দুর্গাপুর ব্যারেজকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে রাজ্য, অভিযোগ সুকান্ত মজুমদারের
দুর্গাপুর, ১৭ অক্টোবর (হি.স.) : দুর্গাপুর ব্যারেজ সেতুর বেয়ারিং এখনও পরিবর্তন করা হয়নি, একাধিক লকগেট বিপর্যয়ের পরও সব লকগেট বদল সম্পূর্ণ হয়নি।এমন অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি-
দুর্গাপুর ব্যারেজকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে রাজ্য, অভিযোগ সুকান্ত মজুমদারের


দুর্গাপুর, ১৭ অক্টোবর (হি.স.) : দুর্গাপুর ব্যারেজ সেতুর বেয়ারিং এখনও পরিবর্তন করা হয়নি, একাধিক লকগেট বিপর্যয়ের পরও সব লকগেট বদল সম্পূর্ণ হয়নি।এমন অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি ডঃ সুকান্ত মজুমদার। শুক্রবার দুর্গাপুরে ডিভিসি কার্যালয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিক্ষোভ কর্মসূচির জবাবে তিনি বলেন, “রাজ্যের উদাসীনতার জন্য দুর্গাপুর ব্যারেজ আজ বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে লোয়ার দামোদরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ সংস্কারের নামে কী কাজ হয়েছে, তার জবাব দিক রাজ্য। ব্যারেজের লকগেট ও বেয়ারিং সংস্কার না হওয়ায় ভবিষ্যতে আবারও বিপর্যয় ঘটলে তার দায় মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে।”

প্রসঙ্গত ,১৯৫৫ সালে নির্মিত দুর্গাপুর ব্যারেজ সেতু রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেতু, যা জঙ্গলমহল, দুর্গাপুর ও উত্তরবঙ্গের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে। প্রায় ৯৬২ মিটার লম্বা এই সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২৬ হাজার যানবাহন চলাচল করে, যার মধ্যে ৮ হাজার ভারী ট্রাক। বছরের পর বছর ভারী যান চলাচলে সেতুর পিলারের নিচের বেয়ারিং দুর্বল হয়ে পড়েছে। এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে সেতুর স্ট্রিপ সিল্ট জয়েন্ট ও রাস্তার সংস্কার হলেও বেয়ারিং পরীক্ষা বা পরিবর্তন হয়নি—ফলে প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তা নিয়ে।

দুর্গাপুর ব্যারেজের মোট ৩৪টি লকগেটের মধ্যে ২০১৭ ও ২০২০ সালে দুটি লকগেট বিপর্যস্ত হয়। এরপর আংশিকভাবে কিছু লকগেট বদলানো হলেও, বাকি লকগেটগুলির অবস্থা এখনও নাজুক। বিশেষ করে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর লকগেটের স্বাস্থ্য অত্যন্ত দুর্বল। ব্যারেজের জলের ওপর নির্ভরশীল ৮ লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি ও একাধিক শিল্পতালুক, যেমন আসানসোল-দুর্গাপুর, রানীগঞ্জ, কাঁকসা, পানাগড়, বড়াজোড়া, মেজিয়া, অন্ডাল ও ডিটিপিএস, ডিপিএল সহ পাঁচটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ব্যারেজে বিপর্যয় ঘটলে কৃষি, শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সব ক্ষেত্রেই বড় প্রভাব পড়বে।

গত কয়েক বছর ধরে মাইথন-পাঞ্চেত জলাধারে জল ছাড়ার বিষয় নিয়ে ডিভিসি ও রাজ্যের মধ্যে টানাপোড়েন চলছেই। কয়েকদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী ডিভিসির জলাধারগুলিতে পলি সংস্কার না হওয়া নিয়ে সরব হন এবং ‘বাঁধ ভেঙে দেওয়ার’ মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। এরপর রাজ্যের বিভিন্ন জলাধারে ডিভিসির কার্যালয়ের সামনে তৃণমূল কংগ্রেস বিক্ষোভ কর্মসূচি নেয়। শুক্রবার দুর্গাপুরে সেই বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইঞা, আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ও পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার।

“কেন্দ্রীয় সরকার দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ধ্বংস করছে। দামোদরের ওপর সাতটি ড্যাম হওয়ার কথা ছিল, হয়েছে মাত্র পাঁচটি। কেন্দ্র রিপোর্ট দেখছে, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এখনই ড্রেজিং না হলে দামোদর হয়ে উঠবে মৃত্যুফাঁদ।”

তৃণমূলের দাবির জবাবে সেদিনই ব্যারেজ এলাকায় বিজেপি কর্মীরা পাহারার ব্যবস্থা করে। সুকান্ত মজুমদার পাল্টা বলেন, “রাজ্য সরকারের অবহেলাই দুর্গাপুর ব্যারেজের মূল সমস্যা। শুধু নাম বদলে বা দোষ চাপিয়ে দিয়ে চলবে না—রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যর্থতার জন্যই এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বারবার বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে।”

---------------

হিন্দুস্থান সমাচার / জয়দেব লাহা




 

 rajesh pande