দুর্গাপুর, ১৭ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : দুর্গাপুর শিল্পশহরের বুক জুড়ে তালাবদ্ধ একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি কারখানা। আত্মনির্ভরতার ফিরিস্তি মিললেও, পুনরুজ্জীবনের আশ্বাস আজও অধরাই। ফলে শিল্পের দেবতা বিশ্বকর্মার পুজোতেও নেই আগের জৌলুস। শিল্পশহরবাসী এখনও তাড়া খাচ্ছেন ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার আতঙ্কে।
১৯৫০ সালে দামোদর নদে ব্যারেজ গড়ে ওঠার পর দুর্গাপুরে শুরু হয় শিল্পায়ন। সেইল-এর দুর্গাপুর ইস্পাত, অ্যালয় স্টিল, এমএএমসি, বিওজিএল, হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজারসের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাকে ঘিরেই গড়ে ওঠে নগরায়ন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের পর থেকে অন্ধকার নেমে আসে শিল্পশহরে।
দুর্গাপুরের হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজারস কর্পোরেশন (এইচএফসিএল) ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও, ১৯৯২ সালে লোকসানের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় সার মন্ত্রক দেশের ছ’টি বন্ধ সার কারখানার সঙ্গে দুর্গাপুরকেও পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করে। ৬ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ, জার্মান প্রযুক্তির প্রতিশ্রুতি—সবই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থেকে গেছে জমি জটের কারণে। একইভাবে মাইনিং অ্যান্ড অ্যালয়েড মেশিনারি কর্পোরেশন (এমএএমসি) ২০০২ সালে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়। প্রায় ৬ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০১০ সালে বিইএমএল, ডিভিসি ও কোল ইন্ডিয়ার মিলিত কনসোর্টিয়াম আদালতের নিলামে কারখানাটি অধিগ্রহণ করে। প্রতিশ্রুতি ছিল ৬ মাসের মধ্যে উৎপাদন শুরু হবে, কিন্তু ১৫ বছর পরও তা অধরাই। কনসোর্টিয়ামের শেষ পরিদর্শন হয়েছিল ২০২০ সালে।
শ্রমিক নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায় আক্ষেপ করে বলেন, “আত্মনির্ভরতার সাফাই দেওয়া হলেও খনির যন্ত্রাংশ চিন থেকে আমদানি হচ্ছে। অথচ দেশে পরিকাঠামো ও মেধা—দুটোই আছে। শুধু সরকারের সদিচ্ছার অভাব। প্রতি বছর দেড় কোটি টাকা পাবলিক মানি খরচ হচ্ছে, কিন্তু কারখানা পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে না। ”এমএএমসি ও বিওজিএল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিশ্বকর্মানগরীর রূপ বদলে গেছে। একসময় চারদিন ধরে চলা বিশ্বকর্মা পুজো, মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এখন কেবল নামমাত্র। কারখানা প্রাঙ্গণ দখল করেছে লতাপাতা, জঙ্গলি পশু আর সাপের আড্ডা। শ্রমিকদের কথায়—“বিশ্বকর্মা পুজো মানেই বুকের ভেতর ভারি কষ্ট। জৌলুস নেই, আছে শুধু হারানোর বেদনা।”
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / জয়দেব লাহা