

সাংসদ পরিমল শুক্লবৈদ্য, সাংসদ কণাদ পুরকায়স্থ, বিধায়ক ও আধিকারিকদের উপস্থিতিতে ঐক্য পদযাত্রা ও সাংস্কৃতিক উৎসবে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণ
শিলচর (অসম), ৩১ অক্টোবর (হি.স.) : দেশপ্রেম, ঐক্য ও নাগরিক গর্বের অপরূপ সমাহারে আজ শুক্রবার সকাল থেকেই যেন জেগে উঠেছিল গোটা কাছাড়। ভারতের লৌহপুরুষ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৫০-তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে কাছাড় জেলা প্রশাসন এবং মাই ভারতের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই মহোৎসবে হাজারো নাগরিক, ছাত্রছাত্রী এবং সরকারি আধিকারিক-কৰ্মচারীগণ একত্রিত হন।
এই উদযাপনে অংশ নেন তিন হাজারের বেশি মানুষ। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রী, এনএসএস, স্বেচ্ছাসেবী, স্কাউটস অ্যান্ড গাইডস, এএসএলআরএম ও এনইউএলএম-এর সদস্য, কৃষি, ক্রীড়া, সমাজকল্যাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং শিলচর পৌরনিগমের প্রতিনিধিরা।
শান্তি, সংহতি এবং আত্মনির্ভর ভারতের বার্তা বহনকারী এই পদযাত্রার সূচনা করেন শিলচর লোকসভা আসনের সাংসদ পরিমল শুক্লবৈদ্য, রাজ্যসভার সদস্য কণাদ পুরকায়স্থ, রজ্যের খাদ্য, গণবণ্টন, উপভোক্তা বিষয়ক, খনি ও খনিজ এবং বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী কৌশিক রায়। উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক মৃদুল যাদব।
গান্ধীবাগে সমবেত জনতা প্রথমেই লৌহপুরুষ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন। তার পর শুরু হয় স্মারক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল শিলচরের সাংসদ পরিমল শুক্লবৈদ্যের অনুপ্রেরণাদায়ক বক্তব্য। তিনি বলেন, ‘সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল শুধু একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীই নন, তিনি ছিলেন ভারতের রাজনৈতিক ঐক্যের লৌহদৃঢ় মেরুদণ্ড।’ সাংসদ শুক্লবৈদ্য বলেন, ‘আজ আমরা একত্রিত হয়েছি জাতির এক মহান সন্তান ভারতের লৌহপুরুষ, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে স্মরণ করতে। তাঁর জীবন, কর্ম এবং দেশপ্রেম আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে।’
তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ গুজরাটের মাটিতে জন্মগ্ৰহণকারী এই মানুষটি কীভাবে দৃঢ় সংকল্প ও দেশপ্রেমে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও রাষ্ট্রগঠনের অগ্রভাগে উঠে এসেছিলেন, তা আমাদের প্রত্যেকের জন্য এক অনন্য প্রেরণা।’
অনুষ্ঠানে রাজ্যসভার সদস্য কণাদ পুরকায়স্থ বলেন, ‘সর্দার প্যাটেলের অবদান ভারতের ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র গঠনে অতুলনীয়। তাঁর সাহস, প্রজ্ঞা ও বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি আজকের ভারত গড়ার ভিত স্থাপন করেছে। তিনি আজও আমাদের শেখান ঐক্যই জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি।’ সাংসদ পুরকায়স্থ তরুণ সমাজকে আহ্বান জানান সর্দার প্যাটেলের শৃঙ্খলা, দেশপ্রেম ও জাতীয় সেবার আদর্শ গ্রহণ করতে।
শিলচরের বিধায়ক দ্বীপায়ন চক্রবর্তী বলেন, ‘সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ছিলেন এমন এক দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক যিনি বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতের রাজনৈতিক সংহতির প্রধান স্থপতি ও জনসেবার প্রতীক।’
উধারবন্দের বিধায়ক মিহিরকান্তি সোম বলেন, ‘‘সর্দার প্যাটেলের সাহস, দূরদৃষ্টি ও দৃঢ় সংকল্প আজও ভারতের অগ্রগতির দিশা দেখায়। তিনি ছিলেন সত্যিকারের ‘স্টিল ম্যান’, যার ঐক্য ও শৃঙ্খলার দর্শন আমাদের জাতির ভিতকে দৃঢ় করেছে। তরুণ সমাজের উচিত তাঁর সততা, দেশপ্রেম ও ঐক্যের চেতনা বয়ে নিয়ে যাওয়া।’’
জেলাশাসক মৃদুল যাদব তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জীবন হলো শৃঙ্খলা, ঐক্য ও কর্তব্যনিষ্ঠ নেতৃত্বের এক অনন্ত দৃষ্টান্ত। স্বাধীন ভারতের প্রথম গৃহমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ভারতীয় প্রশাসনিক পরিষেবা (আইএএস) এবং পুলিশ পরিষেবার (আইপিএস) ভিত্তি স্থাপন করেন। এই কাঠামো আজও ভারতের গণতান্ত্রিক প্রশাসনের মূল স্তম্ভ।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে মাই ভারতের ডেপুটি ডিরেক্টর মহেবুব আলম লস্কর স্বাগত ভাষণে বলেন, ‘আজকের এই বিপুল জনসমাগমই প্রমাণ করে জাতীয় ঐক্যের শক্তি কতটা গভীর। অসম সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, এনএসএস, এনসিসি, স্কাউটস অ্যান্ড গাইডস্, এএলএলআরএম, এনইউএলএম এবং প্রায় ৫০টি স্থানীয় ক্লাব ও এনজিওর সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠান এক মহোৎসবে রূপ নিয়েছে। এটি আসলে মাই ভারতের মূল চেতনা ঐক্য, তরুণশক্তির সম্মিলিত কর্মকাণ্ড ও সমাজসেবার প্রতীক।’
অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে অসম বিশ্ববিদ্যালয় ও গুরুচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা দেশাত্মবোধক গান, বিহু, ধামাইল ও মণিপুরি নৃত্য পরিবেশন করেন। পথিক নাট্য সংস্থা এবং সরলা বিড়লা জ্ঞানজ্যোতি স্কুলের শিক্ষার্থীরা একটি পথনাটিকায় সমাজে মাদক-বিরোধীর বার্তা ও জাতীয় মূল্যবোধ প্রচার করেছেন।
এছাড়া, কাছাড় জেলার বিভিন্ন মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী স্বদেশি মেলায় স্থানীয় হস্তশিল্প, তাঁতজাত পণ্য ও দেশীয় খাদ্য প্রদর্শন করে ‘ভোকাল ফর লোকাল’-এর চেতনাকে উজ্জীবিত করেছে।
অনুষ্ঠানের শেষে সাংসদ পরিমল শুক্লবৈদ্য ও অন্যান্য অতিথিরা ‘এক পেড মা কে নাম’ উদ্যোগে অংশ নেন। প্রতীকী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দেন তাঁরা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত আয়ুক্ত ফিলিস হ্রাংচাল, হেমাঙ্গ নবিস, সহকারী আয়ুক্ত বহ্নিখা চেতিয়া, মাসি টোপনো, দীপা দাস এবং জেলা প্রশাসনের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন আধিকারিকরা।
অনুষ্ঠানের সমাপ্তিতে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্য। তিনি অংশগ্রহণকারী সব দফতর, স্বেচ্ছাসেবক ও নাগরিকদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান আজকের অনুষ্ঠানকে সফল করে তোলার জন্য।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস