান।

জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগের জল সরবরাহ ব্যবস্থা না থাকায় অনাথ আশ্রমের শিশু-আবাসিকদের লাগোয়া নর্দমা থেকে জল এনে পান করতে হচ্ছে। অনাথ আশ্রমের শিশুরা জানিয়েছে, কখনও তাদের নিজেদের রান্না করে খেতে হয়। কখনও তাদের ভাগ্যে জুটে পাতলা ডাল আর শুধু ভাত। এভাবেই তাদের জীবন কাটছে।

অভিযোগ, একপ্রকার মানবধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে অনাথ শিশুদের এভাবে শরণার্থীদের মতো রেখে। এই সব অনাথ শিশুদের উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য জাটিঙ্গার বড় হাফলঙে সরকারি তহবিল দিয়ে অনাথ আশ্রম ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারি অর্থের অপব্যবহার করে ওই অনাথ আশ্রমকে বিলাসবহুল হোটেলে রূপান্তরিত করে দেবোলাল গার্লোসা এই সব অনাথ শিশুদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উত্থাপন করেছে কংগ্রেস।

ডিমা হাসাও জেলা কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল শনিবার ছোটওয়াপুতে অবস্থিত অনাথ আশ্রম পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা অনাথ আশ্রমটির করুণ দশা দেখে বর্তমান বিজেপি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন ডিমা হাসাও জেলা কংগ্রেসের উপ-সভাপতি অরিপম বডো ও সম্পাদক গসপেল মার।

তাঁরা বলেন, বর্তমানে ছোটওয়াপু অনাথ আশ্রমে যে ভাবে শিশুদের শরণার্থীর মতো রাখা হয়েছে, এতে মানবধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। অনাথ আশ্রমে শিশুদের জন্য নেই কোনও সুযোগ-সুবিধা। পানীয় জল থেকে শুরু করে অস্বাস্থ্য খাবার, এমন-কি নর্মাদার জল খেতে হচ্ছে শিশুদের। নেই উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিশুদের জন্য নেই পর্যাপ্ত বিছানা। রান্না রের অবস্থা বেহাল। এই অবস্থায় এক অন্ধকারময় জীবন কাটাতে হচ্ছে এই সব শিশুদের।

অরিপম বডো বলেন, এনএলসিপিআর প্রকল্পে জাটিঙ্গার বড়হাফলঙে অনাাথ আশ্রম নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ২ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ২৯ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ২০২১ সালে বড়হাফলঙে অনাথ আশ্রম নির্মাণ করা হলেও তাকে এখন বিলাসবহুল হোটেলে রূপান্তরিত করে এই সব শিশুদের জঘন্য পরিবেশের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, অভিযোগ অরিপম বডোর।

আগামী দুমাসের মধ্যে যদি ওই অনাথ শিশুদের তাদের আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে না যাওয়া হয়, তা-হলে কংগ্রেস মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার পাশাপাশি শিশু সুরক্ষা আইনের অধীনে মামলা দায়ের করবে, হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অরিপম বডো।

হিন্দুস্থান সমাচার / বিশাখা দেব




 

 rajesh pande