
হাফলং (অসম), ১৫ নভেম্বর (হি.স.) : স্থানীয় জনজাতি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বীকৃতি দেয়নি কংগ্রেস সরকার। কিন্তু কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরই স্থানীয় জনজাতি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের যোগ্য সম্মান ও স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। বলেছেন উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্য (ইএম) দনপাইনন থাওসেন।
আজ শনিবার বিরসা মুণ্ডার ১৫০-তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে জনজাতি গৌরব দিবসের অনুষ্ঠানে কংগ্রেসের সমালোচনা করে দনপাইনন থাওসেন বলেন, বছরের পর বছর ক্ষমতায় থেকেও কংগ্রেস সরকার কোনওদিন স্থানীয় জনজাতি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের যোগ্য সম্মান বা স্বীকৃতি দেয়নি। কংগ্রেস সব সময় মনে করে, একমাত্র গান্ধী পরিবারের জন্যই ভারত স্বাধীন হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারত স্বাধীন হওয়ার পর কংগ্রেস ৬৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু এই দল সব সময় তুষ্টিকরণের রাজনীতি করে গেছে। বিজেপি সরকারের আমলেই বিরসা মুণ্ডাকে রাষ্ট্রীয় স্তরে সম্মান জানিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া এই অঞ্চলের সুসন্তান বীর শম্ভুধন ফংলো, রানিমা গাইদিনলিউয়ের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের যোগ্য সম্মান ও স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে এই বিজেপি সরকারের আমলে।
দনপাইনন থাওসেন বলেন, বিরসা মুণ্ডার ১৫০-তম জন্মজয়ন্তীতে আজ জনজাতি দিবস হিসেবে পালন করে স্থানীয় জনজাতি স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর শম্ভুধন ফংলো, জয়া থাওসেন, রানিমা গাইদিনলিউ, হাইপো জাদনাং, চেংপাজাও ডুঙ্গেলের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্মান ও শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়।
এদিন তিনি কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেন, কংগ্রেস জনজাতি জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কী করেছে তা সবাই জানেন। দনপাইনন বলেন, কংগ্রেস সব সময় জনজাতিদের ভোট ব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করছে এবং এখনও করতে চাইছে।
বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ জোটের বিশাল জয় সম্পর্কে বলতে গিয়ে দনপাইনন বলেন, বিহারের মানুষ উন্নয়নের নিরিখেই এবার ভোট দান করেছেন। কংগ্রেসের তুষ্টিকরণের বিরুদ্ধে বিহারের জনতা এবার ভোট দান করছেন। অসমে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতা দখলের যে স্বপ্ন দেখছে তা সময়েই বলবে, বলেন দনপাইনন থাওসেন।
আজ শনিবার উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদ সচিবালয় প্রাঙ্গণে জনজাতি গৌরব দিবসের অনুষ্ঠানে রাজ্যের ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী নন্দিতা গার্লোসা বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে বিরসা মুণ্ডার ১৫০-তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে জনজাতি গৌরব দিবস হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে যা ষষ্ঠ তপশিলির অন্তর্ভুক্ত ডিমা হাসাও জেলায় বসবাসরত বিভিন্ন জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এক গৌরবের দিন।
মন্ত্রী বলেন, বিজেপি সরকার আসার পরই স্থানীয় জনজাতি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের যোগ্য সম্মান প্রদান করার পাশাপাশি স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। তবে স্থানীয় জনজাতি স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর শম্ভুধন ফংলো, রানিমা গাইদিনলিউ, জয়া থাওসেন, হাইপো জাদনাং, চংপাজাও ডুঙ্গেলের জন্মজয়ন্তী, মৃত্যু দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদ স্থানীয় ছুটি আগে থেকেই ঘোষণা করেছে।
নন্দিতা গার্লোসা বলেন, বিরসা মুণ্ডার স্মরণে আজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জনজাতি সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য আবাসিক বিদ্যালয়ের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শিলান্যাস করছেন। বিরসা মুণ্ডার স্মরণে ডিমা হাসাও জেলার দিয়ুংব্রাতেও একটি আবাসিক বিদ্যালয় পেয়েছে। আজ এই আবাসিক বিদ্যালয়ের শিলান্যাস করেছেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বলেন মন্ত্রী নন্দিতা গার্লোসা।
আজ উত্তর কাছাড় পার্বত্য সচিবালয় প্রাঙ্গণে উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত জনজাতি গৌরব দিবসে জনজাতি জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও লোক-সংস্কৃতি তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন জাতি-জনগোষ্ঠীর হস্ততাঁত শিল্পের প্রদর্শনী সহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের প্রদর্শনী এবং জনজাতি জনগোষ্ঠীর খাদ্যের প্রদর্শনী ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা কমিশনার মুনীন্দ্রনাথ নাগাতে, উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের অধ্যক্ষ মোহিত হোজাই, পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্য সহ বিভিন্ন জনজাতি জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সংগঠন ও স্থানীয় জনগণ।
হিন্দুস্থান সমাচার / বিশাখা দেব