
রামানুজ শর্মা
নয়াদিল্লি, ১৫ ডিসেম্বর (হি.স.): দেশে উদার রাজনৈতিক আদর্শের পথিকৃৎ হিসেবে খ্যাত, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী 'ভারতরত্ন' অটল বিহারী বাজপেয়ী তাঁর রাজনৈতিক জীবনে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) মূল্যবোধ ও আদর্শে নিমগ্ন ছিলেন। তাঁর প্রতি আরএসএসের তিন সরসঙ্ঘচালকের পূর্ণ আদর্শিক, নৈতিক এবং রাজনৈতিক সমর্থন ছিল। এই কারণেই বাজপেয়ী আরএসএসের প্রতি অনুগত থেকে পঞ্চম সরসঙ্ঘচালক কে.এস. সুদর্শনের সঙ্গে আদর্শগত এবং রাজনৈতিক কৌশল সম্পর্কিত মতপার্থক্যগুলিও কোনও দ্বন্দ্ব ছাড়াই সমাধান করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর মিডিয়া উপদেষ্টা ছিলেন বরিষ্ঠ সাংবাদিক অশোক ট্যান্ডন| তাঁর নতুন বই অটল সংস্মরণ-এ আরএসএসের সঙ্গে বাজপেয়ীর সম্পর্কের একটি বিশদ বিবরণ উপস্থাপন করেছেন। আরএসএসের সঙ্গে বাজপেয়ীর কোনও দূরত্ব বা মতবিরোধ ছিল এই ধারণাটিকে খণ্ডন করেছে বইটি। বরং, এটি তাঁর উপর আরএসএসের মূল্যবোধের গভীর প্রভাব উপস্থাপন করে| তাঁর রাজনৈতিক প্রয়োগের স্বীকৃতি স্বরূপ আরএসএসের রাজনৈতিক শাখা ভারতীয় জনসংঘ এবং পরবর্তীতে ভারতীয় জনতা পার্টি জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে| বইটি ১৭ ডিসেম্বর দেশের জাতীয় রাজধানীতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গডকরির দ্বারা প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বইটিতে লেখক বলেছেন যে বাজপেয়ী ভারতীয় রাজনীতির একজন স্তম্ভ, যাঁর দীপ্তি এবং প্রতিভা এখনও দেশ ও বিশ্বকে নতুন দিকনির্দেশনা এবং অনুপ্রেরণা প্রদান করে। উদার জাতীয়তাবাদ এবং ব্যবহারিক রাজনীতিতে বাজপেয়ীর দৃষ্টিভঙ্গি দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক মাধব সদাশিবরাও গোলওয়ালকর ওরফে গুরুজি, তৃতীয় সরসঙ্ঘচালক বালাসাহেব দেওরস এবং চতুর্থ সরসঙ্ঘচালক অধ্যাপক রাজেন্দ্র সিং ওরফে রজ্জু ভাইয়ার পূর্ণ সমর্থন পেয়েছিল। তিনজন সরসঙ্ঘচালকই বাজপেয়ীর সংঘের প্রতি গভীর মূল্যবোধকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এবং জাতীয় স্বার্থের প্রতি তাঁর সততা এবং নিষ্ঠাকে স্বীকৃতি দিয়ে তাকে রাজনৈতিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। এই কারণেই তিনি একজন উদার ও মধ্যপন্থী নেতা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। দেশের প্রথম স্বয়ংসেবক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজনীতির শীর্ষে থাকাকালীন, পঞ্চম সরসঙ্ঘচালক কে.এস. সুদর্শনের সঙ্গে আদর্শগত এবং রাজনৈতিক বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়। তবে, বাজপেয়ী তাঁর আদর্শিক আনুগত্য পরিবর্তন না করে দক্ষতার সঙ্গে এই জটিল পার্থক্যগুলিকে ভারসাম্য রক্ষা করেছিলেন। এর ফলে তার ভাবমূর্তির উপর কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। আরএসএসের নীতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে কেউ তাকে কখনও সন্দেহের চোখে দেখেনি; তিনি ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ যিনি সকলকে গ্রহণ করেছিলেন। একজন সুবক্তা, একজন দূরদর্শী রাজনীতিক, একজন দক্ষ প্রশাসক এবং একজন সংবেদনশীল কবি হিসেবে, অটল বিহারী বাজপেয়ীর ভাবমূর্তি প্রতিটি ভারতীয়ের উপর এক গভীর ছাপ ফেলে। তিনি রাজনীতিকে মানবিক মর্যাদা, সংলাপ এবং সহাবস্থানের মাধ্যমে রূপান্তরিত করেছিলেন, এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি যা আজও প্রাসঙ্গিক।
সংঘ আমাকে দেশ ও সমাজের জন্য বাঁচতে শিখিয়েছে : অটল বিহারী বাজপেয়ী
২০০০ সালের ২৭ আগস্ট, অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবারের মতো নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদর দফতরে যান| তিনি ১৯৩৯ সালে গোয়ালিয়রে আরএসএস প্রচারক নারায়ণ রাও তারটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অটল বিহারী বাজপেয়ী ভারতের প্রধানমন্ত্রী, কবি এবং রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত হলেও, আরএসএসের সঙ্গে তাঁর আত্মিক ও আদর্শিক সংযোগ শুরু থেকেই। তরুণ বয়সে অটল বিহারী বাজপেয়ী কলেজে পড়ার সময় আরএসএস এর শাখায় যোগদান করেছিলেন এবং এটিই তাঁর রাজনৈতিক ও সামাজিক চেতনার সূচনা করে। অটল জি এবং আরএসএসের মধ্যে সম্পর্ক কেবল সাংগঠনিক ছিল না, বরং একটি গভীর আদর্শিক, সাংস্কৃতিক এবং আবেগগত সংযোগও ছিল। অটল জি প্রায়শই বলতেন, আরএসএস আমাকে দেশ ও সমাজের জন্য বাঁচতে শিখিয়েছে।
তিনি গুরুজির আদর্শ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলেন, কিন্তু অটলজি আরএসএস প্রচারক হননি
অটলজি আরএসএসের আদর্শ, শৃঙ্খলা এবং জাতীয়তাবাদ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলেন। তিনি দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক মাধব সদাশিবরাও গোলওয়ালকর, যিনি গুরুজি নামেও পরিচিত, তাঁর বক্তৃতা এবং আদর্শ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলেন। যদিও তিনি আরএসএস প্রচারক হননি, তবুও তিনি আরএসএসের আদর্শ, শৃঙ্খলা এবং জাতীয়তাবাদ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলেন। ১৯৫১ সালে যখন ভারতীয় জনসংঘ গঠিত হয়, তখন আরএসএস এর রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠায় অটলজিকে সমর্থন করে। তিনি গুরুজির কথা, জীবনধারা এবং দেশপ্রেম থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন এবং সেগুলিকে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। অটলজি নিজেই স্বীকার করেছিলেন যে গুরুজিই তাঁর আদর্শিক মূল্যবোধের ভিত্তি। পরবর্তীকালে রাজনীতিতে প্রবেশ করা আরএসএস এর স্বয়ংসেবকদের মধ্যে অটলজিকে সবচেয়ে প্রতিভাবান হিসেবে বিবেচনা করা হত এবং গুরুজি এই বিষয়ে সচেতন ছিলেন।
অটল বিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের তৃতীয় সরসঙ্ঘচালক বালাসাহেব দেওরসের সম্পর্ক ভারতীয় রাজনীতি এবং আদর্শিক ও সাংগঠনিক সমন্বয়ের এক চমৎকার উদাহরণ। বালাসাহেব দেওরস বাজপেয়ীকে জাতীয় নেতৃত্বের স্বাভাবিক স্বরূপ বলে মনে করতেন| তিনি বলতেন যে, অটল কেবল বক্তৃতা দেন না বরং তাঁর ধারণাগুলি বাস্তবায়িত করেন। যখন কিছু প্রবীণ আরএসএস স্বয়ংসেবক বাজপেয়ীর গান্ধীবাদী সমাজতন্ত্র গ্রহণের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন, তখন দেওরস জি বাজপেয়ীর পাশে দাঁড়ান এবং তাকে সমর্থন করে বলেন যে প্রতিটি সংগঠনকে সময়ের সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। যদি কোনও নেতা সৎ এবং দেশের হিতের জন্য কাজ করেন তবে তাঁকে সুযোগ দেওয়া উচিত। বালাসাহেব দেওরাসকে একজন দূরদর্শী হিসেবেও সম্মান করতেন বাজপেয়ী জি। যখনই তিনি কোনও আদর্শিক বা কৌশলগত দ্বিধাগ্রস্ততার মুখোমুখি হতেন, তখন বাজপেয়ী বালাসাহেব দেওরসের কাছ থেকে নির্দেশ চাইতেন। বালাসাহেব দেওরস বাজপেয়ীকে রাজনৈতিক ভিতের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। এই কারণেই একজন উদার ও মধ্যপন্থী নেতা হিসেবে বাজপেয়ী আরএসএসের ব্যাপক সমর্থন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এর ফলে সংগঠন এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে আদর্শগত ভাবে এবং রাজনীতিতে একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠে।
রজ্জু ভাইয়ার সঙ্গে অটলজির সম্পর্ক ছিল স্বচ্ছ এবং অত্যন্ত বিশেষ
সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে অটলজির সঙ্গে অনেক বিশিষ্ট আরএসএস কার্যকর্তার সম্পর্ক ছিল, তবে এই সম্পর্কগুলির মধ্যে কিছু সম্পর্ক ছিল বিশেষভাবে ঘনিষ্ঠ, যেমন সরসঙ্ঘচালক অধ্যাপক রাজেন্দ্র সিং 'রজ্জু ভাইয়ার' সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক। রজ্জু ভাইয়া রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের চতুর্থ সরসঙ্ঘচালক হওয়ার পাশাপাশি, একজন বিখ্যাত পদার্থবিদ এবং এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী ব্যক্তি ছিলেন। অটলজির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কেবল সাংগঠনিক ছিল না, বরং বন্ধুত্ব, পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং আদর্শবাদের উপর ভিত্তি করে ছিল। রজ্জু ভাইয়া বাজপেয়ীর রাজনৈতিক ভারসাম্য, উদার জাতীয়তাবাদ এবং বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে তাঁর প্রজ্ঞা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। যখনই অটলজির উদার ভাবমূর্তি নিয়ে আরএসএসের মধ্যে আলোচনা হতো, রজ্জু ভাইয়া সর্বদা তাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করতেন। রজ্জু ভাইয়া একবার বলেছিলেন, অটলজির মতো ব্যক্তিরা আরএসএসের শক্তি, কারণ তাঁরা জনগণের সঙ্গে ধারণাগুলিকে সংযুক্ত করার মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন। অটল জি যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তিনি বেশ কয়েকবার রজ্জু ভাইয়ার কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে পরামর্শ নিতেন। বিশেষ করে নৈতিক ও আদর্শিক সংকটের সময়ে। রজ্জু ভাইয়াজি অটলজিকে তাঁর মতামত চাপিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে আত্মনির্ণয়ের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন।
সুদর্শন এবং বাজপেয়ীর মধ্যে একটি শক্তিশালী আদর্শিক শৃঙ্খলা এবং একটি উদার-মনের রাজনৈতিক অবস্থান ছিল
কে এস সুদর্শন ২০০০ সালে আরএসএসের পঞ্চম সরসঙ্ঘচালক হন, যখন অটল বিহারী বাজপেয়ী বিভিন্ন মতাদর্শের সমন্বয়ে একটি জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বাজপেয়ী এবং পঞ্চম সরসঙ্ঘচালক কে.এস. সুদর্শনের মধ্যে সম্পর্ক আদর্শবাদী মতাদর্শ এবং রাজনৈতিক কৌশলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। অটল বিহারী বাজপেয়ী একজন গণতান্ত্রিক এবং উদারমনা রাজনীতিবিদ| এদিকে, সুদর্শন ছিলেন একজন স্পষ্টবাদী সরসঙ্ঘচালক, যার দৃঢ় আদর্শিক শৃঙ্খলা ছিল। দুজনের মধ্যে সম্পর্ক শ্রদ্ধা, সংলাপ এবং পার্থক্য দ্বারা চিহ্নিত। যদিও উভয়েরই লক্ষ্য একই ছিল: জাতীয় স্বার্থ এবং ভারতের সাংস্কৃতিক পুনর্গঠন, তবে তাঁদের শৈলী ভিন্ন ছিল। সুদর্শন বিশ্বাস করতেন যে বিজেপি যখন ক্ষমতায় থাকবে, তখন আরএসএসের আদর্শ পূর্ণ শক্তির সঙ্গে বাস্তবায়ন করা উচিত| যেমন অভিন্ন নাগরিক বিধি, রাম মন্দির এবং ৩৭০ ধারা বিলোপ। যেহেতু অটলজিকে শুরু থেকেই নিজস্ব উপায়ে আরএসএসের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক আদর্শগুলিকে বাস্তবায়িত করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তাই তিনি জোট নীতি মেনে চলা এবং বহুত্ববাদী কাঠামো বজায় রেখে নমনীয় এবং বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া উপযুক্ত বলে মনে করেছিলেন। এখান থেকেই উভয়ের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির মৌলিক পার্থক্য দেখা দিতে শুরু করে। লেখকের মতে, আরএসএসের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অটলজির স্পষ্ট বার্তা ছিল যে রাজনীতি কেবল সংগঠনের নির্দেশ অনুসারে নয়, নিজস্ব বিবেচনার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। অটলজি এবং সুদর্শনজির মধ্যে কখনও কোনও ব্যক্তিগত তিক্ততা ছিল না, তবে রাজনৈতিক ও আদর্শিক দূরত্ব বৃদ্ধি পেয়েছিল। ক্ষমতায় থাকাকালীনও অটলজি আরএসএসের প্রতি মর্যাদা এবং শ্রদ্ধা বজায় রেখেছিলেন, তবে তিনি সুদর্শনজির কিছু প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। এর ফলে সমাজের কিছু অংশ অটলজিকে অত্যধিক উদার বা আরএসএসের নির্দেশ মেনে না চলা ব্যক্তি হিসাবে দেখতেন। অটলজির অগ্রাধিকার ছিল গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, জোটের নীতি এবং জাতীয় ঐক্যমত্য। আদর্শগত অখণ্ডতা এবং হিন্দুত্ব-ভিত্তিক নীতি ছিল সুদর্শনজির অগ্রাধিকার। যখন অটলজির জোট সরকার হিন্দুত্বের কিছু দাবি সময়োপযোগী বিবেচনা করেনি, তখন সুদর্শনজি প্রকাশ্যে অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। এই আদর্শিক পার্থক্য সাময়িকভাবে আরএসএস এবং বিজেপির মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি করে। অনেক কার্যকর্তা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন যে বোধহয় বিজেপি আর আরএসএসের কথা শুনছে না। কিন্তু অটলজি সংযম অবলম্বন করেছিলেন এবং কখনও আরএসএসের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হননি।
রাজনীতি পরিচালিত হয় নিজের বিবেচনার ভিত্তিতে, সংগঠনের নির্দেশে নয়: অটলজি
২০০৫ সালে, বাজপেয়ী সরকারের পতনের পর, অটলজি এবং লালকৃষ্ণ আডবাণীজিকে একটি প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে সুদর্শনজি বলেছিলেন, এখন বাজপেয়ী জি এবং আডবাণীজির রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়া উচিত। বিজেপির নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন। এই বিবৃতিটি কোনও সাধারণ বক্তব্য ছিল না, বরং আরএসএস এবং বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের প্রকাশ ছিল। অটলজি এই বিবৃতিকে দুঃখজনক এবং অনুপযুক্ত বলে অভিহিত করেছিলেন। সাংবাদিকরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি হেসে বলেন, আমি বিজেপিতে আছি, আরএসএসে নয়। অটলজি আরও বলেন, রাজনীতি পরিচালিত হয় নিজের বিবেক অনুসারে, কোনও সংগঠনের নির্দেশ অনুসারে নয়। তবে, এই মন্তব্য অটলজির ভাবমূর্তির উপর কোনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি।
লেখকের মতে, প্রধানমন্ত্রীত্বের পরেও, তাঁর জীবদ্দশায়, কিছু রাজনৈতিক দল এবং মিডিয়ার কিছু ব্যক্তি বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের থেকে তাঁকে পৃথকভাবে এক ভিন্ন ব্যক্তিত্ব উপস্থাপন করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে অমিত শাহ, রাজনাথ সিং এবং আরও অনেক নেতা অটলজির শেষকৃত্যের সময় প্রয়াত নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কয়েক কিলোমিটার হেঁটেছিলেন, যা বিশ্বকে অটলজির অবস্থান কোথায় সে সম্পর্কে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিল।
বইটিতে অশোক ট্যান্ডন বলেছেন, কিছু টিভি চ্যানেলে আমাকেও অটলজি নিয়ে আলোচনা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, এবং কিছু উপস্থাপক ইচ্ছাকৃতভাবে বারবার বলানোর চেষ্টা করেছিলেন যে অটলজির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অনেক মতপার্থক্য ছিল এবং তিনি বিজেপিতে অস্বস্তি বোধ করতেন।
হিন্দুস্থান সমাচার / সৌম্যজিৎ