আপডেট...মণিপুরে ‘সাঙ্গাই ফেস্টিভ্যাল’স্থলে উন্মত্ত জনতার হামলার চেষ্টা, কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা
ইমফল, ২০ নভেম্বর (হি.স.) : ইমফলের ঐতিহাসিক পোলো মাঠ তথা বড় উৎসবের স্থান হাপ্তা কাংজেইবুঙে চলমান মণিপুরের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির জমকালো উদযাপন ‘সাঙ্গাই ফেস্টিভ্যাল’স্থলে উন্মত্ত জনতার দল হামলার চেষ্টা করলে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে প্ৰথমে লাঠি
‘সাঙ্গাই ফেস্টিভ্যাল’-এর প্রবেশদ্বারে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ঠেলাধাক্কা


বিক্ষোভকারীদের একাংশ


ইমফল, ২০ নভেম্বর (হি.স.) : ইমফলের ঐতিহাসিক পোলো মাঠ তথা বড় উৎসবের স্থান হাপ্তা কাংজেইবুঙে চলমান মণিপুরের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির জমকালো উদযাপন ‘সাঙ্গাই ফেস্টিভ্যাল’স্থলে উন্মত্ত জনতার দল হামলার চেষ্টা করলে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে প্ৰথমে লাঠি চাৰ্জ, পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করতে হয়েছে। কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপের ঘটনায় পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়ে। তবে তৎপরতার সঙ্গে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ ও নিরপত্তা বাহিনী।

‘সাঙ্গাই ফেস্টিভ্যাল’-এর প্রতিবাদে আজ (বৃহস্পতিবার) বিক্ষোভ প্রদর্শনের নামে হামলার চেষ্টা করেছে ‘কোঅর্ডিনেটিং কমিটি অন মণিপুর ইন্টিগ্রিটি’ (সিওসিওএমআই বা কোকোমি) নামের মণিপুরের অন্যতম প্রথমসারির এক সংগঠন। ‘উই বয়কট সাঙ্গাই ফেস্টিভ্যাল’, ‘ডিসপ্লেসড লাইভস্ ম্যাটার’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে অনুষ্ঠানস্থলের দিকে মিছিল করে এগোচ্ছিল বিক্ষোভকারী বিশাল দল।

এছাড়া হাতে হাতে 'ফ্রি মুভমেন্ট ফার্স্ট, দেন সাঙ্গাই ফেস্টিভ্যাল', ‘উই বয়কট সাঙ্গাই ফেস্টিভ্যাল’, 'ফার্স্ট রিসেটেলমেন্ট, দেন সেলিব্র্যাশন' সংবলিত বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভকারীরা ‘সাঙ্গাই ফেস্টিভ্যাল’-এর মূল প্ৰবেশদ্বারে ব্যারিক্যাড ভেঙে এগোনোর আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন।

বিশাল দলটি হাপ্তা কাংজিইবুং-এ নিরাপত্তা ব্যারিক্যাড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করে নিরাপত্তা কর্মীদের প্ররোচিত করছিল। এক সময় পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীরা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি চার্জ করেন। এতে কাজ হচ্ছে না দেখে একাধিক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তে হয়েছে। কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুঁড়লে অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশদ্বার থেকে পিছু হটে বিক্ষোভকারীরা।

পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পরিস্থিতি যাতে আর খারাপের দিকে যেতে না পারে এবং উৎসবে যোগদানকারী দর্শনার্থী এবং বিভাগীয় আধিকারিক ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন ছিল।

এদিকে বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী কোকোমি-র পদাধিকারীরা বলেছেন, এ সময় সাঙ্গাই ফেস্টিভ্যাল উদযাপনের কোনও দরকার ছিল না। রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত, অপরিসীম দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন তাঁরা। সংগঠনের দাবি, গণ-বাস্তুচ্যুতির দরুন চলমান মানবিক সংকট সত্ত্বেও রাজ্যের ফ্ল্যাগশিপ পর্যটন ইভেন্টের সাথে এগিয়ে যাওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন।

তাঁরা জানান, আজ মণিপুরের উপত্যকা জেলাগুলির বেশ কয়েকটি ত্রাণ শিবিরে গণ-অবস্থান কৰ্মসূচি পালনের মাধ্যমে এর প্রতিবাদের আয়োজন করা হয়েছে। বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা চলমান সংকটের মধ্যে সাঙ্গাই উৎসব অনুষ্ঠিত করতে রাজ্য সরকারের পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করে গণ-অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ কৰ্মসূচি পালন করেছেন, জানান কোকোমি-র নেতৃত্ব।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রতি বছর ২১ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই উৎসবের নাম ‘সাঙ্গাই’ হরিণ থেকে নেওয়া হয়েছে। সাঙ্গাই প্রজাতির হরিণ কেবলমাত্র ভারতের মণিপুরে পাওয়া যায়। হ্রাসের আনুমানিক হারের ওপর ভিত্তি করে আইইউসিএন রেড লিস্টে (টাইমিংস অ্যান্ড ডাকওয়ার্থ ২০০৮) 'ক্রিটিকাল এন্ডাঞ্জারড' হিসেবে তালিকাভুক্ত সাঙ্গাই হরিণ।

২০১০ সালে সূচনা হওয়ার পর থেকে বিশ্বের কাছে মণিপুরের বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি প্রদর্শনের জন্য সাঙ্গাই উৎসব একটি উল্লেখযোগ্য প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। সাঙ্গাই উৎসব রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ উদযাপনের শিরোনাম অর্জন করার পাশাপাশি মণিপুরকে বিশ্ব-মানের পর্যটন গন্তব্য হিসেবে উন্নীত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। দশদিন ব্যাপী চলে এই উৎসব। এতে এই অঞ্চলের নানা অনুষ্ঠান যেমন সংগীত, শিল্প, হস্তশিল্প, আদিবাসী খেলাধুলা, খাদ্য তথা রন্ধনপ্রণালী, দুঃসাহসিক খেলা প্রভৃতি প্রদর্শিত হয়।

হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস




 

 rajesh pande