মানকরের বড়বাড়ির দুর্গাপুজায় রীতি মেনে বিউলিডাল ও শালুকডাঁটার তরকারি প্রসাদে দেওয়া হয়
দুর্গাপুর, ১৫ সেপ্টম্বর (হি. স. ) : পাল, ব্রাহ্মণ, খাঁ তিন নিয়ে মানকর গাঁ। বর্ধমান জেলার জমিদারি ইতিহাস মানকরের নাম উল্লেখযোগ্য। বর্ধিষ্ণু এই গ্রামে জন্মগ্রহন করেছিলেন সাধক বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য্য। কথিত আছে স্বপ্নাদেশ পেয়ে নিজের বাড়িতে দেবী দুর্গার প
মানকরের বড়বাড়ির দুর্গাপুজায়


দুর্গাপুর, ১৫ সেপ্টম্বর (হি. স. ) :

পাল, ব্রাহ্মণ, খাঁ তিন নিয়ে মানকর গাঁ। বর্ধমান জেলার জমিদারি ইতিহাস মানকরের নাম উল্লেখযোগ্য। বর্ধিষ্ণু এই গ্রামে জন্মগ্রহন করেছিলেন সাধক বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য্য। কথিত আছে স্বপ্নাদেশ পেয়ে নিজের বাড়িতে দেবী দুর্গার পুজা শুরু করেন। সময়টা আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন'শ বছর আগে। অভাবের সংসার ছিল। তাই মায়ের পুজায় প্রতিদিন এক শলি অর্থাৎ কুড়ি কিলো চালের অন্নভোগ, বিউলিডাল আর শালুকডাঁটার তরকারি প্রসাদে দিতেন। আর সেই রীতি এখনও মানকরের বড়বাড়ির দুর্গা পুজায় বজায় রয়েছে। তৎকালীন মানকরে জমিদার ছিলেন হিতলাল মিশ্র। পরবর্তীকালে সাধকের বংশধর বিজয় ভট্টাচায্য জমিদারের হয়ে একটি মামলায় আইনি লড়াই করার জন্য কিছু জমি পাওনিদার রেখেছিলেন। ওই জমির আয় থেকে দুর্গা পুজা চালাতেন সাধক বৈদ্যনাথ। বর্তমান বড়োবাড়ির তত্ত্বাবধায়ক কার্তিক ঘোষ। কার্তিকবাবু জানান, সাধক বৈদ্যনাথ ভট্টাচায্য শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ভক্ত ছিলেন। মহাপ্রভুর সাক্ষাৎ দর্শন করেছেন। বড়বাড়িতে মহাপ্রভু এসেছিলেন।'' আর তাই এখনও সেখানে মহাপ্রভুর বেদী তৈরী করা আছে। সাধক বৈদ্যনাথ ঠাকুর সারাদিন উপবাস করে থাকতেন। সন্ধ্যার সময় নিজে হবিষ্য করে খেতেন। তবে খাওয়ার আগে পাড়ায় কেউ অনাহারে আছে কিনা ডাক দিতেন। যদি কেউ আনাহারে থাকতেন তাহলে সমস্ত হবিষ্য দিয়ে দিতেন। আর তিনি নিজে চিঁড়ে গুড় খেয়ে থেকে যেতেন। কথিত আছে একবার এক ঘটনা ঘটেছিল। ঠাকুর হবিষ্য করে বাইরে ডাক দিয়েছন। ডাক শুনে এক ভিক্ষুক হাজির। ঠাকুর তাকে হবিষ্য দিতে গেলে তা নিতে অস্বিকার করে। ওই ভিক্ষুক চিঁড়ে গুড় আবদার করে। ঠাকুর সেই মতো বাড়ির ভেতর থেকে চিঁড়েগুড় আনার পর আর ওই ভিক্ষুককে দেখতে পাননি। আর সেই থেকে এখনও প্রত্যেক সংক্রান্তিতে মহাপ্রভুর বেদীতে চিঁড়েগুড় প্রসাদ দেওয়া হয়। দেবী দুর্গার বোধনের জন্য বোধি বৃক্ষ প্রতিস্টা করেছিলেন। মন্দিরের পাশেই পুকুর খনন করিয়েছিলেন। ওই পুকুরের জল দিয়ে অন্নভোগ রান্না হত। যা এখনও হয়ে থাকে। তবে সংস্কারের অভাবে পুকুরের বাঁধানো ঘাট ভেঙে পড়েছে। বৈদ্যনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর পর তার বংশধর বটুকনাথ ভট্টাচায্য জাকযমক সহকারে পুজা শুরু করেন। সেই সময় অস্টমী নবমীর দিন মোষ, ছাগল ও মেষ বলি দেওয়া হত। এখন সেসব পশু বলি প্রথা উঠে গিয়েছে। তবে তার পরিবর্তে চাল কুমড়ো, লাউ বলি দেওয়া হয়। বর্তমানে বড়োবাড়ির পুজোর সমস্ত খরচ বৈদ্যনাথ ঠাকুরের বংশধর অনিলাবালা মুখোপাধ্যায় ও কমলাবালা বন্দোপাধ্যায়ের সন্তানরা চালান। এবছর অনিলাবালাদেবীর সন্তান অনুপ মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী লোপামুদ্রা মুখোপাধ্যায় করছেন। এখনও আশপাশের রাইপুর, রানিগঞ্জ, রামহরিপুর, ডাং পাড়া প্রভৃতি গ্রামের মানুষ পুজোর ক'টা দিন ভিড় জমান, আনন্দে মেতে ওঠেন। গড়ে ওঠে এক সম্প্রতির মেলবন্ধন।

হিন্দুস্থান সমাচার / জয়দেব লাহা




 

 rajesh pande