
নয়াদিল্লি, ১৫ ডিসেম্বর (হি.স.): বিদ্যুৎ মন্ত্রক বিভিন্ন দেশের সরকার এবং বিদ্যুতের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির সঙ্গে একযোগে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সরবরাহ ও বন্টনের মানোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। এক্ষেত্রে বিদেশি অংশীদারিত্বকে কিভাবে আরও বেশি করে কাজে লাগানো যায়, সেই বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জি-২০, ব্রিকস, ক্লিন এনার্জি মিনিস্টেরিয়াল, আন্তর্জাতিক সৌর জোটের মতো বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলির সঙ্গে নানা ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এসসিও, এসএএসইসি, সার্ক, বিমস্টেক এবং ‘এক সূর্য, এক বিশ্ব, এক গ্রিড’ (ওএসওডব্লিউওজি) উদ্যোগের মতো মঞ্চগুলির সঙ্গে আঞ্চলিক স্তরে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে মন্ত্রক নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়ে থাকে।
বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সর্বাঙ্গীণ সংস্কারকে বাস্তবায়িত করতে নানা উদ্যোগ নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হল, এই ক্ষেত্রের আধুনিকীকরণ, উন্নত পরিষেবা প্রদান এবং শক্তিশালী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এর মধ্য দিয়ে ডিজিটাইজেশনকে শক্তিশালী করা, পরিবেশ-বান্ধব পদ্ধতিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎকে কাজে লাগানো এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা হয়।
লেট পেমেন্ট সারচার্জ সহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বিষয়গুলিকে সংস্কারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে যাতে বিল মিটিয়ে দেওয়া হয়, তার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বকেয়া বিল আদায়ের ক্ষেত্রে লিকুইডেশনের সংস্থানও থাকছে। পরিবেশ-বান্ধব বিদ্যুৎ যেসব গ্রাহক উৎপাদন করবেন, তাঁদের উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ১০০ কিলোওয়াটের বেশি হলে সেগুলির ব্যবহার যাতে অন্যরাও করতে পারে তার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় অনুমতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুনর্নবীকরণযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে সেই বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আর্থিক ছাড় এবং জ্বালানি সঞ্চয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।
সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে জ্বালানি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নিয়মাবলী তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। প্রতি মাসের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ক্রয় সংক্রান্ত সারচার্জকে যথাযথভাবে বিলের সঙ্গে বিন্যস্ত করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেনার দাম বাবদ প্রয়োজনীয় খরচ তুলে নেওয়া হবে। ২০২০ সালে গ্রাহকদের অধিকার সংক্রান্ত আইনটিতে সবসময় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও উল্লেখ রয়েছে। এপ্রিল মাসে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। এর ফলে, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সরবরাহ, সঞ্চয় এবং চাহিদা অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার মতো ক্ষেত্রে রাজ্যগুলি সুসংহত এক পরিকল্পনা করতে পারবে। রিভ্যাম্পড ডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কিমের আওতায় স্মার্ট মিটারের জন্য ২,৮৩,৫২৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের জন্য বাজেটে ১,২১,৬৩৭ কোটি টাকার সংস্থান রেখেছে। স্মার্ট মিটারের ব্যবহার বাড়াতে সকলকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এর ফলে বিদ্যুতের যথাযথ বিল পাওয়া সম্ভব হবে এবং বিভিন্ন ধরণের বাণিজ্যিক ক্ষতিও এড়ানো যাবে। এক্ষেত্রে কৃত্রিম মেধা ও মেশিন লার্নিং-এর সাহায্য নেওয়া হবে।
২০২২ সালের বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সংশোধিত নিয়মাবলীর ১৪ নং ধারা অনুসারে, বিদ্যুৎ সঞ্চয় ব্যবস্থাপনার বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে। গ্রাহকরা এখন ভিন্ন ভিন্ন বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সেই বিদ্যুৎকে ব্যবহারের জন্য লিজ দিতে পারবেন। এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের মাশুলের ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিবেশ-বান্ধব বিদ্যুৎ করিডর প্রকল্পের আওতায় রিনিউয়েবল এনার্জি ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের ১২টি সদস্য সংস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এর পাশাপাশি দক্ষিণ আন্দামানে একটি এনার্জি ম্যানেজমেন্ট সেন্টারও গড়ে তোলা হয়েছে। এই সংস্থাগুলি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বায়ু ও সৌরশক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে পূর্বাভাস দেবে এবং নজরদারি চালাবে। পরিবেশ-বান্ধব বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় রাজ্যগুলি বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলতে চাইলে কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে আর্থিক সহায়তা পাবে। এই আর্থিক সহায়তা সেন্ট্রাল ফিনান্সিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স-এর তহবিল থেকে দেওয়া হবে। গ্রিডের মাধ্যমে সুরক্ষিতভাবে ও ভরসাযোগ্য পরিচালন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে।
রাজ্যসভায় সোমবার এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে এই তথ্য জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী শ্রীপাদ যশো নায়েক।
এই বিষয়ে জানিয়েছে ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো|
হিন্দুস্থান সমাচার / সৌম্যজিৎ