“বন্দে মাতরম – দেশপ্রেমের মূল মন্ত্র” — সন্তোষ মধুপ
কলকাতা, ২১ নভেম্বর (হি.স.): “বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত বন্দে মাতরম ভারতের জাতীয় পরিচয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত এমন একটি মৌলিক মন্ত্র, যা ১৫০ বছর পরেও প্রতিটি ভারতীয়কে দেশপ্রেমের অনুভূতিতে পূর্ণ করে।” মহামন্ত্রের মূল
সন্তোষ মধুপ


কলকাতা, ২১ নভেম্বর (হি.স.): “বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত বন্দে মাতরম ভারতের জাতীয় পরিচয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত এমন একটি মৌলিক মন্ত্র, যা ১৫০ বছর পরেও প্রতিটি ভারতীয়কে দেশপ্রেমের অনুভূতিতে পূর্ণ করে।” মহামন্ত্রের মূল্যায়ণ করতে গিয়ে এ কথা বলেন সর্বভারতীয় বহুভাষিক সংবাদ সংস্থা ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-এর কলকাতার ব্যুরো প্রধান সন্তোষ মধুপ।

তাঁর কথায়, “১৮৭৫ সালে বঙ্কিমচন্দ্র যখন এটি রচনা করেছিলেন, তখন হয়তো তিনি ভাবতেও পারেননি যে পরবর্তীকালে তাঁর এই সৃষ্টি ভারতবাসীকে এতটা উদ্বেলিত করে তুলবে। এই গানের প্রতিটি শব্দে একটি তরঙ্গ অনুভূত হয়। দেশকে মা বলে সম্বোধন করে এই গানে ভারতের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে তা বিস্ময়কর এবং অনন্য। সংস্কৃত মিশ্রিত বাংলায় লেখা এই গানের প্রতিটি শব্দ দেশপ্রেমিকদের আন্দোলিত করেছিল এবং আজও করে চলেছে।”

“এই ক্লাসিক রচনাটি, বঙ্গদর্শন পত্রিকায় ৭ নভেম্বর, ১৮৭৫সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল, প্রায় সাত বছর পরে এটি প্রকৃত খ্যাতি পেয়েছিল যখন বঙ্কিম বাবু ১৮৮২ সালে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস আনন্দমঠে এই গানটি অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।” এ কথা জানিয়ে সন্তোষবাবু বলেন, “আমার মনে হয়, বন্দে মাতরম বহিরাগত আগ্রাসনের দাসত্ব থেকে মুক্তির সংগ্রামের উপর ভিত্তি করে এতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে।”

সন্তোষবাবুর কথায়, “ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি যে, আনন্দ মঠ না পড়লে, বন্দে মাতরমের আসল মর্মার্থ বোঝা খুব কঠিন বা সম্ভবত একপ্রকার অসম্ভব। এই উপন্যাসের চরিত্ররা স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনে বন্দে মাতরমকে তাঁদের অস্ত্র বানিয়েছিলেন। বন্দে মাতরম তাঁদের দেশকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। তাঁদের সর্বস্ব উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং সব পরিস্থিতিতে অবিচল থাকার শক্তি দেয়। আপনি যখন এটি পড়বেন, আপনি অবশ্যই আপনার ভিতরে কিছু আলোড়ন অনুভব করবেন।

বন্দে মাতরমের প্রতিটি ধ্বনি আপনার রক্ত সঞ্চালনকে দ্রুত করে তোলে, আপনার স্নায়ু টানটান হয়ে ওঠে। দেশপ্রেমের অনুভূতি আপনার মধ্যে আলোড়িত হতে থাকে এবং আপনার ভিতর থেকে একটি কণ্ঠস্বর জেগে ওঠে- দেশ এবং তার উন্নতিসাধনই সবকিছু, এর চেয়ে বড় কিছু নেই।

বঙ্গ-ভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া বন্দে মাতরমের প্রতিধ্বনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের স্বর তোলার প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছিল। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বন্দে মাতরমের ভূমিকা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বন্দে মাতরম নিয়ে কিছু বিতর্কও উঠে এসেছে যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। অনেক সময় এটাকে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত করে সাম্প্রদায়িক রং দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, বঙ্কিমবাবু এই গানটি দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছিলেন।” এ কথা জানিয়ে সন্তোষবাবু বলেন, “যাই হোক, এই সমস্ত অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের দ্বারা বন্দে মাতরমের মর্যাদা কখনওই খর্ব করা যাবে না। এই যুগ যতদিন থাকবে, বন্দে মাতরম ভারতীয়দের দেশপ্রেমের অনুভূতিতে উদ্বুদ্ধ করতে থাকবে এবং জাতীয় চেতনা ও দেশাত্মবোধ জাগ্রত করে থাকবে।”

---------------

হিন্দুস্থান সমাচার / অশোক সেনগুপ্ত




 

 rajesh pande